বন্যা মানেই দুর্গতি। বন্যা মানেই বাড়ি ঘর ভেসে যাওয়া। বন্যা মানেই আতঙ্কের পরিবেশ। নদীর জল উপচে বাড়ি-ঘরদোর ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। কিন্তু বন্যার জলকেই পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বানানো হয়েছে এমন শুনেছেন কখনও?
বন্যার জলে রেস্তোরাঁ!
এমন অভিনব এবং অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে থাইল্যান্ডের একটি রেস্তোরাঁ। বন্যার জলের মধ্যে রেস্তোরাঁ খুলে পর্যটকদের ডাকছেন জলে ডুবিয়ে খানাপিনার জন্য। তাঁদের প্রচারিত বিজ্ঞাপনে এতটাই আকৃষ্ট হচ্ছেন পর্যটকেরা, যে তাঁরা বন্যা কবলিত এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার বদলে বন্যার জলে বসে আনন্দ উপভোগ করাকেই শ্রেয় বলে মনে করছেন।
তার ছবি শেয়ার হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এর তোলা এই ছবি এখন বিশ্বজুড়ে ব্যাপক ভাইরাল। থাইল্যান্ডের রেস্তোরাঁর নাম "চাওফ্রায়া অ্যান্টিক ক্যাফে।" এই এই ক্যাফেতে ভুরিভোজ করতে হলে, আপনাকে নদীতেও নামতে হবে না। লেকেও পা ডোবাতে হবে না। শুধুমাত্র রেস্তোরাঁয় এসে বসলেই বন্যার জল আপনার পা ধুয়ে দিয়ে যাবে।
জলে নামতে আছে লম্বা জুতো
এই পদ্ধতি ব্যাপক পছন্দ হয়েছে ভোজন রসিকদের। তারা দলে দলে ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে ওয়েটার এবং স্টাফেরা জাতীয় জুতো ব্যবহার করছেন। রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশনের জন্য আপনি ইচ্ছে করলে তেমন জুতো পড়ে যেতেও পারেন। তাদের কাছ থেকে ভাড়া নিতে পারেন। আবার ইচ্ছে করলে খালি পায়ে পা ডুবিয়ে সেখানে খানাপিনা সেরে ফিরে আসতে পারেন। তবে এই রেস্তোরাঁ তাদের জন্য, যাঁরা জল-জঙ্গল কোনও কিছুকেই পরোয়া করেন না। যদি কাদামাখার ভয় থাকে, তাহলে অবশ্য এই রেস্টুরেন্টে না যাওয়াই ভাল।
আগে ছিল রিভারসাইড সাধারণ রেস্তোরাঁ
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের নোনতাবুরি এলাকায় এই রেস্তোরাঁটি রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এটি রিভারসাইড রেস্তোরাঁ হিসেবে খোলার পর ভালই চলছিল। এখানকার খাবার-দাবার পানীয় অত্যন্ত সুস্বাদু বলে যারা খেয়েছেন তারা জানিয়েছেন। নদীর খোলা হাওয়ায় গাছ তলায় বসে খাবার অনেকেই পছন্দ করছিলেন।
আচমকা নিম্নচাপে বদলে গেল রেস্তোরাঁর ধরণ
এরই মধ্যে কিছুদিন আগে ব্যাপক ঝড়ে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। নদীর জল উপচে আশপাশের পারগুলি প্লাবিত হয়ে যায়। নদীর ধারে অবস্থিত সেই রেস্তোরাঁটি ও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। নদীর জল স্তর বেড়ে যাওয়ায় সেই জল নেমে দ্রুত চলে যাচ্ছে না। ফলে অন্যান্য আরও নদীর ধারের ব্যবসায়ীদের মত রেস্তোরাঁটির কর্তৃপক্ষও বিপাকে পড়েন। নতুন রেস্তোরা, তার ওপর আচমকা এই বিপর্যয়। কি করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না।
হটপট সার্ফিং
এরপরই মাথায় আসে এই বুদ্ধি। নদীর জলের সঙ্গে রেস্তোরাঁর ছবি তুলে তা সোস্যাল সাইটে পোস্ট করে দেন। এবং জাদুমন্ত্রের মতো কাজ। হয় দলে দলে ভিড় করতে থাকেন ভোজন রসিক পর্যটকরা। কেমন সেই অভিজ্ঞতা, জানিয়েছেন এক পর্যটক। ২৪ বছর বয়সী শিও জানিয়েছেন এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতার নাম দেওয়া হয়েছে "হটপট সার্ফিং"। যখন একটি যাত্রীবাহি নৌকা মোটর চালিয়ে পাশ দিয়ে চলে যায়, তখন যে কম্পন অনুভূত হয় তা রেস্তোরাঁয় বসে থাকলে ভালো লাগে। সেই মৃদু কম্পন দারুন উপভোগ করছি আমরা। প্রায় প্রতি ১৫ মিনিটে একটি করে নৌকা নিয়ে পার হয়ে যায়। যেই এখানে আসবে প্রত্যেকেই এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে।
এখনই পাড়ি দিন, নইলে দেরি হয়ে যেতে পারে
অন্যদিকে ভারত থেকে তাইল্যান্ডে ঘুরতে যাওয়ার পর্যটকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এমনকী পশ্চিমবাংলা থেকেও দলে দলে মানুষ সেখানে ভিড় করেন। ফলে এর মধ্যে যদি সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে দিব্যি রেস্তোরাঁয় ভুরিভোজ ছেড়ে আসতে পারেন একদিন। এমন অভিজ্ঞতা নিতে হলে দ্রুত সেখানে যেতে হবে। কে জানে, কবে জল নেমে যায়।