আমাদের মা- ঠাকুমারা চুলের যত্নের কিছু সহজ কিন্তু ঘরোয়া উপায় বলেন সব সময়। তাদের দেওয়া রকমারি টোটকার মধ্যে তিলের তেল অন্যতম। ছোট তিলের বীজে চুলের জন্য অনেক পুষ্টি থাকে। বাড়িতে এই তেল তৈরি করা সম্ভব। এটি চুলকে গোঁড়া থেকে শক্তিশালী, চকচকে এবং স্বাস্থ্যকর করতে পারে। তিলের বীজে অনেক পুষ্টি থাকে যা, চুলের জন্য উপকারী।
তিলের তেলের উপকারিতা
তিলের বীজ ভিটামিন ই, বি-কমপ্লেক্স এবং ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এই সমস্ত উপাদান চুলের শিকড়কে পুষ্টি জোগায় এবং নতুন চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। প্রতিদিন ব্যবহার করে দুর্বল চুল শক্তিশালী হয়, ফেটে যাওয়া ডগা কমায় এবং মাথার ত্বককে আর্দ্র রাখে। তিলের তেল অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যেও সমৃদ্ধ, যা খুশকি এবং মাথার ত্বকের চুলকানি থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও, এটি সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে চুলকে রক্ষা করে।
ঘরে তিলের তেল কীভাবে তৈরি করবেন?
তিলের তেল তৈরি করা খুব সহজ। প্রথমে, এক কাপ তিলের বীজ নিন এবং ভালভাবে পরিষ্কার করুন। তিলের সুগন্ধ না আসা পর্যন্ত অল্প আঁচে হালকা করে ভাজুন। এরপর ঠান্ডা করে মোটা গুঁড়ো তৈরি করুন। এবার একটি মোটা পাত্রে দুই কাপ নারকেল তেল নিন এবং তাতে তিলের গুঁড়ো দিন। নারকেল তেল তিলের তেলের সঙ্গে ভাল ভাবে মিশে যায় এবং এর উপকারিতাও বৃদ্ধি করে। এই মিশ্রণটি ধীরে ধীরে প্রায় ৮-১০ মিনিট ধরে গরম করুন। তেলের রং একটু গাঢ় হলে এবং সুগন্ধ আসতে শুরু করলে, গ্যাস বন্ধ করে ঠান্ডা হতে দিন। তারপর তেলটি একটি সূক্ষ্ম কাপড়ে ছেঁকে একটি পরিষ্কার কাচের বোতলে ভরে রাখুন।
ব্যবহারের পদ্ধতি
গরম করার পর তিলের তেল ব্যবহার করুন। গোঁড়া পুষ্ট হয় তা নিশ্চিত করার জন্য ১০-১৫ মিনিটের জন্য মাথার ত্বকে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। এটি রাতভর রেখে দেওয়া আরও বেশি উপকারী। যদি সময় কম থাকে, তাহলে শ্যাম্পু করার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে লাগান। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুসারে এটি কাস্টমাইজও করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, গরম করার সময় কারি পাতা যোগ করলে চুল পাকবে না। মেথি বীজ খুশকি কমায় এবং চুল ঘন করে, অন্যদিকে জবা ফুল এটিকে একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার করে তোলে যা চকচকে করে তোলে।
নিয়মিত তিলের তেল মালিশ করলে চুলে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসে। চুল মজবুত, চকচকে এবং স্বাস্থ্যকর দেখাতে শুরু করে। মাথার ত্বকের শুষ্কতা কমে যায় এবং নতুন চুল সুস্থভাবে গজায়। এছাড়াও, গরম তেল দিয়ে মাথা মালিশ করলে মন এবং শরীর উভয়ের আরাম হয়। আয়ুর্বেদে, শতাব্দী ধরে চুলের স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য তিলের তেল অত্যন্ত উপকারী বলে বিবেচিত হয়ে আসছে।
তাই যদি আপনিও চুল পড়া, ফেটে যাওয়া বা সাদা চুলের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে তিলের তেল তৈরি করে নিয়মিত ব্যবহার করুন। এটি কেবল চুলের যত্নের একটি পুরনো পদ্ধতি নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক, বিশুদ্ধ এবং রাসায়নিকমুক্ত ঘরোয়া প্রতিকার।