
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে হাড় দুর্বল হওয়ার কারণ শুধু বয়স বৃদ্ধিই নয়, আপনার জীবনযাত্রার ধরণ, সেটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগে শুধু বয়স্কদেরই হাড়ের দুর্বলতার সমস্যায় পড়তে হতো, কিন্তু এখন তরুণরাও এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই আপনিও যদি দুর্বল হাড়কে বার্ধক্যজনিত সমস্যা মনে করেন, তাহলে ভুল করছেন। আপনাকে এমন কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জানাব যা দেখে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার হাড় দুর্বল হতে শুরু করেছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে-
কোমরের নীচে তলপেটে ব্যথা
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে দুর্বল হাড়ের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল কোমরে ব্যথা। অনেক সময় দেখা যায় হালকা কাজ করার পরও মানুষের কোমর সহজেই ফ্র্যাকচার হয়ে যায়। এটি দুর্বল হাড়ের অন্যতম লক্ষণ।
উচ্চতা কমে যাওয়া
বয়স বাড়ার সাথে সাথে উচ্চতা কমে যাওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু যখন আপনার অস্টিওপোরোসিস হয়, তখন আপনার উচ্চতা খুব কমতে শুরু করে। অনেকেই মনে করেন উচ্চতা কম হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু খেয়াল রাখবেন উচ্চতা আধা ইঞ্চি কমাটা স্বাভাবিক, কিন্তু আপনার উচ্চতা যদি ২, ৩ বা ৪ ইঞ্চির কম হয় তবে সাবধান হয়ে যান। একে একেবারেই স্বাভাবিক বিবেচনা করা উচিত নয়।
হাড় ভাঙা
দুর্বল হলে হাড় সহজেই ভেঙে যায়। প্রায় ৫০ শতাংশ মহিলা এবং ২৫ শতাংশ পুরুষ তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে অস্টিওপোরোসিস-সম্পর্কিত ফ্র্যাকচারে ভুগেছেন। এই সময়, আপনাকে কব্জি, কোমর, নিতম্ব বা হাড়ের ফ্র্যাকচারের সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
আর্লি মেনোপজ
লো বোন ডোনসিটি বা কম হাড়ের ঘনত্বের কারণে, মেনোপজের সূচনা তাড়াতাড়ি হতে পারে। যখন আপনার শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ইস্ট্রোজেন তৈরি করে না, তখন হাড় তৈরির পরিবর্তে তারা দ্রুত ভাঙতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে, যদি আপনার মেনোপজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে থাকে, তাহলে অবিলম্বে আপনার হাড় পরীক্ষা করা জরুরি। মেনোপজের শুরুতে হাড়ের ঘনত্বের পরীক্ষা করান, যাতে পরবর্তীতে আপনাকে হাড় সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে না হয়।
দাঁড়াতে অসুবিধা
দাঁড়ানোর জন্য যদি সাপোর্টের প্রয়োজন হয় তাহলে তার মানে আপনার হাড় দুর্বল হতে শুরু করেছে। আমাদের হাড় এবং পেশী একটি ইউনিট হিসাবে কাজ করে। যখন আপনার পায়ের পেশীগুলি দুর্বল হতে শুরু করে, তখন আপনার দাঁড়াতে অসুবিধা হয় এবং সহজেই ফ্র্যাকচার হতে পারে। তবে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে দুর্বল হাড়ের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন জেনে নিই তাদের সম্পর্কে-
বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করুন- হাড়ের দুর্বলতা রোধ করতে, ডাক্তারের সাথে কথা বলা এবং প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এমন জিনিস খান যাতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন। তবে সেগুলি নেওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি খান- এই ভিটামিন আপনার শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি রোদে পাওয়া যায়, তাই আপনাকে কিছু সময় রোদে দাঁড়াতে হবে। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন।
ব্যায়াম বা এক্সাসাইজ- হাড়ের দুর্বলতা রোধ করতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। আপনি চাইলে হাঁটা, জগিং, যোগব্যায়াম এবং অ্যারোবিকসও করতে পারেন। এই সব ব্যায়াম পেশীর জন্য খুব উপকারী।
সঠিক জিনিস খান- আপনার খাদ্যতালিকায় বেশি করে তাজা ফল ও শাকসবজি, দুগ্ধজাত দ্রব্য, স্যামন, ডিম, বাদাম, ডাল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করুন।