সুস্থ জীবনের জন্য যোগব্যায়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়। এক কথায় বলা যায়, উন্নত স্বাস্থ্যে ও মনের প্রশান্তির জন্য যোগব্যায়াম অপরিহার্য। অনেকে মনে করে যে, শুধুমাত্র শরীরকে নমনীয় করার জন্য যোগব্যায়াম করা হয়। কিন্তু তা একেবারে সঠিক নয়।
যোগাসনের রয়েছে বহুমুখী উপকারিতা। যোগব্যায়াম শুধুমাত্র বাহ্যিকভাবে শরীরকে সুন্দর ও সুঠাম করে না, এটি আমাদের শরীরকে অভ্যন্তরীণ শক্তিও দেয়। ব্যায়াম করলে একজন ব্যক্তি অনেক ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে যোগব্যায়াম করার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা খুবই জরুরি।
আজকাল ব্যস্ততা বা প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড় মানুষে জীবনে মানসিক চাপ অনেক বাড়িয়েছে। এ কারণেই যত সময় যাচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে । আপনিও যদি মানসিক চাপ বা উদ্বেগের শিকার হন, তাহলে যোগব্যায়াম আপনার জন্য খুবই উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। অনেক যোগাসন আছে যা মনকে স্বস্তি দেয়। নিয়মিত সকালে এই ব্যায়াম করলে, সারাদিন ফিট থাকতে সাহায্য করে।
কপালভাতি
শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য কপালভাতি খুব ভাল। এই আসন রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এই যোগাসন বা প্রাণায়ম মাধ্যমে ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে শরীরের অন্দরে জমে থাকা টক্সিন বের করে দেয় এটি। আপনি যদি মানসিক চাপে ভোগেন, তাহলে এই যোগ ব্যায়াম খুব কার্যকরী হতে পারে। এটি করলে, আপনি মানসিকভাবে শান্ত বোধ করবেন।
একটি ফাঁকা জায়গায় শান্ত হয়ে,পদ্মাসনে বসতে হবে প্রথমে। শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হলে মুখ দিয়ে শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। এবার ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। খেয়াল রাখবেন শ্বাস ছাড়ার সময়ে পেট যেন একটু করে ভিতরের দিকে ঢুকে আসে। এই পদ্ধতিতে ২০ বার শ্বাস নিন ও ছাড়ুন।
ভুজঙ্গাসন
ভুজঙ্গাসন স্ট্রেস কমাতে দারুণ ভাবে কার্যকরী। এছাড়াও পিরিয়ডের সমস্যা, কোমরের ব্যথা, গ্যাসট্রাইটিস, স্পন্ডিলোসিস, শিরদাঁড়ায় বক্রতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুজঙ্গাসন খুব ভাল কাজে দেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভুজঙ্গাসন সঠিকভাবে করলে, মানসিক চাপ এবং ক্লান্তি দূর হয়।
পেটের উপর ভর দিয়ে শুয়ে, হাত আপনার কাঁধের কাছে রাখুন এবং হাতের তালু মাটিতে আলতো করে চাপুন। যত তাড়াতাড়ি আপনি এই অবস্থানে আসেন, সাবধানে শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে আপনার উপরের শরীরকে মাটির উপরে উঠান। আপনি পেট থেকে বুক পর্যন্ত সামান্য প্রসারিত অনুভব করবেন। আরামদায়ক ভারসাম্য বজায় রেখে আপনি উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে আপনার হাতগুলি আপনাকে সমর্থন করার অনুমতি দিন। এই আসনটি ২০- ৩০ সেকেন্ডের জন্য করুন।
শবাসন
প্রতি আসনের পর শবাসন অবশ্য করণীয়। অনিদ্রা, একাগ্রতার অভাব, একটুতে রেগে যাওয়া, টেনশন ও স্নায়বিক দুর্বলতা ও উত্তেজনা প্রশমনে শবাসন উপকারী। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা এবং রক্তচাপ স্থিতিশীল করে আপনার শরীর ও মনের জন্য উপকারী। শবাসনের বিশেষ দিক হল এটি আপনার শরীরকে পুরোপুরি শিথিল করে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং উদ্বেগের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এই যোগাসনটি একটি প্রতিষেধক। এর পাশাপাশি এই আসনটি করলে মস্তিষ্ক উপকার পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আসন মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। সেই সঙ্গে এনার্জি লেভেল উচ্চ রাখে।
চিত হয়ে শুয়ে পা দুটি লম্বা করে ছড়িয়ে দিন। হাত দুটি শরীরের দু’পাশে দেহ সংলগ্ন রাখুন। হাতের চেটো শিথিল ভাবে থাকবে। হাত, পা, দেহ অবশ হয়ে গেছে এ রূপ ভেবে মৃত ব্যক্তির মতো শুয়ে থাকুন। যে আসন যত বার ও যত ক্ষণ অভ্যাস করবেন, শবাসনেও ঠিক ততক্ষণ অবশ্যই বিশ্রাম নেবেন। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।