scorecardresearch
 

EXCLUSIVE: 'আর্সেনিক অ্যালবাম করোনায় কাজ করে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না'

ওষুধ খেয়ে বুক ফুলিয়ে মাস্কবিহীন হয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন অনেকে। যাঁরা মাস্ক পরতেন তখন তাঁরা করুণার পাত্র। কিন্তু এই তত্ত্ব কতটা সত্যি? কী বলছেন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকরা? ড. রঞ্জন রায় এ নিয়ে কথা বললেন আজতক বাংলার সঙ্গে।

Advertisement
আর্সেনিকাম অ্য়ালবাম আর্সেনিকাম অ্য়ালবাম
হাইলাইটস
  • ভারতের আয়ুষ মন্ত্রক জানিয়েছিল, হোমিওপ্যাথি ওষুধ আর্সেনিক অ্যালবাম করোনা সংক্রমণ রোধ করতে কার্যকরি ভূমিকা নেয়
  • এ খবর দেখা মাত্র মহামারীতে ঘরবন্দি মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। গণ্ডায় গণ্ডায় ওষুধের শিশি নিয়ে বাড়িতে ফিরতে দেখা গিয়েছে বহু মানুষকে

গত বছর করোনার লক ডাউন সামান্য শিথিল হওয়ার পর হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিক্রেতাদর কাছে সাধারণ মানুষের লম্বা লাইন লেগে গিয়েছিল। ভারতের আয়ুষ মন্ত্রক জানিয়েছিল, হোমিওপ্যাথি ওষুধ আর্সেনিক অ্যালবাম করোনা সংক্রমণ রোধ করতে কার্যকরি ভূমিকা নেয়। এ খবর দেখা মাত্র মহামারীতে ঘরবন্দি মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। গণ্ডায় গণ্ডায় ওষুধের শিশি নিয়ে বাড়িতে ফিরতে দেখা গিয়েছে বহু মানুষকে। ওষুধ খেয়ে বুক ফুলিয়ে মাস্কবিহীন হয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন অনেকে। যাঁরা মাস্ক পরতেন তখন তাঁরা করুণার পাত্র। কিন্তু এই তত্ত্ব কতটা সত্যি? কী বলছেন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকরা? ড. রঞ্জন রায় এ নিয়ে কথা বললেন আজতক বাংলার সঙ্গে

 

প্রশ্ন: গত বছরের মাঝামাঝি আর্সেনিক অ্যালবাম নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল। আপনার হয়তো মনে থাকবে। সত্যিই কি করোনা রোধে এই ওষুধ কোনও কাজ করে?
উত্তর: বিলক্ষণ মনে আছে। আমার কাছে বহু মানুষ ফোন করে বা সরাসরি চেম্বারে দেখা করে আর্সেনিক অ্যালবাম নিয়ে প্রশ্ন করে জেরবার করে দিয়েছিলেন। আমি তখনও বলেছিলাম, এখনও বলছি, এর কোনও প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবেন না, যে এই ওষুধ করোনা প্রতিরোধ করতে পারে বা সারিয়ে তুলতে পারে। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, সোশাল মিডিয়া মারফত খবরটি ছড়িয়েছিল। অনেকে আয়ুষ মন্ত্রকের দেওয়া সেই বিজ্ঞপ্তির ছবি-সহ পোস্ট করেছিলেন। তার ফলেই মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সুবিধা হয়েছিল। কে বা কারা কোন উদ্দেশ্যে এ কাজ করেছেন আমার জানা নেই।

 

প্রশ্ন: আমরা সকলেই জানি যে আর্সেনিক এক ধরনের বিষ। তা হলে জনমানসে ধারণা হয়েছিল বিষে বিষক্ষয় হবে?
উত্তর: হতে পারে। সঠিক বলতে পারব না। সাধারণ বাংলায় আর্সেনিককে সেঁকো বিষ বলা হয়। যার প্রভাবে নানা রকম মারণ রোগ হতে পারে। জলে আর্সেনিক থেকে কত মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে আমরা সকলেই জানি। তবে ওষুধের ক্ষেত্রে বলতে পারি, এ ওষুধ সকলে প্রেসক্রাইব করা হয় না। হোমিওপ্যাথে একটা ওষুধের নানা রকম কাজ থাকে। এটা মূলত লক্ষ্মণ ভিত্তিক চিকিৎসা। একজন রোগীকে সমস্ত রকম অসুবিধার কথা জিজ্ঞাসা করে তাঁর কী কী উপসর্গ রয়েছে তা জেনে তবে ওষুধ দেওয়া হয়।

Advertisement

 

প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথি ওষুধে কি সাইড এফেক্ট রয়েছে?
উত্তর: অবশ্যই সাইড এফেক্ট আছে। আমার আগের উত্তরেই ফিরে যাই। আগেই বলেছি, একটা ওষুধ অনেকগুলো রোগের ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে। আমরা সে সব জেনে তার পর ওষুধ দিয়ে থাকি। অনেক সময় দেখবেন একই রোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সম বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হয়। কারণ সাইড এফেক্ট যাতে কম হয়। হোমিওপ্যাথি ওষুধেরও সাইড এফেক্ট রয়েছে। ধরুন একটা ওষুধ ৫টি রোগে কাজ করে। কেউ একটি মাত্র লক্ষ্মণ নিয়ে এসেছেন। তার ক্ষেত্রে সেই ওষুধ প্রয়োগ করলে বাকি যে চারটি রোগের এফেক্ট থাকে তা ওই রোগীর হবে। এটাই সাইড এফেক্ট। তাই সমস্ত কিছু জেনে তবে ওষুধ দিতে হয়।

 

প্রশ্ন: করোনা আবার ভয়ংকর ভাবে ফিরে এসেছে। সাধারণ মানুষকে চিকিৎসক হিসাবে আপনি কী বলবেন?
উত্তর: গত বছরও যা বলেছি, এ বছরও তাই বলব। স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খান। নিয়ম করে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ি থেকে বার হবেন না। এই করোনা কিন্তু শিশুদেরও রেহাই দিচ্ছে না। আগের কিছু গবেষণায় শিশুদের সুপার স্প্রেডার হিসাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ বার সরাসরি তারা অ্যাফেক্টেডও হচ্ছে। ফলে বাড়িতে বাচ্চা থাকলে অতিরিক্ত সাবধান হওয়া প্রয়োজন।

 

প্রশ্ন: আর্সেনিক অ্যালবাম নিয়ে আবার যদি একই ধরনের হুজুগে মাতেন সকলে...
উত্তর: (প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই) এত কিছু জানার পর যদি কেউ এ জিনিস করেন তবে কী আর বলার থাকতে পারে। যাঁরা করছেন তাঁরা সকলেই প্রাপ্ত বয়স্ক। এঁদের তো বোঝানোর আলাদা করে কিছু নেই। তবে একটাই কথা বলব, গুজবে কান দেবেন না। সোশাল মাধ্যমে একটা পোস্ট দেখে যদি নিজের চিকিৎসা করতে যান তবে আখেরে নিজের ক্ষতি করে ফেলতে পারেন।

 

Advertisement