মাথা ঘোরা বা মাথা ব্যথার কারণে অনেকে প্রায়শই সমস্যায় পড়ে থাকেন। আমাদের চোখ, মস্তিষ্ক, কান, পা এবং মেরুদণ্ডের শিরাগুলি শরীরকে ভারসাম্য বজায় রাখতে একসাথে কাজ করে। যখন এই সিস্টেমের একটি অংশ কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন শরীরের অন্যান্য সমস্যার সঙ্গে মাথা ঘোরা শুরু করে। কখনও কখনও এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এর ফলে যদি আপনি পড়ে যান তবে এটি আরও মারাত্মক হতে পারে।
এই লক্ষণগুলি সনাক্ত করুন - আপনার বুকে ব্যথা হলে, গুরুতর মাথাব্যথা, মাথায় আঘাত, উচ্চ জ্বর, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, খিঁচুনি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, ঘাড় শক্ত হওয়া, দেখতে বা কথা বলতে অসুবিধা, গা বমি ভাব বা দুর্বলতা থাকলে। এই রকম কোনও লক্ষণ যদি আপনার অনুভূত হয়, তবে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। জেনে নিন, কোন কোন গুরুতর রোগগুলি ইঙ্গিত হতে পারে আপনার মাথা ঘোরার।
ভার্টিগো - যদি মনে হয়, যে আপনার চারপাশের সমস্ত জিনিস চলমান রয়েছে, তবে এই ধরনের মাথা ঘোরাকে ভার্টিগো বলা হয়। এক্ষেত্রে অল্প মাথা ঘোরাতেও সমস্যা বেড়ে যায়। কানের কোনও অংশে বা মস্তিষ্কের স্নায়ুতে সমস্যা দেখা দিলে এটি ঘটে। ভার্টিগোর সর্বোচ্চ পর্যায় হল বিপিপিভি (বেনাইন প্যারোক্সিজমাল পজিশনাল ভার্টিগো)।
বিপিপিভি - কানে উপস্থিত তরলও মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করে। বিপিপিভির ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের ছোট ছোট টুকরো কানের অভ্যন্তরে এবং অন্য জায়গায় চলে যায়। এই পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক ভুল সংকেত পেতে শুরু করে। সাধারণত এটি একটি বয়সের পরে বা মাথায় কোনও আঘাতের কারণে ঘটে থাকে। বিপিপিভি গুরুতর নয় এবং নিজে থেকে ঠিক হয়ে যায়। বা এটির সমাধানের জন্য কিছু বিশেষ অনুশীলন রয়েছে।
সংক্রমণের কারণে - কানের শিরাতে ফোলা ভাবের কারণে ভার্টিগোও অনুভূত হতে পারে। এটি ভাস্তিবুলার নিউরাইটিস বা ল্যাব্রিনথাইটিস হতে পারে। এই দুটি জিনিসই কানে সংক্রমণের কারণে ঘটে। এই কারণে হঠাৎ মাথা ঘোরা, কান বেজে যাওয়া, সঠিকভাবে শুনতে না পারা, বমি ভাব, জ্বর বা কানে ব্যথা হতে পারে। এই লক্ষণগুলি কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকতে পারে। এটি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিরাময়যোগ্য নয়। এই ওষুধের আলাদা কোর্স রয়েছে।
মেনিয়ারের রোগের কারণে - ভার্টিগো এই অবস্থায় খুব দীর্ঘস্থায়ী হয়। কানে সব সময় একটি চাপ লাগে। এছাড়া শুনতে অসুবিধা কিংবা বমি ভাব অনুভূত হতে পারে। ভার্টিগো নিরাময়ের পরেও শরীরে অনেক ক্লান্তি থাকতে পারে। মেনিয়ার রোগের ফলে কানের ভিতরে খুব বেশি তরল জমা হয়। এজন্যে চিকিৎসকেরা ওষুধ দেওয়া ছাড়া ডায়েটও পরিবর্তন করেন।
রক্ত সঞ্চালনের কারণে - রক্ত চলাচলও মাথা ঘোরা হওয়ার কারণ হতে পারে। মস্তিষ্কের অবিচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন। অক্সিজেন মস্তিষ্কে না পৌঁছালে অজ্ঞানতাও দেখা দিতে পারে। আপনি যদি এইরকম কিছু অনুভব করেন তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কখনও কখনও অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের কারণেও মাথা ঘোরে বা অজ্ঞান হয়ে যায় অনেকে।
কম জল পান করার কারণে - বেশিরভাগ মানুষের শরীরে জলের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষত প্রবীণ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের এই অভিযোগ রয়েছে। শরীরে জলের অভাবে রক্তচাপ হ্রাস পেতে পারে যার কারণে মাথা ঘোরা শুরু হয়। এ ছাড়া জল তেষ্টা পাওয়া, ক্লান্ত হওয়া এবং ঘনঘন প্রস্বাব হওয়া, এর লক্ষণ। এজন্য প্রচুর পরিমাণে জল পান করা প্রয়োজন।
অন্যান্য কারণে - মাথা ঘোরা কখনও কখনও অন্যান্য রোগের লক্ষণ হতে পারে। যেমন মাইগ্রেন, টেনশন, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, মস্তিষ্কের টিউমার বা কানের টিউমার। এ জাতীয় রোগে মাথা ঘোরা ছাড়া অন্য লক্ষও দেখা যায়। এই লক্ষণগুলি উপেক্ষা করার ভুল করবেন না এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।