প্রত্যেকেই চায় তাঁদের দাম্পত্য জীবন যেন পারফেক্ট হয়। কিন্তু আদপে তা হয় না। ঝগড়া-অশান্তি-ঝামেলা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। স্বামী এক কথা বলে তো স্ত্রী অন্য পথে চলে। আর এরকম করেই সম্পর্কে চিড় ধতে শুরু করে দেয়। তবে জানেন দাম্পত্য সম্পর্কে সবচেয়ে বড় শত্রু কে? এই প্রশ্নের সবচেয়ে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য উত্তর হলো—তুলনা। নিজের দাম্পত্য সঙ্গীকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা। আর এই তুলনা করতে গিয়েই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া তুঙ্গে পৌঁছায়।
স্ত্রী হয়তো অনেক সাধ করে ইলিশের পাতুরি রান্না করে স্বামীর পাতে সবচেয়ে বড় টুকরাটা তুলে দিয়ে আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল, ‘কেমন হয়েছে বলো তো? তোমার পছন্দ বলে ইউটিউব দেখে আজই প্রথম করলাম।’ অমনি স্বামীর বিরস উত্তর, ‘খেতে মন্দ নয়। তবে মায়ের হাতের পাতুরির কাছে টিকবে না।’ তুলনা থেকে তৈরি হয় এমন সব অসন্তুষ্টি, যা একসময় সম্পর্কে বড় ফারাক ডেকে আনে। আর সেই ফাঁকে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে পড়তেই পারে। দাম্পত্য জীবনের এমন সব মোড় থেকে দুজনের জীবন দুদিকে বেঁকে যাওয়াটা অসম্ভব নয়।
দাম্পত্য জীবনে পারফেক্ট বলে কিছু নেই
আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনার বিবাহিত জীবনে ঝামেলার শেষ নেই। অথচ ‘অমুক’ ‘অমুক’ কত সুখী! অনেক ক্ষেত্রেই সত্যিটা হল, ওদের চেয়ে আপনার দাম্পত্য জীবনেই বরং জটিলতা কম। কেননা, আপনার জীবনের জটিলতা আপনি জানেন, আর আপনার চোখে ভাসছে দাম্পত্য জীবনের কিছু সুখী ছবি বা সুখী চিত্র। আসলে ফেসবুকে ঝাঁ–চকচকে পারফেক্ট কাপল, ফটোর মতো পারফেক্ট দাম্পত্য জীবন বলে কিছু নেই। পৃথিবীর কোনো দাম্পত্য সম্পর্কই পারফেক্ট নয়।
তুলনা করা
অসুখী হওয়া খুবই সহজ। আর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, তুলনা করতে থাকা। আপনার যদি এই বদঅভ্যাস থেকে থাকে, সেটাকে বিদায় করুন। নতুবা আপনি সারা জীবনের জন্য অসুখী হওয়ার দুষ্ট চক্রে পা দিয়ে খেই হারিয়ে ক্রমেই অতল গহ্বরে পড়তে থাকবেন। পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষের মতো প্রতিটি দাম্পত্য সম্পর্কও অনন্য। কারোর সঙ্গে কারোর তুলনা হয় না। অন্যের দিকে তাকানোর চেয়ে আপনি বরং নিজের ভেতর ডুব দিন। অন্যের সঙ্গে নিজের স্বামী বা স্ত্রীর তুলনা করে কখনো ‘সুস্থ প্রতিযোগিতা’ তৈরি করা যায় না, সবকিছু কেবলই বিষাক্ত হতে থাকে।
মানুষ কেন নিজের সঙ্গীকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করে?
এক গবেষণা অনুযায়ী, এর সবচেয়ে সহজ উত্তর হলো, মানুষ নিজের ছোটবেলা থেকে ‘তুলনার শিকার’ হয়ে বড় হয়। এভাবে সহজাতভাবেই তুলনা বিষয়টা তার ভেতর ঢুকে পড়ে। শিক্ষাব্যবস্থা ও সন্তানকে ছোট থেকে বড় করার সময় থেকেই তুলনা বিষয়টি বাদ দিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াকে সুস্থ সম্পর্কের দৃষ্টান্ত হিসেবে নেওয়া যাবে না। আর একে অন্যের সেরাটাকে বের করে আনার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে হবে।
কীভাবে আপনি তুলনার ফাঁদ থেকে নিজেকে বাঁচাবেন
-কেবল নিজেদের সম্পর্কে মনোযোগ দিন। নিজেদের মধ্যেকার ভিন্নতা আর দাম্পত্য সম্পর্কের অনন্যতাকে উদযাপন করুন।
-দাম্পত্য সম্পর্ককে যথাসম্ভব ব্যক্তিগত রাখুন। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার ‘কনটেন্ট’ বানাবেন না।
-আপনার সঙ্গীর ইতিবাচক দিকগুলোয় জোর দিন। আপনার জন্য তিনি যা করছেন, সে জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন। সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দ্বিধা করবেন না।
-কেরিয়ার গোলের মতো দাম্পত্য সম্পর্কেও ছোট ছোট ‘রিলেশনশিপ গোল’ পূরণের মাধ্যমে বড় বড় রিলেশনশিপ গোলের দিকে এগিয়ে যান।
-আপনি যদি আপনার সম্পর্ক নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ, দ্বিধা বা অনিশ্চয়তায় ভোগেন, সেটা অপর পক্ষকে নির্দ্বিধায় জানান। খোলামেলা আলাপ করুন। একান্তে সময় কাটান।