প্রাণীদের বোঝার ক্ষমতা মানুষের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে কুকুররা তাদের মালিকের কথা বুঝতে পারে। কুকুররা মানুষের কথা শুনে সব কিছু বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আচরণ করে। এরা মালিকের সমস্যাগুলি জানে এবং মনে করা হয় যে, আগে থেকেই নেতিবাচক শক্তি অনুভব করার ক্ষমতা আছে কুকুরের। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন একজন মানুষ কোনও ধরণের মানসিক চাপের মধ্যে থাকে, তখন তার শরীর থেকে একটি বিশেষ ধরণের গন্ধ বের হয়। এই গন্ধ পোষ্য কুকুরের অনুভূতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
যখন একজন ব্যক্তি কোনও ধরণের মানসিক চাপের মধ্যে থাকে, তখন তার ঘাম এবং তার শরীর থেকে আসা গন্ধ তার আশেপাশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। যার মধ্যে তাদের অনুভূতি এবং পছন্দগুলিও অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাদের অজান্তেই। কিন্তু সম্প্রতি ব্রিটেনের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণা করা হয়েছে, যা দেখায় যে যদি কোনও ব্যক্তি মানসিক চাপের মধ্যে থাকে, তাহলে কুকুররা তাদের ঘামের গন্ধ পেয়ে মানসিক চাপে পড়ে। এটি কীভাবে তাদের আচরণ পরিবর্তন করে?
গবেষণা কী বলছে?
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক নিকোলা রুনি ১৮টি কুকুর এবং তাদের মালিকদের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন যে, পোষ্য কুকুর তাদের মালিকের অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল। গবেষণায় জানা যে, যদি কোনও অচেনা ব্যক্তি চাপে থাকে, তাহলে কুকুরটি তার গন্ধের মাধ্যমেও আবেগগতভাবে প্রভাবিত হয়। এই সময়কালে, যখন কোনও ব্যক্তি চাপের মধ্যে ছিলেন - যেমন কোনও সাক্ষাৎকার বা পরীক্ষার আগে - তখন তার ঘামের এবং শ্বাসের গন্ধে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এরপর, এই গন্ধ কুকুরগুলিতে দেওয়া হয়েছিল, যা তাদের আবেগ, চিন্তাভাবনা এবং শেখার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছিল।
কুকুরের মধ্যে কী পরিবর্তন ঘটেছে?
গবেষণায়, প্রথমে কুকুরদের শেখানো হয়েছিল যে, একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখা বাটি সর্বদা পূর্ণ থাকে এবং অন্য স্থানে রাখা বাটি খালি থাকে। এরপর বাটিগুলি একটি নতুন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল এবং দেখা হয়েছিল যে কুকুরটি তাদের দিকে কত দ্রুত যায়। কুকুর যদি দ্রুত বাটির দিকে এগিয়ে যায়, তাহলে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, সে খাবার পাওয়ার আশা করছে।
কিন্তু যদি সে ধীরে ধীরে এবং নার্ভাসভাবে এগিয়ে যায়, তাহলে এর অর্থ হল সে খাবার পাবে কিনা তা নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে। এরপর, কুকুরগুলিকে একজন চাপগ্রস্ত ব্যক্তির গন্ধ নিতে দেওয়া হয়, তারপর তারা ভয়ে ভয়ে বাটির দিকে যায়, যার স্পষ্ট অর্থ হল তাদের মধ্যে নেতিবাচক অনুভূতি ছিল। অন্যদিকে, আরামদায়ক মানুষের গন্ধে কুকুরদের মধ্যে এমন কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি।
কুকুর কীভাবে শনাক্ত করে?
কুকুরের ঘ্রাণশক্তি মানুষের তুলনায় লক্ষ লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালী। তারা কেবল ঘ্রাণ দেখেই বলতে পারে যে একজন ব্যক্তি খুশি, দুঃখী নাকি চাপে রয়েছে। যখন তারা চাপের গন্ধ পায়, তখন অনেক কুকুর অস্থিরতা, মনোযোগ এবং সহানুভূতির মতো আচরণ দেখায়। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে পোষ্য, বিশেষ করে কুকুর, শুধু দেখে বা শুনেই নয়, গন্ধের মাধ্যমেও আমাদের আবেগ বোঝে। এটি আরও বলে দেয় যে, আমরা যখন বিরক্ত হই, তখন আমাদের পোষ্য প্রাণীরাও প্রভাবিত হয়।