
'যত্র বিশ্বং ভবত্যেক নীড়ম' (Yatra Vishwam Bhavatyekanidam)- যার অর্থ, 'এখানে গোটা পৃথিবী যেন একই বাড়ির সদস্য।'। এটাই বিশ্বভারতীর মূলমন্ত্র (Visva- Bharati Motto)। এই বেদমন্ত্রেই কবিগুরুর (Rabindranath Tagore) বিশ্বভারতীর সত্য ও আদর্শ। শুধু বসন্ত উৎসব, পৌষ মেলা বা নন্দন মেলায় নয়, বছরভর শান্তিনিকেতনে (Santiniketan) ভিড় জমান লক্ষ লক্ষ পর্যটক। এক কথায় বলা যায়, বাঙালি তো বটেই, সেই সঙ্গে বিশ্বের বহু মানুষের আকর্ষণ এই শান্তিনিকেতন।
২০২৩ সালে বিশ্বভারতীকে (Visva -Bharati) বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো (UNESCO)। তবে কোভিডের সময় থেকে বন্ধ ছিল বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার সুযোগ। এবার দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পর্যটকদের জন্য খুলতে চলেছে বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাস (Visva Bharati Campus)। 'হেরিটেজ ওয়াক' (Visva Bharati Heritage Walk) চালু করছে বিশ্বভারতী।
বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য প্রবীর কুমার ঘোষ ঘোষণা করেন, বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ও সংস্কৃতির দর্শন এবার আরও ভাল ভাবে এবং নির্ভুলভাবে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা হবে। বাংলা ডট আজতক ইন-কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান, আগামী ৩ অগাস্ট, রবিবার থেকে শান্তিনিকেতনে শুরু হবে এই হেরিটেজ ওয়াক। প্রশিক্ষিত গাইডের মাধ্যমে বিশ্বভারতীর মূল আশ্রম প্রাঙ্গণ (Core Ashram Area) ঘুরে দেখার পাশাপাশি, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সবিস্তারে জানতে পারবেন পর্যটকেরা। প্রথমে রবিবার করে দেড় থেকে দু'ঘণ্টার জন্য এই 'ওয়াক' হলেও, পরবর্তী সময় সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় দিন হতে পারে।
ট্যুর ম্যাপ
প্রশিক্ষিত গাইডদের সঙ্গে পর্যটকরা রবীন্দ্র ভবনের বিপরীত গেট দিয়ে মূল আশ্রম প্রাঙ্গণে প্রবেশ করবেন। এরপর ছাতিমতলা, পাঠ ভবন ক্যাম্পাস, শান্তিনিকেতন গৃহ সহ আরও একাধিক স্থান হয়ে উপাসনা গৃহ বা কাঁচ মন্দির হয়ে বের হবেন। পর্যটকদের আপাতত কলা ভবন এবং সঙ্গীত ভবন পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন একটি ট্যুর প্ল্যান ডিজাইন করার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে এই দুই বিভাগ, রবীন্দ্র ভবন জাদুঘর এবং আরও ঐতিহ্যবাহী এলাকা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সময়
প্রাথমিকভাবে, হেরিটেজ ওয়াকটি শুধুমাত্র রবিবার হবে। চারটি স্লট থাকবে - সকাল ১০টা, ১১টা, দুপুর ২.৩০টে এবং বিকেল ৩.৩০টে। প্রতিটি দলে ২৫ জন পর্যটক থাকবেন। সম্পূর্ণ পায়ে হেঁটে ১.৫ থেকে ২ ঘণ্টার জন্য পরিচালিত হবে।
গাইড
বিশ্বভারতী হেরিটেজ ওয়াকের জন্য গাইড হিসাবে কাজ করার জন্য চারজন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা প্রতিটি স্থানের ইতিহাস, তাৎপর্য সহ খুঁটিনাটি বর্ণনা করবেন। সকল গাইড বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি- এই তিন ভাষাতে কথা বলবেন, পর্যটকদের বোঝার চাহিদার ভিত্তিতে।
টিকিট
আপাতত অফলাইনেই টিকিটের ব্যবস্থা থাকছে পর্যটকদের জন্য। সাধারণ পর্যটকদের জন্য মাথাপিছু ৩০০ টাকা, দলগতভাবে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য মাথাপিছু ৫০ টাকা, পরিচয়পত্রধারী পৃথক ছাত্র- ছাত্রী পর্যটকদের জন্য মাথাপিছু ১৫০ টাকা এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য ১০০০ টাকা লাগবে। রবীন্দ্র ভবনের টিকিট কাউন্টার থেকেই এই 'ওয়াক'-র জন্য টিকিট সংগ্রহ করা যাবে।
নিরাপত্তা ও আপৎকালীন ব্যবস্থা
ক্যাম্পাসে মেয়েদের হোস্টেল রয়েছে। ফলে তাঁদের এবং পর্যটকদের যে কোনও রকম নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে হেরিটেজ ওয়াকের সময় তাঁদের সঙ্গে থাকবেন ২ জন নিরাপত্তা রক্ষী। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রক্ষীরা থাকবেন। এছাড়াও থাকছে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা।