ভবিষ্যতে কি হারিয়ে যাবে, বিশ্বের সেরা ইলিশ ! এমনই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশের একাধিক বিশেষজ্ঞদের তরফে। পদ্মার ইলিশ নিয়ে মাতামাতি বেশি হলেও বিশ্বের সেরা ইলিশ মেলে পদ্মায় নয়, মেঘনায়। এ তথ্য এখন মোটামুটি সবার জানা। আর এই মেঘনা নদীর ইলিশই এখন ভবিষ্যৎ বিলুপ্তির পথে যেতে চলেছে বলে আশঙ্কা।
উন্নয়নের প্রচেষ্টাই ইলিশের বাধা !
বাংলাদেশ সরকারের কিছু পদক্ষেপে এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। যে অনুন্নয়ন বাংলাদেশের ইলিশের মৃগয়াক্ষেত্র করে রেখেছিল, সেই অনুন্নয়ন সরিয়ে উন্নয়নের পথে হাঁটতে চলেছে ওপার বাংলা। আর তাতেই ইলিশের স্বাভাবিক বিচরণকেন্দ্র হুমকির মুখে।
মেঘনার চর চরমেঘায় অর্থনৈতিক জোন
মেঘনার মাঝে দ্বীপের মতো জেগে ওঠা 'চরমেঘা'য় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বলে সম্প্রতি একাধিক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট হয়েছে। এই চরটি আপাতভাবে দুর্গম। বাংলাদেশের হিজলা উপজেলার গৌরবদী ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত।
আর এখানেই আশঙ্কা
ও দেশের মৎস্য দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হলে তা হবে ইলিশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে। মেঘনার এ অংশটি ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যপ্রাণীর সবচেয়ে বড় প্রজননক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জানিয়েছেন, নদীর চরে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে শুধু ইলিশ নয়, মেঘনায় সমস্ত জীববৈচিত্র্যই আশঙ্কার মুখে পড়তে বাধ্য।
নতুন করে ভাবনা চিন্তা, সিদ্ধান্ত কী বদলাবে ?
বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক বাংলাদেশের এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হবে। তাঁরা জানতে পেরেছেন ওই এলাকাটি ইলিশ সহ অন্যান্য মাছের প্রজননক্ষেত্র। সে বিষয়ে তাঁরা প্রজননক্ষেত্র নিরাপদ রেখে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন। তবে তা কতটা সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে মৎস্য দফতরের।
গঙ্গার মতো দূষণের আশঙ্কা মেঘনাতেও
মৎস্য দফতরের তরফে চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে মৎস্যসম্পদের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা দেশের সব প্রজাতির মৎস্যসম্পদের বড় প্রজননক্ষেত্র। বিশেষ করে বিশ্বের সেরা পুষ্টি ও স্বাদযুক্ত ইলিশ মেঘনাতেই পাওয়া যায়। চরমেঘায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে সেখানে গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা। এর বর্জ্য ও রাসায়নিক মিশবে নদীর জলে। যা নদীর বাস্তুকে নষ্ট করে দিতে পারে পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার মতো।
ইলিশ সহ অন্য মাছ গতিপথ বদলে নিতে পারে
মৎস্য দফতরের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রজননের জন্য নদীর নির্জন এলাকা পছন্দ। মেঘনা তেমনই একটি নির্জন নদী। অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে শিল্প-কারখানায় এলাকাটি কর্মমুখর হবে। কলকারখানার বর্জ্য পড়বে নদীতে। এতে মেঘনার জল উষ্ণ হবে। দিনরাত চলাচল করবে পণ্যবাহী নৌযান। সব মিলিয়ে নির্জনতা হারিয়ে মৎস্যপ্রাণিকুল গতিপথ পরিবর্তন করে ফেলবে। এক আধিকারিক ওদেশের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বড়জোর ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অপরদিকে জেলেসহ মৎস্যসংশ্নিষ্ট পেশার লক্ষাধিক মানুষ কর্ম হারাবে।
এর আগে পারমাণবিক প্রকল্প বাতিল করা হয় একই জায়গায়
এর আগে ২০১৭ সালে পরমাণু শক্তি কমিশনের চরমেঘায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ মৎস্য অধিদপ্তরের তীব্র আপত্তির মুখে নাকচ হয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে।