
বিশ্বের তৃতীয় এবং ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। যার উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার (২৮,১৬৯ ফুট)। পূর্ব হিমালয়ের এই মহীরুহ নেপাল ও ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত। স্থানীয় মানুষদের কাছে এটি শুধু একটি পর্বত নয়, এক পবিত্র দেবস্থান। কাঞ্চনজঙ্ঘার পাঁচটি শিখরকে ধন, রৌপ্য, রত্ন, খাদ্যশস্য ও ধর্মগ্রন্থের প্রতীক বলে মনে করা হয়।

এই পর্বতের চারপাশে ছড়িয়ে আছে মনোমুগ্ধকর ছোট ছোট গ্রাম। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। সকালবেলায় রোদের প্রথম ছোঁয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘার রুপালি আভা দেখতে হলে এই গ্রামগুলিই আপনার গন্তব্য হোক। কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের ধারণা বদলে যাবে।

ইচ্ছেগাঁও (Icche Gaon)
দার্জিলিংয়ের কাছে অবস্থিত এই নিরিবিলি গ্রামটি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব দৃশ্য চোখে পড়ে। সবুজ পাহাড়ে ঘেরা, পাখির কলতান আর শান্ত পরিবেশ মিলিয়ে ইচ্ছে গাও এখন পর্যটকদের প্রিয় অফবিট ডেস্টিনেশন।

২. তিন চুলে (Tinchuley)
দার্জিলিং জেলার ছোট্ট এই গ্রামটি চা-বাগান, অরেঞ্জ অর্চার্ড এবং নরম সকালের কুয়াশার জন্য বিখ্যাত। যাঁরা ভিড় এড়িয়ে প্রকৃতির কোলে কিছুটা সময় কাটাতে চান, তিন চুলে তাঁদের জন্য আদর্শ।

৩. ধোত্রে (Dhotrey)
কালিম্পংয়ের কাছে অবস্থিত এই ছোট গ্রামটি সিঙ্গলিলা ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশদ্বারও বটে। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও পান্ডিমের দৃশ্য যেন হাতের মুঠোয়। পাখি দেখা, ট্রেকিং ও নীরবতা উপভোগের জায়গা ধোত্রে।

৪. অহলদারা (Ahaldara)
দার্জিলিংয়ের কাছে অবস্থিত এই পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার ৩৬০° প্যানোরামিক ভিউ পাওয়া যায়। এখানে সূর্যোদয় যেন এক জীবন্ত চিত্রপট।নীল, কমলা, সোনালি রঙে রাঙিয়ে দেয় গোটা আকাশ।🌺

৫. লামাহাটা (Lamahatta)
দার্জিলিং থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে লামাহাটা এক অরণ্যবেষ্টিত সৌন্দর্যের গ্রাম। এখানকার ইকো পার্ক ও পাহাড়চূড়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য অপূর্ব। নির্জন প্রকৃতি ও জৈব কৃষি এখানে বিশেষ আকর্ষণ।

৭. সিলেরি গাঁও (Sillery Gaon)
‘নিউ দার্জিলিং’ নামেও পরিচিত এই গ্রামটি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। এটি লাভা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে। এখানে রাতের তারা ভরা আকাশ আর ভোরের সূর্যোদয় দুই-ই দেখার মতো।

৮. তাবাকোশি (Tabakoshi)
মিরিকের কাছে অবস্থিত এই ছোট গ্রামটি চা-বাগান ও পাহাড়ি ঝরনার জন্য বিখ্যাত। এখানকার সরু রাস্তা ধরে হাঁটলে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছায়া যেন আপনিই অনুভব করবেন।

রিশপ (Rishyap)
লাভা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রিশপ হল কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের অন্যতম সেরা স্থান। এখানকার পাহাড়ি পথ, পাইন জঙ্গল, আর ভোরবেলার কুয়াশা এক অনন্য অনুভূতি দেয়।

যাঁরা সত্যিই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে অনুভব করতে চান, তাঁদের জন্য এই আটটি স্থান এক একটি গল্প। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, এই গ্রামগুলিতে নীরবতাও মধুর সংগীতের মতো কানে বাজবে। তবে বেশি লোক এখানে গিয়ে হইচই না করাই ভাল। চুপচাপ ২টো দিন সময় কাটানোর আদর্শ জায়গা।
কীভাবে যাতায়াত
শিলিগুড়িতে নেমে এনজেপি স্টেশন হোক কিংবা শিলিগুড়ি জংশন সরাসরি গাড়ি পাবেন। তাহলে সুবিধা। শাটল গাড়ি নিকটবর্তী বাজার পর্যন্ত গেলেও, আলাদা করে গাড়ি নিতে হবে হোমস্টেগুলি ও প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে পৌঁছনোর জন্য। ভাড়া শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি ৪ থেকে ৬-৭ হাজার পর্যন্ত।