১. গত কয়েকদিন ধরেই ঝলমলে রোদে ভরে উঠেছে দার্জিলিংয়ের আকাশ। পাহাড়ের হাওয়া মিষ্টি ঠান্ডা, আকাশ নীল, মেজাজ ফুরফুরে। কেউ ম্যালে হাঁটছেন ধীরে ধীরে, কেউবা ব্যস্ত চারপাশের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে।
২. হালকা শীতের জামা গায়ে দিয়ে সকাল থেকে ভিড় জমেছে বিখ্যাত ম্যাল এলাকায়। কেউ বেঞ্চে বসে কফির কাপ হাতে উপভোগ করছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার শ্বেতশুভ্র সৌন্দর্য, কেউ আবার ঘুমন্ত বুদ্ধের মূর্তি দেখতে বেরিয়েছেন।
৩. কয়েক সপ্তাহ আগেই চিত্রটা ছিল একেবারে উল্টো। অক্টোবরের শুরুতে পাহাড়ে ভয়াবহ বৃষ্টিতে ধস নামে। বহু জায়গায় রাস্তা ভেঙে যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন হয়ে পড়ে। পর্যটকরা আতঙ্কে পাহাড় ছেড়ে নামতে শুরু করেন।
৪. দুধিয়ায় সেতু ভেঙে যায়, মিরিকের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়। রোহিণী রোড এবং জাতীয় সড়ক ১১০-ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু জায়গায় ধস নামায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রশাসনকে একাধিক জায়গা থেকে পর্যটকদের উদ্ধার করতে হয়।
৫. ওই দুর্যোগের জেরে পর্যটন শিল্পে বড় ধাক্কা লাগে। বুকিং বাতিলের হিড়িকে একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায় দার্জিলিংয়ের হোটেল ব্যবসা। প্রায় দশদিনের জন্য পাহাড় যেন নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
৬. তবে পরিস্থিতি বদলাতে সময় লাগেনি। আকাশ পরিষ্কার হতেই ফের প্রাণ ফিরে পেয়েছে পাহাড়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ফিরেছে পর্যটকরা। ম্যাল থেকে চিড়িয়াখানা— সব জায়গাতেই এখন মানুষের ভিড়।
৭. মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিং পুরসভাকে দ্রুত রাস্তা সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ মেনে প্রশাসন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পাঙ্খাবাড়ি রোড ও ১১০ নম্বর জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ শুরু করে।
৮. দুধিয়ায় হিউমপাইপ বসিয়ে অস্থায়ী সেতু তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। সেতুটি তৈরি হয়ে গেলে ছোট গাড়িগুলি সরাসরি মিরিকের দিকে যেতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।
৯. এখন দার্জিলিং পৌঁছলে সকালবেলা কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপে মন ভরে যায়। কার্সিয়াং পেরিয়ে খানিকটা উঠলেই রোজ দেখা মিলছে সাদা তুষারঢাকা পর্বতের। সেই দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে প্রতিদিন।
১০. দীপাবলির ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় আরও বেড়েছে। দার্জিলিংয়ের অধিকাংশ হোটেলে ‘নো রুম’ বোর্ড ঝুলছে। অনলাইন বুকিং সাইটগুলোতেও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর খালি রুম।
১১. টয়ট্রেনেও হাউসফুল অবস্থা। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এনজেপি-দার্জিলিং ও এনজেপি-রংটং রুটের প্রায় ৯৫ শতাংশ টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে। ডিএইচআর ডিরেক্টর ঋষভ চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রয়োজনে অতিরিক্ত জয়রাইড চালুর প্রস্তুতিও রয়েছে।
১২. বর্তমানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভরপুর উপভোগ করছেন পাহাড়ি শহরের রূপ। আমেরিকা, ইটালি, জার্মানি, বেলজিয়াম কিংবা ফ্রান্সের পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন দার্জিলিঙে। দীপাবলির আগেই পাহাড় ফের মুখর, ফের হাসছে দার্জিলিং।