দিঘায় নতুন জগন্নাথ মন্দির। কিছুদিন আগেই তার দ্বারোদঘাটন হয়েছে। তারপর থেকেই যেন উপচে পড়ছে ভিড়। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থী সেখানে গিয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—দিঘায় এই নতুন মন্দির তৈরির পর ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের জনপ্রিয়তায় কি কোনও প্রভাব পড়ছে? এই বছর ২৭ জুন রথযাত্রা। প্রতি বছর এই সময়ে পুরীতে প্রচুর ভিড় হয়। কয়েক মাস আগে থেকেই বেশিরভাগ হোটেল বুক হয়ে থাকে। ঘর পাওয়া যায় না। এই দর্শনার্থীদের একটি বড় অংশ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা। দিঘায় নতুন জগন্নাথ মন্দিরের পর কি সেই ট্র্যাডিশন বদলাবে?
এই বিষয়ে জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম পুরীর বেশ কয়েকটি বড় পর্যটন সংস্থার সঙ্গে। ‘সায়ন্তন ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস’-এর কর্ণধার সায়ন্তন দাস জানালেন, 'পুরীর রথযাত্রা আলাদা আবেগ। দিঘায় মন্দির হয়েছে ভালো কথা, তবে তাতে আমাদের বুকিংয়ে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। আগের মতোই অনেক হোটেল বুকিং হয়ে গিয়েছে। আমাদের ২৮টা গাড়ি চলে। সব বুক হয়ে গিয়েছে। উল্টে আমাদের বাইরে থেকে গাড়ি জোগাড় করতে হচ্ছে। লোকে ৩ দিন থাকার জন্যও ৯ দিনের টাকা দিতে রাজি। দিঘায় মন্দির হলেও পুরীর মাহাত্ম্য পুরীতেই।' তিনি আরও জানান, 'দিঘায় শুধু বাংলার লোক। পুরীতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেকে আসেন। তবে ওড়িশা, ছত্তিশগড় এমনকি রাজস্থান থেকেও বড় অংশের দর্শনার্থীরা জগন্নাথ দর্শনে আসেন।'
একই বক্তব্য ‘পাত্র ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’-এরও। তাদের কথায়, 'যারা পুরীর রথ দেখতে চান, তারা সেখানেই যাবেন। এই আবেগ এখনও অটুট। ভিড়, হোটেল বুকিং- সব আগের মতোই আছে।'
তবে দিঘার ছবিও মন্দ নয়। সেখানে রথযাত্রার আগে থেকেই বাড়ছে হোটেল বুকিং। ‘দিঘা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস’-এর প্রতিনিধি সুখদেব রায় জানালেন, 'গত বছরের তুলনায় অবিশ্বাস্য ভিড়। গত ৪০ বছরে এমন ভিড় হয়নি। প্রয়াগরাজের কথা মনে পড়ে যাবে। মন্দির উদ্বোধনের পরপরই লক্ষাধিক মানুষ এসেছেন।'
চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হোটেল ভাড়াও। তাঁরা বলছেন, কোথাও ৫০০ টাকার ঘরই রেট উঠছে ২,৫০০ টাকা। মন্দিরের কাছে বড় হোটেলে ভাড়া আরও বেশি। তা সত্ত্বেও রুম পাচ্ছেন না অনেকে।
একই কথা বলছেন ‘জানা ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেলস’-এর প্রতিনিধি। জানালেন, 'রথযাত্রা উপলক্ষে ১০-১২ দিন আগে থেকেই বুকিং হচ্ছে। ৩ থেকে ৪ হাজারের রুম কোথাও কোথাও ৬ থেকে ৭ হাজারে পৌঁছে গিয়েছে।'
‘বেঙ্গল ট্যুর প্ল্যানস’-এর প্রতিনিধি শান্তনু নিয়োগীর মতে, পুরী ও দিঘার পর্যটকদের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। পুরী যাঁরা যান, তাঁরা অনেক আগে থেকে প্ল্যান করেন, বুকিং সারেন। অন্যদিকে দিঘা মূলত উইকেন্ডে, কলকাতা থেকে সহজে ঘুরে আসার জায়গা। তিনি বললেন, 'দিঘার পর্যটকরা মূলত বাংলারই। মন্দির তৈরির ফলে ভিড় হয় তো বেড়েছে, তাতে স্থানীয় স্তরে ব্যবসায়ীদের কিছুটা লাভ হবে। কিন্তু এটা অন্য রাজ্যে, দক্ষিণে, উত্তর ভারতে জনপ্রিয় হলে, সেখানকার মানুষ এলে তবেই লাভ।'
তবে সব কিছু সত্ত্বেও, পর্যটন মহলের বক্তব্য একটাই—দিঘা আর পুরী একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং পরিপূরক। একদিকে যেমন পুরীর ধর্মীয় মাহাত্ম্য অমলিন, তেমনই দিঘার নতুন মন্দির বাংলায় পর্যটনে এক নতুন ধারার সূচনা করেছে।
তবে পর্যটন মহল এও বলছে যে, আগামীদিনে পশ্চিমবঙ্গের বহু পর্যটক রথযাত্রায় পুরীর বদলে দিঘাকে বেছে নিতে পারেন। বিশেষত পুরীর হোটেল বুকিংয়ে ঝক্কি,বাড়তি জার্নি বা খরচের কথা ভেবে বাড়ির কাছে দিঘায় যাওয়ার প্ল্যান করতে পারেন। তাছাড়া দিঘার মন্দির সদ্য তৈরি হওয়ায় মানুষের মধ্যে একটা আগ্রহও আছে। কিন্তু যাঁরা পুরীর রথযাত্রায় বারবার যান, তাঁদের কাছে সেখানকার মাহাত্ম্য এখনও অটুট।