Jaldapara Tourism Problem: ডাইভারশন সেতু বন্ধে বিপাকে জলদাপাড়ার পর্যটন, সাফারি চালু না হলে সোমবার থেকে ধর্নার হুমকি

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর থেকে জলদাপাড়ার মূল গেট দিয়ে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ। এর জেরে শতাধিক মানুষের রুটিরুজি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় পর্যটনকর্মীরা। তাঁরা রবিবারের মধ্যে সাফারি ও এলিফ্যান্ট রাইড চালুর দাবি জানিয়েছেন। নচেৎ সোমবার থেকে মূল গেটে ধর্নায় বসবেন।

Advertisement
ডাইভারশন সেতু বন্ধে বিপাকে জলদাপাড়ার পর্যটন, সাফারি চালু না হলে সোমবার থেকে ধর্নার হুমকিডাইভারশন সেতু বন্ধে বিপাকে জলদাপাড়ার পর্যটন, সাফারি চালু না হলে সোমবার থেকে ধর্নার হুমকি

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ফের বিপত্তি। হলং নদীর ডাইভারশন দিয়ে পর্যটকদের তিন বা তার বেশি চাকাযুক্ত গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করল বন দফতর। শুক্রবার জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজারকে এই মর্মে চিঠি পাঠিয়েছেন সহকারী বন্যপ্রাণ সংরক্ষক। বাইক এবং বন দফতরের গাড়ি চলাচলে কোনও বাধা নেই, তবে ট্যুরিস্ট লজে যাতায়াতের গাড়ি বন্ধ।

এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্যুরিস্ট লজের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার নিরঞ্জন সাহা। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন, লজে প্রায়ই ভিভিআইপিরা আসেন, অথচ এখন পর্যটকদের ৪০০ মিটার পায়ে হেঁটে লাগেজ টেনে আনতে হবে। তিনি বলেন, “বয়স্ক পর্যটকদের কী হবে? তখন আমাদেরই দায় নিতে হবে।” তিনি চিঠিটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন বলেও জানান।

সহকারী বন্যপ্রাণ সংরক্ষক নবিকান্ত ঝা সংবামমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বন দফরের প্রতিটি কাজই জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে। প্রাণী চিকিৎসক বা অন্য স্টাফদের গাড়ি ছাড়া যাতায়াত সম্ভব নয়। ডাইভারশনটি মজবুত নয়, তাই বড় গাড়ি চলাচলে বিপদ রয়েছে। তবে ট্যুরিস্ট লজের ক্ষেত্রে জরুরি গাড়ি যেমন অ্যাম্বুল্যান্স ও দমকল চলাচল করতে পারবে। বাইকে নিষেধ নেই, কিন্তু ভিভিআইপিদেরও নিয়ম মানতে হবে।

এই ডাইভারশনের ওপারেই রয়েছে জলদাপাড়া কার সাফারি ও এলিফ্যান্ট রাইডের বুকিং কাউন্টার। আগামী সপ্তাহে সাফারি চালু হতে পারে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে বয়স্ক পর্যটকদের বড় অসুবিধা হবে। বসার ব্যবস্থাও নেই। কবে নতুন ব্রিজ তৈরি হবে, কেউ নিশ্চিত বলতে পারছেন না।

জলদাপাড়ার গাইডদের একাংশ জানিয়েছেন, প্রতি ট্রিপে তাঁর রোজগার ৩৫০ টাকা, কোনওদিন দুটো ট্রিপ হলে ৭০০ টাকাও হয়। কিন্তু ৫ অক্টোবর থেকে সব বন্ধ। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে কোনও আয় নেই। তাঁর মতো গাইড, জিপসি চালক, হোটেল মালিক, দোকানদার, সবাই এখন চরম সঙ্কটে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর থেকে জলদাপাড়ার মূল গেট দিয়ে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ। এর জেরে শতাধিক মানুষের রুটিরুজি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় পর্যটনকর্মীরা। তাঁরা রবিবারের মধ্যে সাফারি ও এলিফ্যান্ট রাইড চালুর দাবি জানিয়েছেন। নচেৎ সোমবার থেকে মূল গেটে ধর্নায় বসবেন। জলদাপাড়া ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির পক্ষ থেকে শুক্রবারই বিভাগীয় বনাধিকারিককে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ দাস হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এর মধ্যে সাফারি চালু না হলে আন্দোলনের দায় নিতে হবে বন দফরকেই। বন দফতরের তরফে অবশ্য দ্রুত খোলা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

তবে পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশ্বাস মানতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, বন দপ্তরের ঢিলেমির জন্যই সাফারি এখনও চালু হয়নি। একই অভিযোগ করেছেন সঞ্জয় দাস, স্বপ্না ভট্টাচার্য, উত্তম শর্মা, কল্যাণ গোপ, গোপাল সন্ন্যাসী, বিকাশ সাহা, বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ। সবাই ধর্নায় বসার হুমকি দিয়েছেন।

জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট গাইড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দাবি, গাইডদের কোনও বিকল্প রোজগারের পথ নেই। সংসার চলছে না।” মাদারিহাটে থাকা ২৬টি জিপসি গাড়ির চালকদেরও একই দুরবস্থা। প্রতি ট্রিপে ১৪৫০ টাকা আয় হলেও খরচ বাদে হাতে থাকত ৬০০-৭০০ টাকা। এখন সেই রোজগার শূন্য। মাদারিহাট ট্যাক্সি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফেও ক্ষোভ, ৭০-৮০টি ছোট গাড়ি সরাসরি পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন প্রায় ১০০০ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে।

জানা গিয়েছে সব লজে ৮০-৯০ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে। পর্যটনের উপর নির্ভরশীল সমগ্র মাদারিহাট-জলদাপাড়া এখন কার্যত স্তব্ধ। বন দপ্তরের ডাইভারশন নিষেধাজ্ঞা ও সাঁকো সংস্কারের বিলম্বে প্রশ্ন একটাই, দীপাবলির মরশুমে ফিরবে তো জলদাপাড়ার চেনা রূপ?

 

POST A COMMENT
Advertisement