scorecardresearch
 

Bangladesh Elections 2024: হাসিনার ফের বিপুল জয়, ভারতেরই সুবিধে হল?

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক মুন্সিয়ানার সঙ্গে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পেরেছেন। প্রথমত, বিএনপি ভোট বয়কট করলেও দেশের মোট ২৭টি রাজনৈতিক দল ভোটে অংশগ্রহণ করেছে। ১৯০০ জন প্রার্থী ছিল। ভোটে যাতে কোনও পক্ষ হিংসার ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভোটের কয়েকদিন আগে থেকেই অ্যাকশন মোডে চলে যায়।

Advertisement
Bangladesh Elections 2024 Bangladesh Elections 2024

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে আবার বিপুল জয়লাভের মাধ্যমে চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হলেন। রবিবার ৭ জানুয়ারি দিল্লিতে সন্ধের মধ্যে যখন খবর এল, ৩০০ আসনের মধ্যে ২০০ আসনে জিতে গেছে আওয়ামী লিগ, তখন ভারতের নর্থ ব্লক-সাউথ ব্লকে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বিএনপি-র মতো প্রধান বিরোধী দল ভোট বয়কট করেছে, ভোট পর্ব শুরু হওয়ার আগে থাকতেই বিএনপি ও জঙ্গি জামাত গোষ্ঠী হিংসার আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়েছে। ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সেই নাশকতামূলক কাজে সাধারণ মানুষের মৃত্যুও হয়। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভারতের প্রশাসনে এই উৎকণ্ঠা ছিল যাতে ভোটের দিন বড় রকমের কোন সন্ত্রাস না হয়ে যায়। যদি রবিবারের ভোট শান্তিপূর্ণ না হত, তাহলে বিদেশি শক্তি ও পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশের ভোটকে বাতিল করে দেওয়ার সুপারিশ করতে পারত। আর একবার ভোট রদ হয়ে গেলে আবার তদারকি সরকারের পরিচালনায় নতুন করে ভোট করার দাবি উঠত।

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক মুন্সিয়ানার সঙ্গে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পেরেছেন। প্রথমত, বিএনপি ভোট বয়কট করলেও দেশের মোট ২৭টি রাজনৈতিক দল ভোটে অংশগ্রহণ করেছে। ১৯০০ জন প্রার্থী ছিল। ভোটে যাতে কোনও পক্ষ হিংসার ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভোটের কয়েকদিন আগে থেকেই অ্যাকশন মোডে চলে যায়। এছাড়া আনসার ফোর্সকেও হাসিনা সরকার দেশে শান্তিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশেষ দায়িত্ব দেয়। এছাড়া পুলিশ ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন তো ছিলই। এর ফলে দেশের নানা প্রান্তে বিক্ষিপ্ত ভাবে হিংসার চেষ্টা হলেও তারা সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।

তবে ভোটের শতকরা পরিমাণ এবার শতকরা ৪০ ভাগ, ২০১৮ সালের ভোটে এই শতকরা পরিমাণ ছিল ৮০ ভাগ। হয়ত ভোটের শতকরা সংখ্যা আরও বেশি হলে তা আরও সন্তোষজনক হত ভারতের জন্য। শেখ হাসিনা এবার ভোটে দেশের ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক শাকিব আল হাসানকে প্রার্থী করেন, যেমন প্রার্থী করেন জনপ্রিয় ফিল্মস্টার ফিরদৌসকে। এও ছিল তার মাস্টার স্ট্রাটেজি। কারণ এ ধরনের জনপ্রিয় বাংলাদেশ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা হাসিনার সমর্থনে এগিয়ে এসে সাংসদ হয়েছেন তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

আরও পড়ুন

Advertisement

জয়লাভের পর শেখ হাসিনা আরও আক্রমণাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করেছেন বিএনপি-র বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, বিএনপি এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। তবে দেশের মানুষ আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। এটাই হল সবচেয়ে বড় কথা।

শেখ হাসিনার এখন বয়স হল ৭৬। তিনি গোপালগঞ্জের ৩ নম্বর আসন থেকে অষ্টম বারের জন্য জয়ী হলেন। ১৯৮৬ সাল থেকে তিনি গোপালগঞ্জে জিতে আসছেন। ২, ৪৯, ৯৬৫ ভোটে তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মহম্মদ নিজাম উদ্দিন লসকরকে পরাস্ত করেছেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নেতা মহম্মদ সুপ্রিম পার্টির নেতা মহম্মদ নিজাম উদ্দিন পেয়েছেন শুধু ৪৬৯ ভোট। বিএনপি-র অনুপস্থিতিতে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছে এরশাদের জাতীয় পার্টি। এই পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুর-৩ নম্বর আসন থেকে জিতেছেন।

তবে এবার ভোটের পরও বাংলাদেশে কীভাবে এগোবেন সেগুলি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালটি বড় তাৎপর্য। একদিকে যেমন বহু দেশে এ বছর ভোট আসন্ন। আবার অন্যদিকে এই ২০২৪ সালে চারদিকে যুদ্ধের আবহ। পৃথিবীর বহু রাষ্ট্র নানা ধরনের যুদ্ধের মধ্যে নিয়োজিত। আমেরিকা ও চিনের মধ্যেও বিরোধ বাড়ছে। বিশেষত তাইওয়ান-কে কেন্দ্র করে দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক টেনশন বাড়ছে। চিন আমেরিকার পাঁচটি প্রাইভেট প্রতিরক্ষামূলক কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাইওয়ান-কে এই কোম্পানি গুলো অস্ত্র বিক্রি করছিল। চিন এ ব্যাপারে সরাসরি প্রশ্ন তুলল।

এই প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এবারের বিপুল জয়ের পর শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত আমাদের পরীক্ষিত ঐতিহাসিক বন্ধু। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভারতের সমর্থনের প্রতি কৃতজ্ঞতা আজও বারবার জানান শেখ হাসিনা।

আজ মার্কিন-চিন সংঘাতের আবহে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে আরও মজবুত করা বিশেষ জরুরি। দিল্লির জে এন ইউ-য়ের বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ‘আমেরিকা-বাংলাদেশ ভিসা নীতি বদলাচ্ছে। আর্থিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের চিনের দিকে ঝোঁকার প্রবণতা বাড়তে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক ও সাবধান হতে হবে।’

শেখ হাসিনার এই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর বাংলাদেশে ড্রাগনের নিয়ন্ত্রণের বাড়বে না বলে ভারত আশাবাদী। বাংলাদেশের অর্থনীতি, বৃদ্ধির হার, উন্নয়নসূচক ইতিবাচক হলেও প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে। আমেরিকা এবং ইউরোপের কিছু রাষ্ট্র বারবার এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আবার পাকিস্তানে যতই মানবাধিকার লঙ্ঘন হোক, মালদ্বীপে বা মায়ানমারে হোক, তা নিয়ে আমেরিকার মাথাব্যাথা দেখি না।

ঢাকায় ডেভিড ওয়ার্নে এবার প্রথম থেকেই ছিলেন খুব সক্রিয়। ডেভিড ওয়ার্নের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এক বিশেষ টিম ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ডেভিড ওয়ার্নে আওয়ামী লীগের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ডেভিড ওয়ার্ন আওয়ামী লিগের প্রধান ওরাইদুল কাদেরকে বলেন, আমরা চাই, এ দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। বিরোধী দল বিএনপি ভোটে অংশ নিক। সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লিগ নেতৃত্ব আশ্বাস দেন, বাংলাদেশে আমরাও চাই বিএনপি সহ সকল দল ভোটে যোগ দিক। ভোট শান্তিপূর্ণই হবে। বিএনপি ভোট বয়কটের সিদ্ধন্ত থেকে সরে আসেনি কিন্তু আওয়ামী লিগ কথা রেখেছে। ভোটের দিন বড় কোনও অশান্তি হয়নি। বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা বিদেশি সাংবাদিক ছিলেন ঢাকা শহরে।

তবে এখন এই বিপুল জয়ের পর বাংলাদেশের কাছে হাসিনা গ্যারান্টি যেমন সুপ্রতিষ্ঠিত, তেমনই অনেক নতুন চ্যালেঞ্জেরও সামনে তিনি দাঁড়িয়ে।

Advertisement

Disclaimer: এই প্রতিবেদন প্রতিবেদকের নিজস্ব মত। bangla.aajtak.in এর দায় নিচ্ছে না।

Advertisement