scorecardresearch
 

Tathagata Roy: সমস্যাটা রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের, উপাচার্যরা দাবার বোড়ে

আমি দুটি বিজেপি-বিরোধী সরকার শাসিত রাজ্যে রাজ্যপাল থেকেছি, সেখানে সরকারের সঙ্গে অল্পবিস্তর সংঘাতও হয়েছে, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তার কোনওটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না।

Advertisement
তথাগত রায় তথাগত রায়

যেসব রাজ্যে কেন্দ্র-বিরোধী সরকার অধিষ্ঠিত সেই রাজ্যের নির্বাচিত সরকার ও রাষ্ট্রপতি-নিযুক্ত (বাস্তবে কেন্দ্রীয় সরকার-নিযুক্ত) রাজ্যপালের সংঘাত আজকের ভারতে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা এই সংঘাতের মধ্যে একটি বড় স্থান অধিকার করে আছে। আমি দুটি বিজেপি-বিরোধী সরকার শাসিত রাজ্যে রাজ্যপাল থেকেছি, সেখানে সরকারের সঙ্গে অল্পবিস্তর সংঘাতও হয়েছে, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তার কোনওটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না। আমি পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও একটি বিভাগীয় প্রধান হিসাবে অনেকদিন কাজ করেছি, সে হিসাবে ব্যাপারটা অন্যদিকে থেকেও দেখা আছে।

ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিল ইংরেজ। তখন বা তার অব্যবহিত পরে এরকম সংঘাতের ঘটনা ভাবা যেত না। তার পর আমাদের সংবিধান তৈরি হয়েছে, দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনাতেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে – অনেকের মতে একটু বেশিরকম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার ফলে মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় চালানোই কঠিন হয়ে ওঠে। বর্তমান কাঠামোতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি করে আইন আছে, তার মধ্যে রাজ্য-প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে এই আইন রাজ্যের বিধানসভায় পাস করা।

সাধারণত এই আইনের বিধান অনুযায়ী রাজ্যপাল হচ্ছেন পদাধিকারবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বা আচার্য; এবং ভাইস-চ্যান্সেলর বা উপাচার্য একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিযুক্ত হন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আচার্যের ভূমিকা অতি সীমিত, উপাচার্যই প্রতিষ্ঠানটিকে সামলান। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে নানা ব্যবস্থাপক সভা আছে, যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট, যাদবপুরের কোর্ট ও এগজিকিউটিভ কাউন্সিল, ইত্যাদি। এদের সকলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে হয়।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছ থেকে যা মাইনে বাবদ পাওয়া যায় তা অতি সামান্য, বিপুল খরচ রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউ জি সি) থেকে পাওয়া টাকা থেকেই নির্বাহ করতে হয়। সেখানে যদি রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারদ্বয়ের মধ্যে সংঘাত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত গড়ায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা আসতে বাধ্য। যে সব রাজ্যে সরকার রাজনীতির চাইতে প্রশাসনের উপর বেশি জোর দেয় (যেমন ওডিশা) সেখানে সমস্যা খুব গুরুতর না-ও হতে পারে। কিন্তু যেখানে রাজ্যের মূল সুরটিই হচ্ছে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক নয় (যেমন বামফ্রন্ট বা তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গ), সেখানে সমস্যা খুব গুরুতর হতে পারে।

Advertisement

এর চরম প্রকাশ আমরা দেখেছি পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট আমলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসাবে সন্তোষ ভট্টাচার্যের নিযুক্তিতে। সন্তোষবাবুকে সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় খুব নাকাল হতে হয়েছিল। কিন্তু সে সময়েও, আমার যতদূর জানা আছে, রাজ্য সরকার উপাচার্যের মাস মাইনেটা দিতে কার্পণ্য করে নি, এখন যেমন করছে বলে শুনছি । সমস্যাটা রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্র-নিযুক্ত রাজ্যপালের, এক্ষেত্রে উপাচার্যরা দাবা খেলার বোড়ে মাত্র। তাদের মাস মাইনে না দেওয়াটা নীচতা, ইতরামি, ছোঁচামি, বা তার থেকেও খারাপ কিছু হলে তা-ই। একে নিন্দা করার ভাষা আমার নেই।

Disclaimer: এই প্রতিবেদন লেখকের ব্যক্তিগত মত। bangla.aajtak.in এর দায় নিচ্ছে না।

Advertisement