Mahakumbh 2025: ১৪ ঘণ্টা গাড়িতে বসে আছি, এই অভিজ্ঞতা আমৃত্যু ভুলতে পারব না

কখনও ভাবিনি, এমন দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা হবে কুম্ভমেলায় গিয়ে! এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে মনে পড়লে। প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে মৌনী অমাবস্যার শাহি স্নানের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এক অপূর্ব ধর্মীয় আবহে গঙ্গায় স্নান করব, পুণ্য লাভ করব। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।

Advertisement
১৪ ঘণ্টা গাড়িতে বসে আছি, এই অভিজ্ঞতা আমৃত্যু ভুলতে পারব নাকুম্ভমেলার কথা শোনালেন কাটোয়ার চিকিৎসক।-ফাইল ছবি
হাইলাইটস
  • কখনও ভাবিনি, এমন দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা হবে কুম্ভমেলায় গিয়ে!
  • এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে মনে পড়লে। প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে মৌনী অমাবস্যার শাহি স্নানের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম।

কখনও ভাবিনি, এমন দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা হবে কুম্ভমেলায় গিয়ে! এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে মনে পড়লে। প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে মৌনী অমাবস্যার শাহি স্নানের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এক অপূর্ব ধর্মীয় আবহে গঙ্গায় স্নান করব, পুণ্য লাভ করব। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।

মঙ্গলবার রাত আড়াইটের দিকে একসঙ্গে প্রচুর মানুষ নদীর তীরে পৌঁছন। মাথায় ভারী মালপত্র নিয়ে অনেকেই এগোচ্ছিলেন, কিন্তু সামনে রাখা লোহার ডাস্টবিনের কারণে অনেকে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। তারপর যেন তাণ্ডব! মাটিতে পড়ে যাওয়া মানুষদের নিয়েই শুরু হল ধাক্কাধাক্কি, পায়ের নিচে পিষ্ট হতে লাগলেন তীর্থযাত্রীরা। ভিড়ের চাপে একের পর এক ব্যারিকেড ভেঙে পড়ল। প্রশাসন চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারল না। আমি এবং আমার সঙ্গীরা তখন স্রেফ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে! বরাতজোরে কিছুটা দূরে থাকায় পদপিষ্ট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছি।

ভোর চারটের দিকে যখন পদপিষ্ট হয়ে মানুষ মারা গেল, তখনই বোঝা গেল, প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে সবকিছু। এই ভয়াবহ ঘটনার পর প্রশাসন ত্রিবেণী সঙ্গম প্রায় ফাঁকা করে দেয়। কিন্তু সমস্যা তখনও শেষ হয়নি। বেরোনোর রাস্তা বলতে কিছুই নেই! গাড়ি নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু সেটি বের করতেই রাত পেরিয়ে গেল। মঙ্গলবার রাত থেকেই জাতীয় সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, ফলে কয়েক লক্ষ গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে। আমরাও আটকে পড়লাম। এলাহাবাদ যাওয়ার সব হাইওয়েতে তখন ১৫০-২০০ কিমি দীর্ঘ যানজট। আমাদের মনে তখন শুধু আতঙ্ক—এবার কী হবে?

গাড়িতে বসে কাটাতে হল ১৪ ঘণ্টা! জল নেই, খাবার নেই, শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। এক কাপ চায়ের দাম চাওয়া হচ্ছিল ২০ টাকা! মহিলারা আরও বিপদে, কারণ বাথরুম যাওয়ার সুযোগটুকুও নেই। আশপাশের কিছু তীর্থযাত্রী নিজেদের মতো করে রান্নার ব্যবস্থা করলেন। ক্ষেত থেকে আলু সংগ্রহ করে, ঘুঁটে জোগাড় করে কেউ কেউ উনুন জ্বালালেন। তবুও এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে খাবারের তেমন সংস্থান হয়নি।

Advertisement

সারারাত গাড়িতে বসে কাটিয়ে অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে কোনওরকমে জাতীয় সড়কে উঠতে পেরেছি। ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত, অবসন্ন শরীরে শুধু বাড়ি ফেরার অপেক্ষা। আশা করছি, রাত ১টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছব। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা আমৃত্যু ভুলতে পারব না!

কুম্ভমেলার মতো এত বড় আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রশাসনের আরও দক্ষতা, নিয়ন্ত্রণ, এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। মানুষ শুধু ভক্তি ও বিশ্বাস নিয়ে আসে, কিন্তু তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আশা করতেই পারে। এভাবে যদি অব্যবস্থাপনার শিকার হতে হয়, তবে ভবিষ্যতে মানুষ কীভাবে এই ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেবে?

এই বিভীষিকা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে যেন কুম্ভমেলা আরও সুসংগঠিত ও নিরাপদ হয়, সেটাই কামনা করি!

অনুলিখন-সুকমল শীল 


 

POST A COMMENT
Advertisement