scorecardresearch
 

কেন সরকারি কর্মীদের DA দিতে পারছে না রাজ্য, সমাধান কোথায়?

কিন্তু, কেন DA দিতে পারছে না সরকার? সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে একবার চোখ বোলালে। ২০২২-২৩ সালের বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজস্ব আদায় ২.২৬ লাখ কোটি টাকা। সেখানে ব্যয় ২.৬১ লাখ কোটি টাকা।

Advertisement
অর্থনীতিবিদ মহানন্দা কাঞ্জিলাল অর্থনীতিবিদ মহানন্দা কাঞ্জিলাল
হাইলাইটস
  • কেন DA দিতে পারছে না সরকার?
  • সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে একবার চোখ বোলালে

উচ্চ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ্যভাতা বা DA মেটায়নি রাজ্য। যার জেরে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। 

এর আগে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, ROPA Rules ২০০৯ অনুযায়ী DA দিতে হবে। কিন্তু, এখনও প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত রাজ্য সরকারি কর্মীরা। DA যে কোনও সরকারি কর্মীর অধিকার। বর্তমানে প্রতিটি নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। যা দেশেরও এক সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মীদের  DA দেওয়া প্রয়োজনীয় বলে হাইকোর্ট মনে করেছে। 

কিন্তু, কেন DA দিতে পারছে না সরকার? সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার দিকে একবার চোখ বোলালে। ২০২২-২৩ সালের বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজস্ব আদায় ২.২৬ লাখ কোটি টাকা। সেখানে ব্যয় ২.৬১ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের থেকে খরচ বেশি। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সরকারি ঋণ GSDP-র ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে ঋণটা নেয় তার অঙ্কটা সমানে বেড়ে চলেছে। ২০২১ সালে এই ঋণের অঙ্কটা ছিল ৪.৮২ ট্রিলিয়ন সেটাই ২০২১ সালে বেড়ে হতে পারে ৫.৮৬ ট্রিলিয়ন। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঋণের বোঝা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ভারতবর্ষের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিটাও  এক্ষেত্রে আলাদা উল্লেখ করা প্রয়োজন। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে ১৯৮০ সালে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ২৫ টা রাজ্যের মধ্যে ছিল সপ্তম। সেখানে ২০১৮-১৯ সালে ২৯ টার মধ্যে এই রাজ্যের স্থান ২১। আবার FRBM অ্যাক্ট অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ঋণ নিতে পারে একটা রাজ্য। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সেই সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। ফলে বোঝা যাচ্ছে, ঋণের বোঝা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক সমস্যার আর একটা বড় কারণ। আবার সুদও সব থেকে বেশি গুণতে হয় (দেশের বাকি রাজ্যগুলোর তুলনায়) পশ্চিমবঙ্গ ও পঞ্জাবকে। সম্ভবত এই কারণেই সরকারের রাজকোষে ঘাটতি। 

Advertisement

এছাড়াও বছরভর পশ্চিমবঙ্গ সরকার কন্যাশ্রীর মতো আরও অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালায়। রাজ্য সরকারের কর্মীদের বেতন দিতে গিয়েও বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ হয়। তাই DA দিতে গেলে অর্থভাণ্ডারে চাপ পড়বে সেটাই খুব স্বাভাবিক। 

রাজ্য সরকার উন্নয়নমূলক প্রকল্প জারি রাখুক।  তাতে কোনও অসুবিধে নেই। তবে আয় বুঝে ব্যয়ও জরুরি। যদি সেটা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সরকারকেই এক সময় চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়তে হবে। তাই উপার্জন বাড়ানোর উপায় সরকারকে এখন থেকেই দেখতে হবে। 

এই রাজ্যে ভারী শিল্প সেই অর্থে নেই বললেই চলে। পাট, চা কিছু শিল্প আছে ঠিকই তবে শিল্পায়নে আরও জোর দেওয়া দরকার। তবেই উপার্জন আসবে, খরচের ক্ষমতা বাড়বে। বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করতে গিয়ে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের উন্নতিতে ব্যাঘাত ঘটছে। বিশেষ করে কৃষিতে। দেশে এখনও ভালো জায়গায় রয়েছে এই রাজ্যের কৃষি ব্যবস্থা। তাই সেদিকে সরকারের আরও নজর দেওয়া দরকার। রাজ্যে শিল্পায়ন, কৃষিকাজে আরও জোর দেওয়া এইগুলো যদি সরকার সাফল্যের সঙ্গে করতে সক্ষম হয় তাহলে DA বা ওই ধরনের যে সমস্যাগুলো অর্থনৈতিক কারণে ঝুলে রয়েছে, সেগুলো মিটে যাবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই বক্তব্যের দায় কোনওভাবেই প্রতিষ্ঠানের নয়। লেখিকার একান্তই ব্যক্তিগত মত। 

Advertisement