আর দিন দুয়েক পর পঞ্চায়েত ভোট। মনোনয়ন পর্ব থেকে যে রক্ত ও মৃত্যু ঘটনা শুরু হয়েছিল, তা এখনও চলছে। ভোটের দিন আরও কী হতে পারে, তা নিয়েও রীতিমতো আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এবার উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় গাংহাটি গ্রামে গুলিতে মৃত্যু হল এক নাবালকের। মৃতের নাম ইমরান হাসান। বয়স ১৭। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের একটি মিছিলে যোগ দিয়েছিল ইমরান। রাতে তার উপরে হামলা চালানো হয়। গুলি, বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় একাদশ শ্রেণির ইমরানের। জানা গিয়েছে, ইমরানের কাকাও তৃণমূলের সমর্থক। তৃণমূলের অভিযোগ, ইমরানকে খুন করেছে আইএসএফ ও সিপিআইএম। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ইমরানের বাড়িতে ভাঙচুরও চালানো হয়েছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
মিছিল লক্ষ্য করে বোমা, গুলি
দেগঙ্গার শোয়াইসেতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গাংহাটি গ্রামে মিছিল করে যাচ্ছিলেন তৃণমূল সমর্থকেরা। অভিযোগ, সেই মিছিলকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয় ১৭ বছরের নাবালক ইমরান। তাকে দেগঙ্গা ব্লকের বিশ্বনাথপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মহম্মদ হালিম মণ্ডলের কথায়, 'আমরা মিছিল করে যাচ্ছিলাম। জাহাঙ্গির গাজির নামে এক ব্যক্তির বাড়ির ছাদের উপর থেকে বোমা মারে। এরা সকলেই সিপিএমের লোক সঙ্গে আইএসএফের মদত আছে। ওই মিছিলের উপর বোম মারার ফলে বাচ্চাটা সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যায় ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। আমরা তখন ওই বাচ্চার লাশ নিয়ে ফিরে আসছি তখন ফের একবার আমাদের লক্ষ্য করে বোমা ছাড়া হয়। তার মধ্যে মিছিলে দুটো মারে।'
রাজীব সিনহাকে সিল করা চিঠি রাজ্যপালের
তৃণমূল এবং আইএসএফ সংঘর্ষে মঙ্গলবার উত্তপ্ত হয় উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার চাকলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাও। পঞ্চায়েতের ২৩০ এবং ২০৯ নম্বর বুথ এলাকায় দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জনের আহত হয়েছে বলে খবর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। নামানো হয় র্যাফও। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে হিংসার জেরে মঙ্গলবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাকে রাজভবনে তলব করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু রাজীব সিনহা যাননি। যার নির্যাস, একটি সিল খামে চিঠি রাজীব সিনহাকে পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। রাজ্যে কোথায় কেমন হিংসা, কী পরিস্থিতি, তা বিস্তারিত রয়েছে ওই চিঠিতে।
গত ১৬ জুন ডায়মন্ড হারবারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'উত্তরপ্রদেশে, ত্রিপুরায় তো ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মনোনয়নই জমা দিতে দেওয়া হয় না। পকসো কেসেও অ্যারেস্ট হয় না। এখানে বিধানসভা ভোটের পরে নির্বাচন কমিশনের অধীনে আইনশৃঙ্খলা থাকার সময়ও যে মৃত্যু হয়েছে তাঁর জন্যও আমাদের ছেলেদের অ্যারেস্ট করেছে। ১৫৫টি সেন্ট্রাল টিম পাঠানো হয়েছে। কোথাও মারছে, কোথাও কাটছে। কোর্টে গিয়েও খুন করে দিয়ে আসছে। দানবের রাজত্ব চলছে। কিন্তু সেখানে নক্কারজনক কয়েকটা রাজনৈতিক দল, যাদের নাম বলতে আমার ঘৃণা হয়। যারা মানুষকে খুন করত। নন্দীগ্রামে এখনও খুঁজলে হয়তো মৃতদেহ পাওয়া যাবে। হাত কাটত, পা কাটত, মুন্ডু কাটত, কাউকে নমিনেশন ফাইল করতে দেওয়া হত না। ১০০-এ ১০০ ভোট পেত, আর আজ তারা গলা উঁচিয়ে বড় বড় কথা বলছে। ওরা নাকি প্রতিরোধ করবে। হ্যাঁ, নিজেদের কথা প্রতিরোধ করুন। শুভ শক্তির উদয় হোক। নাহলে জানবেন এক হাতে তালি বাজে না।'