পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ইন্ডিয়া টুডেকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে একথা জানিয়েছেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, 'বাংলায় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। ১৫ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে। ৬১ হাজার বুথের মধ্যে ২০ হাজার বুথে ভোটে কারচুপি হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগসাজশে এই নির্বাচনকে ধ্বংস করেছে নির্বাচন কমিশন।'
শনিবার সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর থেকেই জায়গায় জায়গায় অশান্তি শুরু হয়। মানুষকে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বোমাবাজি, গুলি চালানোর মতো ঘটনা ঘটে। ভোট ঘিরে এখনও পর্যন্ত ১৩ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। অনেক জায়গায় ব্যালট পেপার লুট হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ব্যালট পেপারে। কোথাও জল ঢেলে ব্যালট নষ্ট করা হয়। কোচবিহারে এক যুবক ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই ছবি সামনে আসে। জেলায় জেলায় অশান্তি নিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, 'বাংলা এখন জ্বলছে। পরিস্থিতি খুবই সংবেদনশীল। বিজেপি বাংলায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চায়। আমরা আইনি ও রাজনৈতিকভাবে লড়াই করছি শুভেন্দু।'
কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সকাল থেকেই বহু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকার অভিযোগ উঠেছে। যদিও রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অশান্তির জন্য ঘুরিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকেই দুষলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা (Rajiva Sinha)। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনী দেরিতে এসেছে, না হলে এই সমস্যা হত না। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে নাকি অশান্ত হয়েছে, সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে কিছু হিংসার অভিযোগ এসেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে নানা অভিযোগ এসেছে। সেগুলির সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই যাচাই করে দরকার পড়লে পুনর্নির্বাচন হবে। নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে বুথ ছেড়ে বেরনো যাবে না। এমন কাজ ভোটকর্মীরা করলে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর হবে।'
সমস্ত ভোট কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন মোতায়েন হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, 'আজ আবার CAPF-কে ডেকে আমরা মিটিং করেছি। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৬০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল। কিন্তু আমরা জেলাশাসক এবং এসপি-কে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে সব ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। কয়েকটা স্থানে বাহিনী পাঠাতে সমস্যা হয়েছে। হয় তো গাড়ির ব্যবস্থা করতে সমস্যা হয়েছে। তবে যত কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে, সবাইকেই মোতায়েন করা হয়েছে।'
পাল্টা বিরোধী দলনেতা বলেছেন, 'কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল। রাজ্য সরকার তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। কিন্তু শীর্ষ আদালত কঠোর পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিনা খরচে আধাসামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার তাদের ব্যবহারও করেনি! রাজ্য সরকার প্রকৃতপক্ষে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া হয়নি। তারা এই নির্বাচন নিয়ে প্রহসন করেছে। টিএমসি পঞ্চায়েতগুলি দখল করার জন্য হিংসতা চালিয়েছে, যাতে তারা প্রধানমন্ত্রী মোদী দ্বারা বাংলায় পাঠানো সমস্ত কেন্দ্রীয় তহবিলের অপব্যবহার করতে পারে।'