অনেকের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোট এলেই শুরু হয় হানাহানি। এটাই রাজ্যের চেনা ছবি। খুন-জখম, অশান্তির খবর মেলে রাজ্যের একাধির জায়গা থেকে। প্রশ্ন জাগে, নির্বাচনে জিতে পঞ্চায়েত দখল করার এত প্রতিযোগিতা কেন, কী এমন রয়েছে পঞ্চায়েতে? কীসের টানে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিরা পঞ্চায়েত দখল করতে বদ্ধ পরিকর। পঞ্চায়েত দফতরের একটি সূত্রে খবর, রাজ্যে মোট ৪৮৬৪৯ জন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য রয়েছেন। ৯২১৭ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। জেলা পরিষদের সদস্য রয়েছেন ৮২৫ জন।
পঞ্চায়েতে কার কত বেতন?
২০১৯ সালের পর জেলা পরিষদের সভাধিপতিদের মাসিক ভাতা পান ৯ হাজার টাকা। সহকারী সভাধিপতিরা পান ৮ হাজার টাকা। কর্মাধ্যক্ষরা মাসিক ভাতা পান ৭ হাজার টাকা, অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষরাও ৭ হাজার টাকা পান। জেলা পরিষদের সাধারণ সদস্যদের মাসিক ভাতা ২০১৯ সালে দেড় হাজার থেকে এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার টাকা।
পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে সভাপতি পান ৬ হাজার টাকা, সহকারী সভাপতি ৫ হাজার ৫০০ টাকা, কর্মাধ্যক্ষরা পান ৫ হাজার টাকা, পঞ্চায়েত সদস্যরা পান, ৩ হাজার ৭০০ টাকা। পঞ্চায়েত প্রধানরা ৫ হাজার টাকা পান, উপপ্রধানরা পান ৪ হাজার টাকা, সদস্যরা পান ৩ হাজার টাকা। পাশাপাশি তাঁরা সামান্য টাকা TA পান (যাতায়াত বাবদ ভাতা)। টাকার অঙ্ক দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এরপরেও কী করে পঞ্চায়েতের নেতাদের আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে।
উন্নয়নে কত টাকা পায় পঞ্চায়েতগুলো
পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে খবর, বছরে এক একটি পঞ্চায়েতের হাতে যায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। আর একজন পঞ্চায়েত নিজের হাতে খরচ করেন প্রায় ২ কোটি টাকা। বিভিন্ন খাতে পঞ্চায়েতে অর্থ আসে। যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে একশো দিনের কাজ, বিভিন্ন ধরনের ভাতা, বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকা, চতুর্দশ অর্থ কমিশন, বাড়ি তৈরির টাকা, জল ও বিদ্যুতের টাকা।
পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত পাঁচ বছরে রাজ্যের ৩৩৪৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রায় ৫৯ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা পেয়েছে। এক একটি প়ঞ্চায়েতের নিরিখে যা পাঁচ বছরে প্রায় ১৭.৭১ কোটি টাকা। আর বছরের নিরিখে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। যার মধ্যে পঞ্চায়েত প্রধানের হাত দিয়ে খরচ হয় প্রায় দু-কোটি টাকা।
জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত— রাজ্যে এই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জন্ম ১৯৭৮ সালে। কিন্তু সেই থেকেই লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায়। প্রতি বছর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা পায় পঞ্চায়েতগুলো। তাতে গ্রামীণ উন্নয়নের বহু কাজ হয় ঠিকই। কিন্তু একই সঙ্গে কত টাকা যে বেহাত হয়ে যায়, তার হিসেব নেই। প্রশাসনের একাংশই বলছে, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরেও ছেদ পড়েনি দুর্নীতিতে।