Century-Old Advertisement by British Government: বাঙালির আড্ডার সঙ্গে চায়ের সম্পর্কটা যে বেশ নিবীড়, এ কথা মানবেন অনেকেই। কফি হাউসের আড্ডা জমে ওঠার অনেক আগে থেকেই পুরনো কলকাতার বাড়ির বৈঠকখানায়, রকে বসা চায়ের আড্ডায় ইতিহাস থেকে বিজ্ঞান, ধর্ম থেকে রাজনীতি— সব কিছুরই চর্চা হতো সকাল-সন্ধে।
বাঙালির সঙ্গে চায়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠার ইতিহাস এখনও জানান দেয় দমদম রেল স্টেশনের একটি বিজ্ঞাপন। লোকাল ট্রেনে যাঁরা নিয়মিত ভিড় ঠেলে দমদম স্টেশন ছুঁয়ে যাতায়াত করেন, তাঁরা অনেকেই হয়তো দেখেছেন এই বিজ্ঞাপনটি, কিন্তু হয়তো জানেন না এর পেছনের ইতিহাস।
অনেকে হয়তো শতাব্দী প্রাচীন এই বিজ্ঞাপনটি খেয়ালও করেননি। এক শতাব্দী পার করে ব্রিটিশ আমলের একটি চায়ের বিজ্ঞাপন আজও রয়েছে দমদম রেল স্টেশনে! স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের একটি চায়ের দোকানের সঙ্গেই রয়েছে শতবর্ষ প্রাচীন এই বিজ্ঞাপনটি।
এই বিজ্ঞাপন দেখলেই বোঝা যায় যে চায়ের সঙ্গে বাঙালির এই সম্পর্কটা এক-দেড়শো বছর আগে এতটা নিবীড় ছিল না। চা আর বাঙালির সম্পর্ক গড়ে তোলে ব্রিটিশরা। এর পিছনেও ছিল ব্রিটিশদের ব্যবসায়ীক ফন্দি!
এ দেশের ব্রিটিশদের চায়ের কারবার বাড়়াতেই একশো বছরেরও বেশি আগে চা পানের গুরুত্ব বোঝাতে দমদম রেল স্টেশন সহ বিভিন্ন জায়গায় সে সময় এই বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। এ বার এই বিজ্ঞাপনের ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক...
১৮৯২ সালে চায়ের উৎপাদন, ব্যবসা ও তার রপ্তানির জন্য ‘অসম বেঙ্গল রেলওয়ে’র পক্ষ থেকে রেল লাইন পাতার কাজ শুরু হয়। অবিভক্ত বাংলার কুমিল্লা (বর্তমানে বাংলাদেশের একটি জেলা-মহানগরী) থেকে শুরু করে ওই রেল লাইন পাতা হয়েছিল তিনসুকিয়া, গুয়াহাটির দিকে।
সে সময় চা বাগানে কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক বিহার আর অসম থেকে সস্তায় নিয়োগ করা হতো। একটা সময়ের পর মালিক শ্রেণির অমানসিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একজোটে প্রতিবাদে সামিল হয় কয়েকশো চা বাগান শ্রমিক। বাগান শ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলনে ব্রিটিশদের চায়ের ব্যবসা প্রায় লাটে ওঠে, মাথায় হাত চা বাগানের মালিকদের!
এর পর বন্দুকের জোরে চা বাগানের শ্রমিকদের আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে ব্রিটিশরা। ১৯২১ সালে, অবিভক্ত বাংলার পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরের গোয়ালন্দ স্টিমার ঘাটে (Goalandaghat, Bangladesh) আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলিও চালায় ব্রিটিশরা।
শ্রমিকদের উপর গুলি চালানোয় যেন এই আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়! শ্রমিকদের আন্দোলনের চোটে চায়ের ব্যবসা যখন প্রায় লাটে উঠতে বসেছে, তখন চা বাগানের মালিকদের এই বিজ্ঞাপনটি দেওয়ার কথা মাথায় আসে।
এই বিজ্ঞাপনে সে সময় লেখা হয়েছিল, ‘চা খেলে কমবে মানসিক অবসাদ, কলেরা বা ম্যালেরিয়ার মতো সমস্যা’। আসলে বিক্রি বাড়াতে চা-কে বিজ্ঞাপনে ‘সর্বগুণ সম্পন্ন’ ওষুধ হিসেবে বিজ্ঞাপিত করা হয়েছিল। চা খেলে যে কলেরা, ম্যালেরিয়ার মতো অসুখ যে সারে না তা যতদিনে বাঙালি বুঝেছে, ততদিনে তাদের আড্ডার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে।