স্পেসেক্সের CEO এলন মাস্ক জানিয়েছেন যে ২০৫০ এর মধ্যে মঙ্গল গ্রহে ১০ লক্ষ লোক এর শহর দেখতে চান। এক পৃথিবী তৈরি করার বা জনবসতি গড়ে তোলার কথা বলা অনেক সহজ মনে হয়। কিন্তু এ কাজ সহজ নয়। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, যে কোনও অন্য গ্রহে মানুষের বস্তি তৈরি হবে কবে? এটা কি আদৌ সম্ভব? সৌরমন্ডলের বাইরে কোনও গ্রহে কি মানুষ এর কলোনি তৈরি করা যাবে?
এই প্রশ্নের জবাব এর উপর নির্ভর করে যে, আপনি কোন গ্রহে যেতে চান? চলুন কথা বলি মঙ্গল গ্রহ নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ এর ডেপুটি ডিরেক্টর সার্কেন সিডান জানিয়েছেন যে লাল গ্রহের উপর মানুষের বসতি আগামী কয়েক দশকের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। তাঁর দাবি যে ২০৫০ সালের মধ্যে মানুষ মঙ্গল গ্রহে জনবসতি গড়ে তুলতে পারবে। সিডান জানিয়েছেন যে মঙ্গল গ্রহের উপর কলোনি তৈরি করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জল এবং এটি মঙ্গল গ্রহে মজুত থাকা বরফ থেকে হাইড্রেট খনিজ এর মাধ্যমে বের করে দেওয়া সম্ভব। জলের উপস্থিতিতে চাষাবাদ হয়ে যাবে। সেখানে মঙ্গল গ্রহে বসবাসকারীদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এছাড়া বরফের মধ্য থেকে হাইড্রোজেন বের করে সেটিকে রকেটের জন্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
এত তাড়াতাড়ি কলোনি তৈরি করা যাবে না
এত তাড়াতাড়ি কলোনি তৈরি করা যাবে না বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু প্রত্যেক বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টিতে একমত তা করা যাবে। দ্য প্লানেটারি সোসাইটির সহ সংস্থাপক এবং অ্যাস্ট্রোনটিক্স ইঞ্জিনিয়ার লুই ট্রেডম্যান বলেছেন যে এত সহজে এটি হবে না, যে আপনি মঙ্গল গ্রহে আগামী ২৭ বছরের মধ্যে কলোনি তৈরি করে ফেলবেন। এ ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডার নিউরো সাইন্টিস্ট রাসেল সিডলার বলেছেন যে কলোনি তো হবেই। কিন্তু এত দ্রুত এটি করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।
চিন এবং আমেরিকা খুব দ্রুত তৈরি করছে
চিনের তরফে এই প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া হয়েছে। আমেরিকার তরফেও প্রস্তুতি চলছে। চিন মঙ্গল গ্রহে মানুষকে ২০৩৩ এ পাঠাবে। যেখানে নাসার প্ল্যানিং রয়েছে। ২০৩০ সাল থেকে ২০৪০ এর মধ্যে তারা মানুষকে মঙ্গল গ্রহে পাঠাবেন। একবার মানুষ মঙ্গল গ্রহে পৌঁছে গেলে পরবর্তী স্টেজে এভাবে কলোনি তৈরি করা সম্ভব। মঙ্গল গ্রহে পৌঁছে গেলেও পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে শেষ হবে না।
খনিজ ছাড়া কলোনি অসম্ভব
সার্কেন সিডান বলেছেন যে বেশিরভাগ যন্ত্র-উপকরণ পৃথিবী থেকেই মঙ্গল গ্রহে পাঠানো হবে। এখন মঙ্গল গ্রহের পর ট্রাক তৈরি করা তো সম্ভব নয়। মঙ্গল গ্রহের মাটিতে এটি মুশকিল। মঙ্গল গ্রহের উপর কিছু তৈরি করা, উৎপাদন করা বা লম্বা সময়ের জন্য কলোনি বানানো একটা ব্যয়বহুল প্রজেক্ট হবে. সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো মঙ্গল গ্রহে খনিজ বের করা। খনিজ ছাড়া এই কলোনি বানানো অসম্ভব।
এ কারণে মঙ্গল গ্রহে থাকা মুশকিল
একটা বিষয়ে তো পরিষ্কার যে মানুষের জন্য মঙ্গল গ্রহে কলোনি তৈরি করা আপাতত উপযুক্ত সময় নয়। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ৯৫% কার্বন-ডাই-অক্সাইড। অর্থাৎ এখানে ঠান্ডা খুব বেশি। গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬০°সেলসিয়াস থাকে। সঙ্গে মঙ্গলে পৌঁছানোর জন্য কমপক্ষে সাড়ে আট মাস লাগে। এছাড়া মঙ্গল গ্রহে রেডিয়েশন এর সমস্যা অত্যন্ত বেশি।
এর মানে হল যে, মঙ্গল গ্রহে মানুষের নতুন কলোনির জন্য একদম উপযুক্ত নয়। এ কারণে মানুষ সৌর মন্ডলের বাইরে কোন জায়গায় থাকার যোগ্য বা ওই ধরনের কিছু খোঁজ করতে হবে। এর সঙ্গে সমস্যা হল যে এগুলি অত্যন্ত দূরে। এখন পর্যন্ত মানুষ কোনও বাইরের গ্রহতে নিজেদের স্পেসক্রাফট পাঠায়নি। নাসা দ্বারা পাঠানো ভয়েজার ওয়ান এবং ভয়েজার টু সৌর মন্ডলের বাইরে যেতে ৩৫ এবং ৪১ বছর লেগেছে। তাহলে ভাবুন যে বাইরে আসা যাওয়া করতে কত সময় লাগবে।
বর্তমান প্রযুক্তিতে কলোনি বানানো সম্ভব নয়
ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অফ ব্ল্যাক এসট্রপিজিসসিস্ট ফ্রেডেরিক বলেছেন যে বর্তমানে যে প্রযুক্তি চালু রয়েছে তার মাধ্যমে কোনও আশপাশের এক্সপ্লানেটে যাওয়ার জন্য হাজার বছর লেগে যাবে। এ কারণে কোনও বাইরের গ্রহতে কলোনি বানানো আপাতত মুশকিল। ভবিষ্যতে এটি সম্ভব হতে পারে যদি, মানুষ দ্রুতগতিতে চলা স্পেসক্রাফট তৈরি করে ফেলতে পারে। ফ্রেডিক বলেছেন যে আমরা মানুষ প্রত্যেক বছরে নিজেদের গতির প্রায় দশগুণ বাড়াতে পারি। এই হিসাবে কোন কাছের গ্রহে এবং কলোনি বানাতে কমপক্ষে পাঁচশো বছর লাগবে। এত লম্বা যাত্রা করার জন্য কোন স্পেসক্রাফট তৈরি করতে হবে। যার মধ্যে মানুষ কয়েক প্রজন্ম সেখানেই প্রজনন করতে হবে এবং সংসার করতে হবে। পাঁচ-ছয় পুরুষ পর ওই স্পেস গিয়ে পৌঁছাবে ঐ এক্সপ্লানেটে। শুধু তাই নয় ওই স্পেস এর ভেতরেই পরবর্তী প্রজন্মকে একই বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে যেতে হবে। তখন গিয়ে তারা অন্য এক্সপ্লানেটসে পৌঁছতে পারবে।