মহানায়কের সঙ্গে প্রেম ছিল? উত্তরে অকপটে স্বীকার করেছিলেন, ছিল। অমন ক্যারিশম্যাটিক মানুষের প্রেমে না পড়ে উপায় আছে! কিন্তু তিনি কারও ঘর ভাঙতে চাননি।
তবে নিজের ঘরও তো বাঁধতে পারলেন না। আজীবন অবিবাহিত জীবন কাটিয়ে গেলেন। ঘর ভাঙা নিয়ে মহানায়কের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদও হয়েছিল। চাইলেই ভালোবাসার অধিকারে মহানায়কের ভাগ দাবি করতে পারতেন বাংলার তথা দেশের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কোনও দিন করেননি। তাঁর ক্ষেত্রে মান্না দে-র গাওয়া একটি গানের লাইন ভীষণ ভাবে প্রযোজ্য, 'বলো রাধা হতে পারে ক'জনায়...'
জন্ম বাংলাদেশের কুমিল্লার কমলাপুর গ্রামে। ১০ ভাইবোনের মধ্যে সাবিত্রী ছিলেন সবার ছোট। দেশভাগের পর তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ছিলেন টালিগঞ্জে এক দিদির বাড়িতে। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর অভিনয় জীবন।
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ছিলেন মঞ্চের অভিনেত্রী। ছিলেন স্টার থিয়েটারের সদস্য। চলচ্চিত্রে তাঁর প্রথম ছবি ‘সহযাত্রী’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫১ সালে। এই ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন উত্তমকুমার ও ভারতী দেবী। পরিচালনা করেছেন অগ্রদূত। এর পর পেরিয়ে গেছে ৬৮ বছর। পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত তিনি অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন।
উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন ছিল, তা নিয়ে সাবিত্রী বলেন, 'আমার অনেক সম্বন্ধই ভেঙে দিয়েছিলেন মহানায়ক উত্তমকুমার।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার জীবনে কখনো প্রেম আসেনি, তা নয়; কিন্তু উত্তমকুমার আমার অনেক সম্বন্ধ ভেঙে দেন। উত্তমকুমার বরাবরই আমার প্রতি পজিটিভ ছিলেন। আমি কখনো চাইনি, কেউ সংসার ভেঙে আমার কাছে চলে আসুক। আমার কপালে যদি বিবাহিত পুরুষ জোটে, তবে কী করব? ভালোবাসব না? তবে উত্তমকুমারকে পাইনি বলে বিয়ে করিনি, তেমনটা নয়। বন্ধু অনেক ছিলেন। সবাই ছিলেন বিবাহিত। আর আমি কারও ঘর ভাঙতে চাইনি।’
‘বিয়ে হয়নি, তাই বলে কোনও আফসোস নেই। কারণ, আমার দিদির ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছি। ওরা আমাকে খুব ভালোবাসে। ডাকলে চলে আসে। ওদের সবার তো সংসার আছে। তবে এটা ঠিক, এত বড় বাড়িতে থাকতে সত্যিই একা লাগে।’
প্রখ্যাত অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে মঞ্চে নিয়ে আসেন। তারপর সুযোগ পেয়ে যান চলচ্চিত্রে। তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘পাশের বাড়ি’, ‘রাতভোর’, ‘উপহার’, ‘অভয়ের বিয়ে’, ‘নূপুর’, ‘গলি থেকে রাজপথ’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘কুহক’, ‘বধূ’, ‘ভ্রান্তি বিলাস’, ‘উত্তরায়ণ’, ‘জয়া’, ‘কাল তুমি আলেয়া’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘মাল্যদান’। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করেছেন।
নাটকের মাধ্যমেই অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। তারপর ১৯৫১ সালে রুপোলি পর্দায় সুযোগ পান। ছবি ‘সহযাত্রী’। প্রথম উত্তম কুমারের পার্শ্ব নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রথম দেখাতেই মহানায়কে ভালোবেসে ফেলেন অভিনেত্রী। আসলে উত্তম কুমার এমন একজন মানুষ যাকে না ভালোবেসে থাকা যায় না।
আপনার সঙ্গে উত্তমকুমারের প্রেম ছিল? সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘তা ছিল তো খানিকটা। তবে রটনাটা বেশি ছিল। আসলটা কম। তখন শোনা গিয়েছিল, তিনি আমাকে বিয়ে করে বালিগঞ্জে বাড়ি ভাড়া করে আছেন। তখন এ খবর নিয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছিল। আসলে সেসব কিছুই হয়নি। আর তারপর থেকে আমার জীবনে আরও ট্র্যাজেডি নেমে আসে। ওসব নিয়ে এখন আর বলতে চাই না।’
গৌরীদেবীর সঙ্গে মহানায়কের সংসার ভেঙে যাওয়াতে বড় কষ্ট পেয়েছিলেন সাবিত্রী দেবী। আশির দশকে যে দিন মহানায়ক মারা যান, ভীষণ ভেঙ্গে পড়ছিলেন সাবিত্রী দেবী। তার পর থেকে অভিনয় করা অনেক কমিয়ে দিয়েছিলেন।