scorecardresearch
 

আম তুমি কার? চার দশকের এই ঠান্ডা লড়াই আজও টাটকা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে

১৯৮১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ও রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডিকে 'তৌফা' হিসেবে এক ঝুড়ি আম পাঠিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল একটি বিশেষ বার্তা। ওই আমই নাকি তাঁদের দেশের সেরা আম।

Advertisement
আম তুমি কার? আম তুমি কার?
হাইলাইটস
  • আম নিয়ে যেমন আম চাষীদের সমস্যা কম নয়
  • তেমনই 'আম-আদমি'-রও কৌতুহল রয়েছে চূড়ান্ত
  • ন্যদিকে, আম চাষীদের সমস্যা হল কখনই তাঁরা হাসিমুখে থাকতে পারেন না

আম(Mango) নিয়ে যেমন আম চাষীদের সমস্যা কম নয়, তেমনই 'আম-আদমি'-রও কৌতুহল রয়েছে চূড়ান্ত। কোন আম কোন রাজ্যের? কী করে সেই নামকরণ করা হল? নানাবিধ প্রশ্ন! অন্যদিকে, আম চাষীদের সমস্যা হল কখনই তাঁরা হাসিমুখে থাকতে পারেন না। কোনও বছর ফলন এতোটাই কম যে চাহিদা অনুসারে জোগান দেওয়া যায় না। আবার কোনও বছর জোগান এতোটাই ভাল যে, দাম আর ওঠে না তাঁদের। ফলে, ফি বছর আম নিয়ে সমস্যা লেগেই থাকে। কিন্তু জানেন কি এই আম নিয়েই গত ৪০ বছর ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে একটা চাপানউতর রয়েছে? দুই দেশের কেউই নিজেদের কৃতিত্ব ছাড়তে নারাজ! ফলে, ১৯৮১ সাল থেকে চলে আসা এই বিবাদের সুরাহা আজও হল না। আদৌ হবে কি না জানা নেই...   

৪ দশকের ঠান্ডা লড়াই-

সীমান্ত চুক্তি থেকে কাশ্মীর(Kashmir) নিয়ে সংঘর্ষ, সিয়াচেন থেকে পরমাণু অস্ত্র সম্ভার, একগুচ্ছ সমস্যা নিয়ে ভারত(India) ও পাকিস্তানের(Pakistan) মধ্যে স্বাধীনতার পর থেকেই রয়েছে নানা মতবিরোধ। সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মাঝে মাঝেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। কখনও তা যুদ্ধ পর্যন্ত গড়িয়েছে, আবার কখনও উষ্কানির পর্যায়েই প্রশমিত করা হয়েছে। তবে এত কিছু ছাড়াও দু'দেশের মধ্যে আরও একটি কারণ নিয়ে যে বিবাদ রয়েছে তা কিন্তু অনেকেরই জানা নেই। যদিও বিষয়টি অত্যন্ত তুচ্ছ! তবুও, তা রাজনৈতিক সংঘাত থেকে কূটনৈতিক স্তর পর্যন্ত ঠান্ডা লড়াইয়ের রূপ নিয়েছে কার্যত ৪ দশক ধরে।

পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া-উল-হক (ফাইল ছবি)
পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া-উল-হক (ফাইল ছবি)

জানা যায়, ১৯৮১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক(Zia-Ul_Haq) ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ও রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডিকে 'তৌফা' হিসেবে এক ঝুড়ি আম পাঠিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল একটি বিশেষ বার্তা। ওই আমই নাকি তাঁদের দেশের সেরা আম। এদিকে, সেই আম খেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন ইন্দিরা গান্ধী(Indira Gandhi) ও রাষ্ট্রপতি রেড্ডি। 'রাতাউল'(Rataul) নামে সেই আমের প্রশংসা করে জিয়াউল হককে সেই সময় একটি খোলা চিঠি পাঠান ইন্দিরা গান্ধী। তাতে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে বলেন, '' এবার থেকে ওই আম শুধু পাকিস্তানেই ফলবে।''

Advertisement
রাতাউল আম
রাতাউল আম

শুরু হল বিভ্রান্তি-

ব্যাস সেখানেই বিপদ ঘটে যায়। খবর বাইরে আসতেই উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রামের বেশ কয়েকজন আমচাষীরা ছুটে আসেন ইন্দিরাগান্ধীর কাছে। বারবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে কার্যত ধর্নায় বসেন তাঁরা। পরে জানা যায় ওই কৃষকরা যে গ্রাম থেকে এসেছেন তার নাম রাতাউল। তাঁদের দাবি ছিল, এই আম কোনওভাবেই পাকিস্তানের হতে পারে না। কারণ উত্তরপ্রদেশের ওই গ্রামে আফাক ফারিদি নামে এক ব্যক্তি প্রথম এই আমের চাষ শুরু করেন ব্রিটিশ শাসনকালে। পরবর্তী সময় সেই আমের নামকরণ করা হয় 'আনোয়ার রাতাউল'(Anwar Rataul)। এরপর, ১৯৪৭ সালে  ওই গ্রামেরই এক ব্যক্তি আনোয়ার রাতাউল আমের বীজ নিয়ে পাকিস্তানের মুলতানে গিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। সেখান থেকেই পাকিস্তান ওই আমের সন্ধান পায়। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে আরও জানান, ওই ব্যক্তি ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার সময় রাতাউল এলাকা থেকে কয়েকটি আমের চারা নিয়ে যান সেখানে। আর তারপর থেকেই পাকিস্তানে আমের উত্‍পাদন শুরু। 

ইন্দিরা গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী
ইন্দিরা গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী

জানা যায়, এই ঘটনা শোনার পর কিছুটা বিপাকেই পড়েন ইন্দিরা গান্ধী। যদিও, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়, তাঁর মৃত্যুর পরও এই রাতাউল আমের মালিকানা নিয়ে বহু টানাটানি হয়েছে। কিন্তু, সুরাহা মেলেনি। 

আম উৎসবের সময়ও ঠান্ডা লড়াই-

ফলে, বিশ্ব আম উত্‍সবের সময় যখনই এই দুই দেশ মুখোমুখি হয়, তখনই তাদের মধ্যে রাতাউল আম নিয়ে শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই। কিন্তু, 'আম তুমি কার?' সে প্রশ্নের উত্তর এখনও জানা নেই।

 

Advertisement