উত্তরবঙ্গের যে কটি পুজো অত্যন্ত প্রাচীণ তার মধ্য়ে অন্য়তম বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির পুজো। পাঁচশো বছরের পুরনো পুজো একদমই আলাদা। এখানে দেবীর ভোগ হয় ইলিশ-চিতল-কাতলাতে। মায়ের পরণে কখনও আসাম সিল্ক কখনও বেনারসি শাড়ি। মা একেবারেই রাজেন্দ্রাণী রূপে পূজিত হন। রাজঘরাণার আদর্শ দেবী।
ইলিশ সহ পাঁচ মাছের ভোগ
জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির দুর্গা পুজোর অষ্টমীর দিনে মাকে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। ইলিশ, চিতল, পাবদা, কাতলা ও চিংড়ি সহ পাঁচ রকম মাছের আমিষ ভোগ দেওয়া হয়েছে।মহা অষ্টমীর দিনে জনশুন্য জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গা মন্দির চত্তর।প্রতিবছর অষ্টমীর দিন তিলধারনের জায়গা থাকে না।কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে এবার স্বাস্থ্য বিধি মেনে পুজো করা হচ্ছে।রয়েছে অনেক বিধি নিষেধও।
কোচবিহার ও বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির সদস্য মিলে পুজো শুধু
জানা যায়, কোচবিহার রাজপরিবারের সদস্য বিশ্ব সিংহ ও বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির সদস্য শিস্য সিংহ, দুজনে মিলে বৈকুন্ঠপুরের রাজপরিবারের পুজো শুরু করেছিলেন। কথিত আছে এই দুই রাজ পরিবারের বংশধররাই বৈকুন্ঠপুরের গহন জঙ্গলে মায়ের মাটির মূর্তি গড়ে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। এখানে মায়ের রূপ ভগবতী।
৫১১ বছরেও মিথ সমান কার্যকর
বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো পাঁচশো বছরের বেশি পুরনো। চলতি বছরে তা ৫১১ বছরে পড়ছে। এখনও সেই মিথ, গা ছমছমে অনুভূতি নিয়ে মানুষ পুজো দেখতে আসে। পুজো ঘিরে আগে অষ্টমী থেকে দশমী মেলা হতো। এখন অবশ্য মেলা বন্ধ। আগে হত নরবলিও। তবে প্রতীকী হিসেবে ওই নরবলি আজও রয়ে গিয়েছে। যা ভক্তদের টেনে আনে।
কালিকাপুরাণ মতে পুজো
কিংবদন্তী আছে, পুজোর শুরু হয়েছিল পরিবারের কোনও এক সদস্যকে দেবীর উদ্দেশ্যে নরবলি দিয়ে। সেই উৎসর্গ করা রক্তে হয়েছিল পুজো। মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপরিবারের দুর্গা পুজোর সূচনা হয়েছিল বলে আজও বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির প্রতিমার রং তপ্তকাঞ্চনের মতো। তবে নরবলি উঠে গিয়েছে অনেকদিন। এখন যাঁরা জীবিত, তাঁরা কেউই নরবলি দেখেননি। কিন্তু অষ্টমীর গভীর রাতে চালনকুলায় ধান, দুর্বা, কলা, চালকুমড়া হাঁসের ডিম সহযোগে কালিকাপুরাণ মতে এই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো হয়।
করোনা.জৌলুসে ভাঁটা
দেবী দুর্গার পাশে তাঁর সন্তান সন্ততি ছাড়াও ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, মা মহামায়া ও জয়া-বিজয়ার বিগ্রহ রয়েছে। অতীতে অষ্টমী ও নবমীর দিন রাজবাড়ি চত্বরে বড় আকারে মেলা বসতো। পুজো ও মেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত ও স্থানীয় মানুষ শামিল হতেন। মেলা বন্ধ। তবে রাজপরিবারের সদস্যরা প্রতিমা নিরঞ্জন চাক্ষুষ করেন না। করেন না পরিবারের সদস্যরা। এখানকার রীতি জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো। তার অন্যথা হয় না। তবে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর থেকে একটু ভাঁটা পড়েছে।