scorecardresearch
 

ডোবায় পাওয়া সোনার দুর্গা থাকেন ট্রেজারির ভল্টে, শুধু নবমীতেই হয় পুজো

শুধু নবমীর দিনই সোনার দুর্গায় পুজো হয়। তখনই মূল উৎসব ময়নাগুড়ির ভোটপট্টির খয়েরখালের দুর্গাপুজোর। বাকি সারা বছরই তিনি থাকেন ট্রেজারির ভল্টে।

Advertisement
প্রতীকী ছবি প্রতীকী ছবি
হাইলাইটস
  • সোনার বিগ্রহ থাকেন ট্রেজারির ভল্টে
  • খয়েরখালেই মেলে সোনার প্রতিমা
  • নবমীর দিন সোনার প্রতিমা বের করা হয়

ময়নাগুড়ি ব্লকের ভর্তি পরীক্ষার খয়েরখাল গ্রামের পাশের ছোট্ট জমিতে এক চিলতে মন্দির। টিনের চাল দেওয়া। দেখলে তেমন কিছু চোখ টানবে না পথচারীর। সারা বছর তেমন জৌলুস থাকে, তাও নয়। নিয়ম করে দুবেলা পুজো হয় বটে, কিন্তু সাদামাটা।

সোনার বিগ্রহ থাকে ভল্টে

এই আপাত সাধারণ মন্দিরটি দুর্গাপুজোর কয়েক দিন বদলে যায় মহাযজ্ঞে। তখন এই মন্দিরকে সারা বছরের ওই ঘুমিয়ে থাকা মন্দির বলে মনে করা মুশকিল এবং এই মন্দিরের দুর্গাপুজো শুধু এলাকা নয় বাইরের লোকের কাছে বড় আকর্ষণের। তার কারণ এক চিলতে মন্দিরের বিগ্রহ গোটাটাই সোনার। সারা বছর অবশ্য সেই সোনার বিগ্রহ পুজো হয় না। সেটি হয় শুধুমাত্র এই উৎসবের সময়। বাকি সময়ে সোনার বিগ্রহ বাঁধা থাকে তালা চাবি দিয়ে ব্যাংকের ভল্টে।

দুর্গার হাতে অস্ত্র দিয়েছেন স্থানীয়রা

নবমীর দিন ভল্ট থেকে সোনার দুর্গা প্রতিমা নিয়ে আসা হয়। তার আগে পর্যন্ত মাটির মূর্তি পুজো হয়। মূর্তির উচ্চতা ৭ ইঞ্চি। ওজন প্রায় ৪০০ গ্রাম সোনা দিয়ে তৈরি হয়েছে। যা বাড়তি আকর্ষণ। একই সঙ্গে রয়েছে অসুর এবং মহিষের মাথাও। তবে এই দুর্গা একা। তার সঙ্গে কোনও সন্তান-সন্ততি নেই। দেবীর হাতে থাকে না কোনও অস্ত্র। কিন্তু দুর্গা অসুরদলনী ভঙ্গিতেই বিরাজমান। হয়তো আগে অস্ত্র ছিল। কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে কিছু বছর আগে গ্রামবাসীরা দুর্গার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন।

মূর্তির মিল রয়েছে কোচবিহার-বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির সঙ্গে

জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির এলাকায় হওয়ায় এক সময়ে এটি জলপাইগুড়ি ডাইনেস্টির অন্তর্গত ছিল। দুর্গার সঙ্গে বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ি এবং কোচবিহার রাজবাড়ির মন্দিরে দুর্গার মিল রয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে সেই সময়ের বা একই ধরনের কোথাও এই মূর্তি তৈরি হয়েছে। নবমীর দিন আবার বৈষ্ণবমতে দেবীর পুজা হয়। পুজোর সময় পাঁঠা বলি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। পুজোর শেষে নবমীর দিন সূর্যাস্তের আগে ঘটে জল ঢেলে বিগ্রহ চুবিয়ে প্রতীকী বিসর্জন দেওয়া হয়।

Advertisement

দেবী মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন

এই পূজাকে ঘিরে কোন থিম কিংবা বাড়তি কোনও আতিশয্য কখনওই থাকে না। তবে নবমী পুজা দেখতে এবং সোনার প্রতিমাকে ঘিরে বিসর্জন দেখতে প্রচুর মানুষের ভিড় হয়। যারা পুরনো প্রযুক্তি এবং আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী, তাঁরা ময়নাগুড়ির খয়েরখালের প্রতিমা দেখতে চলে আসেন। অনেকের বিশ্বাস, দেবী মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন।

পুলিশি নিরাপত্তা দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নেই

পুজোর দিনে মন্দির চত্বর মেলার আয়োজন হয়। পুজোর কটা দিন রমরমিয়ে চলে উৎসব পুজো উপলক্ষে। যেহেতু সোনার প্রতিমা থাকে, পুলিশের তরফ থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় আয়োজন করা হয় তাই কখনও আচমকা ঘুরতে ঘুরতে মেলায় কিংবা মণ্ডপে চলে এলে পুলিশের আতিশয্য দেখে ঘাবড়াবার কিছু নেই। এটি নিয়ম রক্ষা। মন্দিরের পিছনেই রয়েছে বিশাল খাল। খালের চারপাশে একসময় প্রচুর গাছ ছিল। এখন যদিও তা নেই, সেখান থেকেই এলাকার নাম বলে জানান।

পিছনের খয়েরখালেই পাওয়া যায় বিগ্রহটি

অনেক বছর আগে এলাকাটা একটা গভীর জঙ্গলে ভরা ছিল। সে সময় এক সাধু শত্রুদের হাতে তাড়া খেয়ে ঘরের পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নেন। জঙ্গল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ওই সোনার দুর্গা তিনি গ্রামবাসীদের দিয়ে যান। তারপর থেকেই নবমীর দিন ওই দুর্গাপুজোতে শামিল হন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে দেবী মা গোসানি নামে পরিচিত।

 

Advertisement