scorecardresearch
 

Women Freedom Fighters: জয় হিন্দ! বাংলার ৭ অগ্নিকন্যা, এঁরা ইংরেজদের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিলেন

স্বাধীনতার ৭৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু আজও সেই ব্যক্তিত্বদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা কমেনি দেশবাসীর হৃদয়ে, যারা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী এবং দেশের জন্য লড়াই করা বীরদের মধ্যে দেশের মেয়েরাও ছিল।

Advertisement
ইংরেজদের ঘুম উড়িয়েছিলেন যে বাঙালি বীরাঙ্গনারা ইংরেজদের ঘুম উড়িয়েছিলেন যে বাঙালি বীরাঙ্গনারা

স্বাধীনতার ৭৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু আজও সেই ব্যক্তিত্বদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা কমেনি দেশবাসীর হৃদয়ে, যারা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী এবং দেশের জন্য লড়াই করা বীরদের মধ্যে দেশের মেয়েরাও ছিল।  ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পেতে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল অনেকটা প্রদীপের সলতের মতো। একদিকে তারা নিজেদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তাকে দূরে সরিয়ে বিপ্লবের পথে এগিয়ে দিয়েছিলেন তাদের স্বামী, সন্তান ও ভাইদের। অন্যদিকে তারা কখনও ঘরের ভেতর থেকে কখনও বাইরে বেরিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। স্বাধীনতার ৭৬ বছরে চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনি ৭ বাঙালি বীরাঙ্গনার  কথা, যাদের এদেশের স্বাধীনতায় অবদান প্রশংসনীয়।

 বীণা দাস - ১৯১১ সালের ২৪ অগাস্ট কৃষ্ণনগরে বাবা বেণীমাধব দাস এবং মা সরলা দেবীর ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন বীণা দেবী। তাঁর বাবা ছিলেন একাধারে শিক্ষক অন্যদিকে একজন সমাজসেবীও। তাই সমাজ তথা দেশের জন্য কিছু করা তাঁর রক্তেই বইছিল। ১৯৩২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন হলে সেই সময়ের বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনের উপর গুলি চালিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। 

ননীবালা দেবী - বাঙালি বিপ্লবীর পাশাপাশি ননীবালা দেবী ছিলেন প্রথম মহিলা রাজবন্দি। ১৯১৫ সালে আলিপুর জেলে বন্দি বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদারের কাছ থেকে গোপন তথ্য নিয়ে আসার জন্য তাঁর স্ত্রীর পরিচয় দেখা করেন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে। একজম বিধবা হিন্দু মহিলা হিসেবে তাঁর এই সাহসী পদক্ষেপ ছিল অকল্পনীয়। বিভিন্ন সময়ে পলাতক বিপ্লবীদের তিনি নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিতেন। পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় তিনি পালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে ধরা পড়ে যান। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় গ্রেফতার করে বেনারসের জেলে পাঠায়। সেই সময়ে তিনি কলেরা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। জেনে ভয়ঙ্কর অত্যাচার করা হয় তাঁর উপর। যদিও শত অত্যাচারের পরও বিপ্লবী সংগঠনের গুপ্ত কোনও খবর তাঁর থেকে বের করতে পারেনি পুলিশ। পরবর্তীকালে তাঁকে প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়। 

আরও পড়ুন

Advertisement

আভা দে- দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আভা দে কোনো পুরুষের থেকে কম ছিলেন না। তিনি তাঁর সাহস ও শারীরিক শক্তির জোরে জীবনকে তুচ্ছ করে দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সাঁতার কাটা থেকে শুরু করে দৌঁড়ানো, গাছে ওঠা, সাইকেল চালানো সবেতেই ছিলেন পারদর্শী তিনি। আভা দে তাঁর বন্ধু কল্যাণী দাসের সঙ্গে ‘ছাত্রীসংঘ’তে যোগদান করেছিলেন। সেসময় একবার ছাত্রীসংঘ থেকে সাইকেল প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনি নাম দিয়ে কলকাতা থেকে বর্ধমান পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিমিরও বেশি পথ সাইকেল চালিয়ে প্রথম হন। এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর এমনও অনেক দিন অতিবাহিত হয়েছে যখন তিনি দু চার পয়সায় তেলে ভাজা খেয়েই গোটা দিন কাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি চরম সাহসী একজন মহিলা ছিলেন। তাঁর সাহসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর প্রতিরোধেই। তিনি এমন একজন নারী যিনি ইংরেজ পুলিশের ঘোড়ার লাগাম টেনে প্রতিরোধ জানিয়ে ছিলেন। আভা দে ১৯৩০ সালে নারী সত্যাগ্রহ সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর তিনি বেআইনি শোভাযাত্রা ও সভায় যোগদান করার অপরাধে গ্রেপ্তার হন এবং প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দী থাকেন। আভা দে এমন একজন বাঙালি নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী যাঁর জন্মকাল, জন্মস্থান সম্পর্কে কিছুই তেমন জানা যায় নি। তবে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে জানা গিয়েছে সম্ভবত তিনি ১৯৩৮ সালে দেওঘরে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

 

মাতঙ্গিনী হাজরা

 

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার - স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলার প্রথম মহিলা শহিদ। জন্ম ১৯১১ সালে। ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২, চট্টগ্রামের পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাবের ওপর হানা দেয় প্রীতিলতার নেতৃত্বে ১৫ জন বিপ্লবীর একটি দল। শুরু হয় গুলি বিনিময়, জখম হন প্রীতিলতাও। আহত অবস্থায় তাঁকে ধরে ফেলে ব্রিটিশ পুলিশ, কিন্তু তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বিষ খেয়ে প্রাণত্যাগ করেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

মাতঙ্গিনী হাজরা
মাতঙ্গিনী হাজরা

মাতঙ্গিনী হাজরা - ১৮ বছর বয়সে স্বামীকে হারান মাতঙ্গিনী, এবং ১৯০৫ সাল থেকে গান্ধীবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে যোগ দেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে লবণ আইন ভঙ্গের অপরাধে গ্রেফতার হন তিনি। ১৯৪২ সালে 'কুইট ইন্ডিয়া' আন্দোলনের অন্তর্গত কর্মসূচি ছিল মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন থানার দখল নেওয়ার পরিকল্পনা। সেইমতো তমলুক থানা অভিমুখে প্রায় ৬.০০০ মানুষের মিছিলের নেতৃত্ব দেন মাতঙ্গিনী। মিছিল আটকাতে গুলি চালায় পুলিশ, মাতঙ্গিনীর গায়ে লাগে তিনটি গুলি। তবু এগিয়ে চলেন তিনি, যতক্ষণ না মৃত্যু গ্রাস করছে তাঁকে। থানার সামনে যখন পড়ে আছে তাঁর নিথর দেহ, হাতে তখনও ধরা জাতীয় পতাকা।

 

অরুণা আসাফ আলী
অরুণা আসাফ আলী

অরুণা আসাফ-  হরিয়ানার বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম। অরুণা আসাফ আলী ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে স্বীকৃত। একজন সংগ্রামী  হিসেবে তিনি লবণ সত্যাগ্রহে অংশগ্রহণ করেন এবং মানুষকে তার সঙ্গে  সংযুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও তিনি 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস'-এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মাসিক পত্রিকা 'ইনকিলাব'ও সম্পাদনা করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে ভারতরত্ন পুরস্কার লাভ করেন।

 

সরোজিনী নাইডু

সরোজিনী নাইডু- ভারতীয় নাইটিঙ্গেল নামে পরিচিত সরোজিনী নাইডু শুধু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীই ছিলেন না, খুব ভালো কবিও ছিলেন। সরোজিনী নাইডু খিলাফত আন্দোলনের লাগাম নিয়েছিলেন এবং ভারত থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। সরোজিনী নাইডু নামটি শুনলে দক্ষিণ ভারতীয় বলে মনে হতে পারে। বিয়ের আগে তিনি ছিলেন সরোজিনী চট্টোপাধ্যায়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন তিনি। 

Advertisement

Advertisement