scorecardresearch
 

ছিল রাজা-বাদাশাদের অস্ত্র, এখনও সেই 'আম কূটনীতি' হাতিয়ার মমতা-হাসিনাদের

আম পাঠিয়ে বন্ধুত্ব দৃঢ় করা পুরোনো কূটনৈতিক কৌশল। বর্তমান সময়ই হোক বা রাজা-বাদশাদের আমল-আমকে ঘিরে কূটনীতি নতুন নয়। হিমসাগর, ল্যাংড়া এবং লক্ষ্মণভোগ দিল্লিতে পাঠিয়ে আম কূটনীতি বজায় রেখেছেন মমতা। তবে কেবল অন্তর্দেশীয় রাজনীতি নয় দু’দেশের মধ্যে চাপা টেনশন মেটানোই হোক বা বিদেশে বাণিজ্য বিস্তারের হাতিয়ার-দৌত্যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সৌভ্রাতৃত্ব ও উষ্ণতার দূত হিসাবে আমকেই বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনাও।

Advertisement
আম পাঠিয়ে বন্ধুত্ব দৃঢ় করা পুরোনো কূটনৈতিক কৌশল আম পাঠিয়ে বন্ধুত্ব দৃঢ় করা পুরোনো কূটনৈতিক কৌশল
হাইলাইটস
  • আম পাঠিয়ে বন্ধুত্ব দৃঢ় করা পুরোনো কূটনৈতিক কৌশল
  • বর্তমান সময়ই হোক বা রাজা-বাদশাদের আমল-আমকে ঘিরে কূটনীতি নতুন নয়
  • ফলের রাজা আম বরাবরই অঙ্গ ছিল মুঘল কূটনীতির


আম পাঠিয়ে বন্ধুত্ব দৃঢ় করা পুরোনো কূটনৈতিক কৌশল।  বর্তমান সময়ই হোক বা রাজা-বাদশাদের আমল-আমকে ঘিরে  কূটনীতি নতুন নয়। ফলের রাজা আম বরাবরই অঙ্গ ছিল মুঘল কূটনীতির। বাবর থেকে শাহাজাহান-প্রায় সব মুঘল শাসকেরা ছিলেন আম রসিক। বাবর নিজে আম খেতে ভালবাসতেন। ইতিহাসের পরনো দলিল থেকে জানা যায়, তেমনি রাজসভায় আগত বিদেশি অতিথি ও অন্য বাদশাদের তিনি নিয়মিত ভাবে আম ভেট পাঠাতেন। একধাপ এগিয়ে আকবর বিহারের দ্বারভাঙ্গার কাছে লাখিবাগে প্রায় লক্ষাধিক আম গাছের চারা পুঁতেছিলেন। বাদশাদের  জন্য নির্দিষ্ট থাকা সে সব আম চেখে দেখার অনুমতি ছিল না আম-জনতার। আইন-ই আকবরিতে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, এ দেশের বিভিন্ন প্রজাতির আমের স্বাদ ও কোন মাটিতে কোন আম ভাল হয় তা নিয়েও। শাহজাহান এতটাই আম ভক্ত ছিলেন যে তাঁর সামনে আম গাছ পুঁততে হত মালীদের। ইতিহাস থেকে জানা যায়, দাক্ষিণ্যাতের একটি বিশেষ প্রজাতির আম  শাহজাহান এতটাই পছন্দ করতেন, দাক্ষিণাত্যের দায়িত্বে থাকা তাঁর এক পুত্র সেই আম দিল্লিতে না পাঠিয়ে নিজে খেয়ে নেওয়ায় তাঁর উপরে যারপরনাই রেগে যান। সে যুগে মুঘল দরবারের রাজা-উজির-ওমরাওরা পরস্পরকে উপহার দেওয়ার জন্য বেছে নিতেন আমকেই। শুধু রাজায়-রাজায় মিত্রতার হাতিয়ার নয়, বাণিজ্য বিস্তারের প্রশ্নেও হাতিয়ার হয়েছে আম। 

 

 

রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর সেই আম দৌত্য রাজ্যে চালু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।  প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সমস্ত মন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি ও গোলাপখাস পাঠিয়ে থাকেন মমতা। একুশের ভোটে বিরোধী বিজেপির সঙ্গে মারকাটারি লড়াই হয়েছে তৃণমূলের। মমতা ৃ-মোদী কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। ভোট পরবর্তী সময়ও কেন্দ্র রাজ্য় দ্বন্দ্ব বর্তমান। আর এর মাঝেও দিল্লির নেতাদের আম উপহার পাঠালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।  আম উৎপাদনে দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অষ্টম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এরাজ্যে আম আয়ের অন্যতম উৎস। বিভিন্ন প্রজাতির আমের জন্য রয়েছে জগৎ জোড়া নাম। আর সেই আম তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর  উপহার  পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় অক্ষয় কুমারের সঙ্গে অরাজনৈতিক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি আম খেতে ভালোবাসেন। বাংলা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  তাঁকে প্রতিবছর আম পাঠান। মিষ্টি  ও পঞ্জাবি উপহার দেন। এবারও সেই নিয়মের অন্যথা করলেন না মমতা। শুধুই মোদী নন, মমতার আম উপহারের তালিকায় রয়েছেন অমিত শাহ, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী,  দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। জানা গিয়েছে প্রত্যেকের দিল্লির বাড়ির ঠিকানায় গিয়েছে আম।

Advertisement

 

 

 হিমসাগর, ল্যাংড়া এবং লক্ষ্মণভোগ দিল্লিতে পাঠিয়ে আম কূটনীতি বজায় রেখেছেন মমতা। তবে কেবল অন্তর্দেশীয় রাজনীতি নয় দু’দেশের মধ্যে চাপা টেনশন মেটানোই হোক বা বিদেশে বাণিজ্য বিস্তারের হাতিয়ার-দৌত্যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সৌভ্রাতৃত্ব ও উষ্ণতার দূত হিসাবে আমকেই বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনাও। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী মোদী ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য ওপার বাংলার ঐতিহ্যশালী আম পাঠিয়েছেন হাসিনাও। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই আম কূটনীতিকে বিশেষ গুরুত্বের চোখেই দেখা হচ্ছে। অতীতে ইলিশ ও আম কূটনীতি নিয়ে বহুবার বাংলাদেশে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে হাসিনাকে। বর্তমানে দেশে ভ্যাকসিনের ঘাটতি রয়েছে। তিস্তা চুক্তিও ঝুলে রয়েছে। এই আবহে হাসিনার আম কূটনীতি বলে দিচ্ছে তিনি ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যের সম্পর্ক রক্ষা করতে কতটা বদ্ধপরিকর।

 

 

তবে এই আম কূটনীতি করতে গিয়েই একেবারে লেজে গোবরে অবস্থা হয়েছে ইমরানের দেশের। প্রতিবছর চিন ও আমেরিকাকে আম পাঠায় পাকিস্তান। আম কূটনীতির অংশ হিসেবে ৩২টিরও বেশি দেশে আম পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিল ইসলামাবাদ। যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ পাকিস্তানের দেওয়া আম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ডঃ আরিভ আলভির তরফ থেকে সেই আম পাঠানো হয়েছিল বিভিন্ন দেশে। তবে করোনা কালে আমের বাক্স গ্রহণ করতে অস্বীকার করে ফ্রান্স, কানাডা, নেপাল, মিশর, শ্রীলঙ্কাও।

ভারতের সঙ্গেও আম কূটনীতির ইতিহাস রয়েছে পাকিস্তানের। মোদী প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে মধুর সম্পর্কের প্রত্যাশায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সুস্বাদু সিন্ধ্রি ও চৌসা আম পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। আশির দশকে দু’দেশের মধ্যে নতুন সম্পর্কের ভিত গড়তে আম কূটনীতির সাহায্য নিয়েছিলেন মহম্মদ জিয়া-উল-হক ও ইন্দিরা গান্ধীও। ইউপিএ সরকারের আমলেও মুম্বই হামলার পর দু’দেশের মধ্যে হঠাৎই বেড়ে যাওয়া তিক্ততা কমাতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে কুড়ি কিলোগ্রাম আলফ্যানসো আম পাঠান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। পাল্টা সৌজন্য দেখান গিলানিও। ২০১০ সালে পাকিস্তানে হওয়া বন্যায় ভারতের সাহায্যের প্রতিদানে পাঁচ বাক্স পাকিস্তানের আম এসে পৌঁছয় মনমোহনের বাসভবনে। শোনা যাচ্ছে কাশ্মীর নিয়ে চাপা উত্তেজনার মধ্যেও এবার ভারতে আম পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইমরানের দেশের। 


 

Advertisement