প্রায় ৫০ বছর আগে পূর্ব পুরুষের হাত ধরে শুরু হয়েছিল দাঁ পরিবারের দুর্গাপুজো। কিন্তু এখন ওই পরিবারের পুরুষ বলতে কেউ নেই। দুঃস্থ পরিবারের পক্ষে দুর্গাপুজো সামলানোটা খুবই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও দেবী দুর্গার আশীর্বাদে দাঁ পরিবারের দুই মেয়ে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে চলেছেন। যদিও এই পুজোয় পাড়া-প্রতিবেশীরা নানান ভাবে সহযোগিতা করে থাকেন ওই পরিবারটিকে।
গৃহশিক্ষকতা এবং অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্নার কাজ করেই পুজো
দাঁ পরিবারের দুই বোনের রোজগার বলতে গৃহশিক্ষকতা এবং অনুষ্ঠান বাড়িতে রান্নার কাজ করা। এতেই চলে পুরাতন মালদার দাঁ পরিবারের দুই বোনের সংসার । আর সারা বছরের অল্প অল্প করে জমানো টাকা এবং প্রতিবেশীদের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে বংশের দুর্গাপুজোর ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন দাঁ পরিবারের দুই সদস্য প্রভাদেবী এবং জয়াদেবী।
জরাজীর্ন বাড়িতে চলছে ধুঁকে ধুঁকে সংসার
পুরাতন মালদা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তুঁতবাড়ি এলাকায় রয়েছে দাঁ পরিবারের জরাজীর্ণ বাড়িটি। সেখানে থাকেন দুই বোন প্রভা দাঁ এবং জয়া দাঁ। প্রভাদেবী বিবাহিত হলেও স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়েছে। তিনি তার বাবার বাড়িতে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকেন। প্রভাদেবীর ছোট বোন জয়া দাঁ অবিবাহিত। দুজনেই দুই রকম পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন । আর তাতেই চলে তাঁদের সংসার।
শুরু হয়েছে মূর্তি তৈরির কাজ
উল্লেখ্য, পুজোর বাকি আর মাত্র কিছুদিন। বাড়িতেই শুরু হয়েছে দেবী দশভুজার মূর্তি বানানোর কাজ। এলাকারই এক মৃৎশিল্পী বংশ-পরম্পরা ওই পরিবারের দেবী দুর্গা মূর্তি বানিয়ে থাকেন। কিন্তু ওই পরিবারের শত কষ্ট হলেও দেবী দুর্গা পুজোর ক্ষেত্রে কোনো রকম খামতি রাখেননি দাঁ পরিবারের দুই মহিলা সদস্য। কোনও কষ্টে তাকেও সংসার চালালেও দেবী দশভুজার পূজার ক্ষেত্রে কোনরকম ত্রুটি রাখতে রাখেন নি তাঁরা। যদিও এক্ষেত্রে পাড়া-প্রতিবেশীরা দুর্গাপূজার জন্য এই পরিবারটিকে নানান ভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। প্রায় পঞ্চাশ বছরেরও বেশি পুরনো এই পুজোর অস্তিত্বকে কোনরকমে টিকিয়ে রেখেছেন দাঁ পরিবারের মধ্যবয়স্ক ওই দুই বোন।
পুরুষ নেই, আয়োজনে নাভিশ্বাস
প্রভা দাঁ এবং জয়া দাঁ বলেন, বাবা-ঠাকুরদার হাত ধরে বাড়ির দুর্গা পুজো শুরু হয়েছিল। তাঁরা প্রয়াত হওয়ার পর মা এই পূজো পরিচালনা করে আসছিলেন । কিন্তু বৃদ্ধা মা মারা যাওয়ার পর এখন তাদের ঘাড়েই পুজোর দায়িত্ব পড়েছে। বাড়িতে পুরুষ বলে কেউ নেই। তাই এখন দুর্গাপুজোর করার ক্ষেত্রেও রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ওই দুই বোনকে।
বাড়ির পুজোয় ধার বা চাঁদা
দাঁ পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০ বছর আগে থেকে তাদের এই পুজো হয়ে আসছে। তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ধারদেনা করেই দেবী দূর্গা পূজিত হন। এমত অবস্থায় মহা নবমীর দিন এলাকাবাসীকে পংক্তি ভোজনের আয়োজন করা হয়।
মায়ের পুজোর জোগাড় আটকায় না
প্রভা এবং জয়াদেবী বলেন, বংশের পুরনো পরম্পরাকে ধরে রাখতে এই পুজোর করে আসছেন তারা। আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল নয়। তায় দুর্গাপুজার আয়োজনের ক্ষেত্রে অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। কিন্তু অদ্ভুতভাবে মায়ের পুজোর আয়োজন সমস্তটা জোগাড় হয়ে যায়। কীভাবে হয় সেটাও তারা সঠিকভাবে বলতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু একটা বিশ্বাস দাঁ পরিবারের রয়েছে, দেবীর দুর্গার অশেষ কৃপা রয়েছে বলে কষ্ট হলেও পুজো হয়।
সরকারি সহায়তার আবেদন
দা পরিবারের দুই মহিলার অবশ্য সরকারের প্রতি আবেদন করেছেন যে বিভিন্ন ক্লাব ও পুজো উদ্যোগ্যতাদের রাজ্য সরকার যেভাবে আর্থিক সহযোগিতা করছে , সেভাবেই তাদের এই পুরোনো পূজাকে টিকিয়ে রাখতে যেন সহযোগিতা করা হয়।