দেশ স্বাধীন করতে ঘর ছেড়েছিলেন সুভাষ। আর যে কারণে ঘর ছেড়েছিলেন সেই স্বপ্ন সফল হয়েছে। দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে কয়েক দশক হল। তবে, আজও সুভাষ ঘরে ফেরে নাই। সুভাষের কেন ঘরে ফেরেননি তা নিয়ে বিতর্কও জারি রয়েছে কয়েক দশক। আমরা সেই বিতর্কে ঢুকতে চাই না। কারণ সুভাষ ঘরে না ফিরলেও তিনি রয়েছেন আমাদের চেতনায়, প্রতিদিনের কর্মযজ্ঞে। হ্যাঁ, আমরা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর (Netaji Subhas Chanda Bose) বিষয়েই কথা বলছি। আজ নেতাজির ১২৬তম জন্মবার্ষিকী (Netaji Subhas Chandra Bose Jayanti 2023)।
বিদেশ, দেশ, কলকাতা শহরের আনাচে-কানাচে নেতাজির পায়ের ছাপ এখনও স্পষ্ট। তাঁর উপস্থিতি অনুভব করা যাবে গলি-মহল্লাতে। খিদিরপুরের (Khidirpur) মনসাতলা লেনের (Mansatala Lane) বাসিন্দারা নেতাজিকে নিয়েই বেঁচে আছেন। তাঁদের ধর্মে-কর্মে একমাত্র দেশগৌরব নেতাজিই।
খিদিরপুরের মনসাতলা লেনের আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডার (Anandamoyee Daridra Bhandar)। দুঃস্থ ও আর্ত মানুষের সেবায় ১৯০৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি পথ চলা শুরু করে। এখনও এই প্রতিষ্ঠানটি আর্ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত। এখন প্রশ্ন হল এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নেতাজির (Netaji) কী যোগ রয়েছে? আসলে ১৯০৯ সালের ৩০ মার্চ পথচলা শুরু হলেও আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডারের ছিল না কোনও নিজস্ব বাড়ি। যেখান থেকে সামাজিক কাজগুলি পরিকল্পিত ও সঠিক ভাবে পরিচালনা করা যায়। অস্থায়ী ঠিকানা থেকেই কাজ করত এই প্রতিষ্ঠান। ৩০ বছর পরে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেন তৎকালীন সদস্যরা।
একটু কি খটকা লাগলো? লাগারই কথা। নেতাজির নামের পাশে 'ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি' লেখা দেখে খটকা তো লাগবেই। তবে এই লেখার পিছনে আসল কারণ জানলে সব বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। আসলে সেই সময় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্টকে (Congress Preident) বাংলায় রাষ্ট্রপতি বলা হত। এখন যে পদটিকে সভাপতি বলা হয়। ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতির পদ ছাড়েন সুভাষ চন্দ্র বসু। কংগ্রেস ছাড়ার পর তিনি নানা জনহিতিকর কাজের সঙ্গে বেশি করে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৪০ সালে ফরোয়ার্ড ব্লক আলাদা (Forward Bloc) পার্টি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই তিনি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হয়ে যান। বাংলা করলে দাঁড়ায় প্রাক্তন বা সাবেক বা ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি। যেহেতু সেই সময় কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের পদকে বাংলায় রাষ্ট্রপতি বলা হত, তাই আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডারের ফলকে লেখা রয়েছে, 'ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি।'
নেতাজির আদর্শকে পাথেয় করে আজও দরিদ্রের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডার। এই সংস্থার নামকরণের পিছনেও রয়েছে একটি ইতিহাস। খিদিরপুরে রয়েছে ২০০ বছরের প্রাচীন আনন্দময়ী মা কালীর মন্দির। দেবীর নাম থেকেই সংস্থার নাম আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডার রাখা হয়েছিল ১৯০৯ সালে। প্রতি বছর জন্মদিনে এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা নেতাজির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়াও সারা বছরই নানা জনহিতিকর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে।
এই সংস্থার বর্তমান সহকারী সম্পাদক সদস্য ডিউক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সুভাষচন্দ্র বসুর সেদিনের দেখানো পথ এবং আদর্শ নিয়ে আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডার এগিয়ে চলেছে। প্রতিমাসে ১০০ জন দুঃস্থকে ২০০ টাকা ও বিশেষ ভাবে সক্ষমদের ২৫০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হয়। এছাড়াও পুজোয় বহু মানুষকে নতুন জামা কাপড় দেওয়া হয়।