পয়লা বৈশাখ (Poila Baisakh 1430), নববর্ষ (Nabo Barsho) নামেও পরিচিত। বাংলা নববর্ষ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বের বাঙালিদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। উৎসবটি বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনটিকে চিহ্নিত করে, যা সাধারণত প্রতি বছর এপ্রিলের ১৪ বা ১৫ তারিখে পড়ে। ‘পয়লা’ শব্দের অর্থ ‘প্রথম’ এবং ‘বৈশাখ’ বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। পয়লা বৈশাখের ইতিহাস ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল যুগ থেকে শুরু হয় বলে মনে করা হয়, যখন সম্রাট আকবর (Mughal Emperor Akbar) ফসল কাটার মরশুমের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন কর ব্যবস্থা চালু করেন। এটি বাংলা নববর্ষের সঙ্গে মিলে যায়, যা ঐতিহ্যগতভাবে স্থানীয় জনগণের দ্বারা উদযাপন করা হয়।
আকবর মুঘল ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন, যা ছিল ইসলামি ও হিন্দু ক্যালেন্ডারের সমন্বয়। বাংলা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে আর্থিক বছর মিলিয়ে দেওয়ার আকবরের সিদ্ধান্ত পরবর্তীকালে উৎসবে পরিণত হয়। প্রথমে আকবরের পঞ্জিকার নাম ছিল 'তারিখ-এ-এলাহি'। এই পঞ্জিকায় মাসগুলো ছিল আর্বাদিন, কার্দিন, বিসুয়া, তীর এমন নামে। সেটিই পরবর্তীতে বাংলায় বঙ্গাব্দ রূপে চালু হয়। আকবরের এই ‘তারিখ ইলাহি’র প্রবর্তনকাল ছিল ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ। তবে ঠিক কখন যে এই নাম পরিবর্তন হয়ে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ হল তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। মনে করা হয় বাংলা বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্র থেকে। যেমন বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা নক্ষত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ, আষাড়া নক্ষত্র থেকে আষাঢ়, শ্রবনা নক্ষত্র থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, অশ্বিনী থেকে আশ্বিন, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, মৃগশিরা থেকে অগ্রহায়ণ, পুষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন ও চিত্রা থেকে চৈত্র। বিশাখা নক্ষত্র অনুসারে বৈশাখ বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস, সেই হিসেবে বৈশাখের প্রথমদিন নববর্ষ অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ ধরা হয়।
আরও পড়ুন: Noboborsho 1430 Celebrations: পয়লা বৈশাখ, বিহু থেকে বৈশাখী! নববর্ষ উদযাপনে মেতে ওঠে গোটা দেশ
আকবরের আমলে প্রত্যেকে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এর পরের দিন পয়লা বৈশাখে জমিদাররা প্রজাদের মিষ্টান্ন বিতরণ করতেন, আপ্যায়ন করতেন। সব মিলিয়ে একটা গোটা উৎসবের সূচনা হয়ে যায় সেই সময় থেকেই। হালখাতার প্রচলনও সম্রাট আকবরের সময় থেকেই। জমি, কৃষিকাজ, খাজনা ও ব্যবসার হিসেব করার জন্য শুরু হয় হালখাতার প্রথা। হাল মানে নতুন, হালখাতা অর্থাত্ নতুন খাতা। পুরনো খাতা সরিয়ে নতুন খাতায় হিসেব নিকেশ লেখা হয়।
তবে পয়লা বৈশাখের উৎপত্তি নিয়ে অন্য মতও আছে। অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন, গৌড়বঙ্গের রাজা শশাঙ্কের রাজত্বকালে বঙ্গাব্দের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে কর্ণসুবর্ণর সিংহাসনে বসেন শশাঙ্ক। সেই রাজ্যাভিষেকের বছর থেকেই অব্দ বা বৎসর গণনা করা হয়, সেটাই আসলে বঙ্গাব্দ।
পয়লা বৈশাখ সারা বিশ্বে বাঙালিরা অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করেন। দিনটি শুরু হয় খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার মধ্যে দিয়ে। এরপর স্নান সেরে নতুন জামাকাপড় পরে এবং ভগবান গণেশ এবং দেবী লক্ষ্মীর পুজো করা হয় আগামী বছরের সমৃদ্ধি এবং সুখের জন্য। ব্যবসায়ীরা পয়লা বৈশাকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে পুজো করেন, বিকেলে হালখাতার উৎসব হয়। পয়লা বৈশাখের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হল ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার। যার মধ্যে রয়েছে নানা রকমের, নানা স্বাদের মিষ্টি।