জন্মভূমি অস্থির। কয়েক হাজার মাইল দূরে বসে থাকলেও মন ভাল নেই ওঁদের। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। ফোন করা দায়। তাই আশঙ্কা আর উদ্বেগে দিন কাটছে। মনেপ্রাণে একটা জিনিসই চাইছেন। তা হল শান্ত হোক জন্মভূমি। শান্তি ফিরুক দ্রুত।
ওঁরা মানে সবাই যাঁদের চেনেন কাবুলিওয়ালা নামে। কলকাতার সঙ্গে তাঁদের আত্মিক যোগযোগ যেন। জন্মভূমি আফগানিস্তান (Afghanistan) ছেড়ে এখানে ঠাঁই নিয়েছেন অনেকদিন আগে। আর তারপর থেকে এই শহর তাঁদের হয়ে গিয়েছে।
কথা হচ্ছিল কলকাতার খোদা-ই খিদমৎগারের সভাপতি আমির খানের সঙ্গে। বেশ উদ্বেগে রয়েছেন। জানালেন সে কথা। জন্মভূমিতে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে তালিবান (Taliban)-রা। রোজই আসছে গোলমালের খবর।
এখন তিনি কলকাতার বাইরে। জানাচ্ছেন, সেখানকার ব্যাপারে কী আর বলব! পরিস্থিতি ভাল নয়। ইন্টারনেট, ফেসবুকে মাঝে মাঝে খবর পাচ্ছি। তাই কোথায় কী অবস্থা, ঠিক বলতে পারব না। কেউ এখানে আসেননি যে নতুন কিছু বলব। অনেক জায়গায় লড়াই হচ্ছে। অনেক জায়গা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তবে আশার কথা, সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
আফগানিস্তানের এখনকার অবস্থার কথা জেরে স্বাভাবিক ভাবে ব্যথিত তিনি। বলেন, কোনও দেশে গুন্ডাগিরি, সন্ত্রাস হলে দুঃখ তো হবেই। চিন্তাও রয়েছে। তবে এখন ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। নাগরিকদের নিরাপদে রাখা হয়েছে। গ্রাম-দেহাতে সমস্যা বেশি। সরকার সাহায্য করছে। নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
সেখানে এখন ফসল বিক্রির সময়। তাঁদের পড়েছেন মহা সমস্যায়। ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে অনেককে। সরকার ব্য়বস্থা নেওয়ায় শান্তি তাড়াতাড়ি ফিরবে। আশা তাঁর।
তালিবানরা অনেক মোবাইল টাওয়ার ভেঙে দিয়েছে। ফলে যোগাযোগ আরও মুশকিল হয়ে পড়েছে। এখন একটা সংস্থার সিম কার্ডই চলছে। ফলে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ফেসবুক একমাত্র উপায়। কাউকে ফোন করার উপায় নেই।
আমির খান বলেন, ধরুন বিদেশে কেউ রয়েছেন। আর সেখানে লড়াই শুরু হল। তখন তো উদ্বেগ বাড়বেই। তা কারও আত্মীয় যতই নিরাপদে থাকুন না কেন, চিন্তা তো হবেই।
অনেক ছোটবেলায় এখানে এসেছেন তিনি। আর তারপর এখানেই বেড়ে ওঠা। কলকাতায় হাজার দেড়েক আফগান থাকেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস তাঁদের। ধর্মতলা, বড়বাজার, দমদম, কাশীপুরের মতো এলাকায় থাকেন তাঁরা।
তিনি এখন রয়েছেন বিহারে। দিন কয়েক আগে গিয়েছিলেন অসম। ফের যাবেন অসমে। তারপর ফিরবেন কলকাতায়। বলেন, আমরা তো শান্তি চাই। ঝামেলা নয়। যে কোনও মানুষ শান্তি চাইবেন। পরিবার নিয়ে থাকবে, নিজের কাজ করবে, ব্যবসা করবে। ওপরওয়ালার কাছে দোয়া করব শান্তি ফিরে আসুক। খুব তাড়াতাড়ি এইসব শেষ হয়ে যাক।
মাঝে বেশ শান্তই ছিল আফগানিস্তান (Afghanistan)। তবে গত কয়েকদিনে পরিস্থিতি বদলেছে। শুরু হয়েছে লড়াই। আমির খান বলেন, যুদ্ধ মানেই তো ধ্বংস। সেই দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গরিব মানুষ আরও বরবাদ হয়। ধনীদের তো সমস্যা নেই। তাঁরা অন্য দেশেও চলে যেতে পারবেন। এই দেখে আরও খারাপ লাগে। সেখানে শান্তিতে থাকুন সবাই। ওপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করব।
শান্তি ফিরলে, এই সব ঝামেলা শেষ হলে দেশে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। গোলমাল, ঝামেলা থেকে দূরেই থাকতে চান। সব স্বাভাবিক হলে দেশের মাটিতে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।