প্রাপ্তি বিরাটের হাফসেঞ্চুরি, ঋদ্ধি-অশ্বিনের ব্যাটে আগামীকালের ভাগ্য

কী অসাধারণ ম্যাচটাই না হল! একদিকে পাঁচজন বোলার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দুর্ধর্ষ বোলিং আক্রমণ। আর অন্যদিকে ভারতের তিন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই। ১৮৮ রানে যেখানে ভারতের তিন উইকেট পড়ে গিয়েছিল, সেখানে বলা যেতে পারে যে ভারত কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল। 

কিন্তু, নতুন বল নেওয়ার কিছুক্ষণ আগে বিরাটের রান আউটটাই সব হিসেব বদলে দিল। খুলে গেল অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্যের দরজা। স্টার্ক এবং হ্যাজ়েলউড দুটো উইকেট দ্রুত তুলে নিলেন। 

শেষবেলায় অশ্বিন এবং ঋদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ ২৭ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছেন। যদি আগামীকাল তাঁরা প্রথম ঘণ্টাটা খেলে দিতে পারেন, তাহলে প্রথম ইনিংসে যথেষ্ট ভালো জায়গায় থাকবে ভারত। এই উইকেটটা যথেষ্ট আশ্চর্য্যজনক। উইকেটে বাউন্স আছে। কিন্তু, সেটা খুব দ্রুত নয়। বেশ কয়েকটা বল ব্যাটের কানা লাগলেও ফিল্ডার পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। 

এই উইকেটে ভারতীয় বোলাররা আনন্দ পাবেন। তাঁরা স্টাম্পে বল রাখতে পারবেন। তবে আপাতত স্বস্তিতে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথম দিনের শেষে ভারতের স্কোর ছ'উইকেটে ২৩৩ রান।

প্রথম বলটা দেখার পরেই পৃথ্বীর ব্যাটিং নিয়ে সাবধান বাণী শোনাচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক রিকি পন্টিং। কারণ প্রথম বলেই পৃথ্বীর ব্যাট এবং প্যাডের মধ্যে যে বিস্তর ফাঁক তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, তা দেখার পরই বিপদ সংকেতের আশঙ্কা করেছিলেন রিকি। আর দ্বিতীয় বলেই ঘটল দূর্ঘটনা। ওই ফাঁকের মধ্যে দিয়েই বিদ্যুতের গতিতে ঢুকে গেল মিশেল স্টার্কের বল। চোখের নিমেষে বোল্ড হয়ে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের এই ওপেনার।

আজ অ্যাডিলেডে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে। যেহেতু এই টেস্ট ম্যাচটি দিন-রাতের হচ্ছে, সেকারণেই তা গোলাপি বলে খেলা হচ্ছে। এমনিতে গোলাপি বলে টেস্ট খেলতে খুব একটা অভ্যস্ত নয় ভারত। তবুও যে সাবধানতা অবলম্বন করার দরকার ছিল, সেটা করতে ব্যর্থ হলেন পৃথ্বী শ। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই তিনি বোল্ড আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনাররা ব্যর্থ হওয়ায়, আজ দিনের প্রথম সেশনেই ব্যাট হাতে দেখা যায় বিরাট কোহলিকে। শুরুতে তিনি এই উইকেটে বেশ খানিকটা সময় দেন। তারপর তিনি ধীরে ধীরে নিজের হাত খুলতে শুরু করেন। চেতেশ্বর পূজারার সঙ্গে আজ তিনি ৬৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। কিন্তু চা-পানের বিরতির কিছুটা আগেই ৪৯.৪ ওভারে ফিরে গেলেন চেতেশ্বর পূজারা (৪৩)। নাথান লিয়নের বলে লাবুশেনের হাতে তিনি ক্যাচ তুলে দেন। বল যায় লেগ গালির দিকে। প্রসঙ্গত, আজ পূজারাও নিজের দায়িত্বটা যথেষ্ট ভালোভাবে পালন করেছেন। দ্বিতীয় বলেই পৃথ্বী শ ফিরে যাওয়ার পর তিনি দলের হাল ধরেন।

যাইহোক, পূজারার পরে অজিঙ্কা রাহানের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছেন বিরাট। রাহানের সঙ্গে জুটি বেঁধে ইতিমধ্যেই ১১০ বলে ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়েছেন বিরাট। 

ইতিপূর্বে বিরাট জানিয়েছিলেন যে রাহানের সঙ্গে তাঁর পারষ্পরিক বোঝাপড়টা বেশ ভালো। কিন্তু, সোজা রাস্তায় গাড়ি চলতে চলতে আচমকা ব্রেক কষলে যেমন ঝাঁকুনি খেতে হয়, ভারতীয় ক্রিকেট দলের কাছে বিরাটের উইকেটটাও তেমন ঝাঁকুনির থেকে কম কিছু ছিল না। 

৭৬.৬ ওভারে রান আউট হয়ে ফিরে গেলেন বিরাট কোহলি (৭৪)। ব্যাস, তারপরেই যেন ভারতীয় ইনিংসে ঘটে যায় ছন্দপতন। পরপর দুটো উইকেট তুলে নিলেন স্টার্ক এবং হ্যাজ়েলউড। ৮০.৪ ওভারে মিশেল স্টার্কের বলে LBW আউট হয়ে ফিরে গেলেন রাহানে (৪২)। এরপর ৮৩.২ ওভারে জস হ্যাজ়েলউডের বলে LBW আউট হয়ে ফিরে গেলেন হনুমা বিহারি (১৬)। 

আগামীকাল ঋদ্ধি এবং অশ্বিন ভারতীয় ইনিংসের রথ কতদূর টেনে নিয়ে যেতে পারেন, এখন সেটাই দেখার।