ভারতের ক্রীড়া জগতে নানা ধরনের কেলেঙ্কারি হয়েছে। কখনও খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে উঠেছে ধর্ষণের অভিযোগ তো কখনও গড়াপেটার অভিযোগে কেরিয়ার শেষ হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ড্রাগ নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়েছে ক্রীড়াবিদদের। ঠিক সেরকম ভাবেই ভারতীয় ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দিয়েছিল ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি। মনোজ প্রভাকর, অজয় জাদেজার সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল ভারতের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন মহম্মদ আজাহারউদ্দিনের (Mohammad Azharuddin)। ২০০০ সালের এই ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। নির্বাসনে যেতে হয় জড়িত ক্রিকেটারদের। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)।
কিছুদিন আগেই ভারতীয় ফুটবল সংস্থাকে ব্যান করে দেয় ফিফা (FIFA)। ভারতীয় ফুটবলে তৃতীয় ব্যক্তির হস্তক্ষেপের কথা জানিয়ে এআইএফএফ-কে (AIFF) ব্যান করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা। স্বাধীনতা দিবসের রাতেই ভারতের ফুটবল সংস্থাকে ব্যান করার কথা জানিয়ে দেয় তারা। তবে, দ্রুত নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলায় কয়েকদিনের মধ্যেই সেই ব্যান উঠে যায়। তবে ফিফার ব্যান নিঃসন্দেহে ভারতীয় ফুটবলের ক্ষেত্রে একটা কালো দাগ।
লিয়েন্ডার পেজ (Leander Paes) ও মহেশ ভুপতির (Mahesh Bhupathi) মধ্যে ঝামেলা বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করেছিল ভারতীয় টেনিসে। এ দেশের টেনিসে অন্যতম সেরা দুই তারকাকে নাকি মারামারি করতেও দেখা যায়। ২০০১ সালে গোল্ড ফ্লেক ওপেনে এক পার্টিতে কলার ধরে ঘুসি পাকিয়ে একে অপরের দিকে তেড়ে যান দুই টেনিস তারকা। এরপর আর একসঙ্গে খেলতে দেখা যায়নি লি-হেশ জুটিকে। যদিও বুশান এশিয়ান গেমসে একসঙ্গে কোর্টে ফেরেন দুই তারকা। আবারও তৈরি হয় ম্যাজিক। সোনা জেতেন লি-হেশ।
আইপিএল (IPL) স্পট ফিক্সিং (IPL Spot Fixing) কেলেঙ্কারি আরও একবার ভারতীয় ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দেয়। ভারতীয় দলের তারকা বোলার এস শ্রীশান্ত, অনিকেত চৌহান, অজিত চান্ডিওয়ালা এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন। বুকিদের উদ্দেশ্যে মাঠ থেকে কিছু সংকেত পাঠান এই তিন ক্রিকেটার। অভিযোগ ষাট লক্ষ টাকা এই কাজ করার জন্য নিয়েছিলেন এই তিন ক্রিকেটার। তবে ধরা পড়ার পর কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয় তাদের।
নিষিদ্ধ ড্রাগ ডিলারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অলিম্পিক্সে পদকজয়ী বিজেন্দর সিং-এর (Vijender Singh)। অভিযোগ, নিষিদ্ধ ড্রাগ ব্যবসায়ী অনুপ সিং কাহলনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ভারতীয় বক্সারের। অনুপ ও কুলবিন্দর সিং ৫৪০ গ্রাম হেরোইন সহ পুলিসের হাতে ধরা পড়ার পর তাঁর সঙ্গে বিজেন্দরের নাম জড়িয়ে যায়। বিজেন্দর হরিয়ানা পুলিশের ডিএসপি পদে চাকরিও করতেন।
২০১০ সালে ভারতীয় হকিতে (Indian Women Hockey Team) এক অন্ধকার অধ্যয় নেমে আসে। মহিলা হকি দলের কোচ এমকে কৌশিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। যিনি আবার ১৯৮০ সালে ভারতের সোনাজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। মহিলা দলের এক সদস্য হকি ফেডারেশনের সেক্রেটারি নরেন্দ্র বাত্রাকে মেল করেন। অভিযোগ সামনে আসার পরেই নিজের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান কৌশিক। যদিও আদালতে সেই মামলা এখনও চলছে।
পিঙ্কি প্রামাণিককের (Pinki Pramanik) বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ সামনে এসেছিল। এশিয়ান গেমসে (Asian Games 2022) সোনা জেতা পিঙ্কির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন তাঁর সঙ্গিনী। অভিযোগ ছিল পিঙ্কি আসলে ছেলে। এই অভিযোগের জেরে জেলও খাটতে হয়েছিল দোহা এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ীকে। যদিও বেকসুর খালাস পেয়ে যান বাংলার এই অ্যাথলিট।
ভারতীয় দলের উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহাকে(Wriddhiman Saha) হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। ঋদ্ধি নিজেই সেই অভিযোগ সামনে এনেছিলেন। সাক্ষাৎকার না দেওয়ায় ঋদ্ধির কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন সেই সাংবাদিক। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিসিসিসিআই সেই সাংবাদিককে ব্যান করেছে।
বিতর্ক সামনে এসেছিল হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়েও। ২০১৮ সালে এক জনপ্রিয় চ্যাট শোতে গিয়ে মহিলাদের নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে বসেন ভারতীয় দলের অলরাউন্ডার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেএল রাহুলও। এক বছর নির্বাসনে থাকতে হয়েছিল হার্দিককে। ভাল ছন্দে থাকলেও ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যেতে হয় তাঁকে।
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে এক লজ্জার সাক্ষী থেকেছিল কলকাতা। ক্রিকেটের নন্দনকাননে জ্বলেছিল আগুন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ভারতের হার মেনে নিতে পারেননি কলকাতার জনগণ। আট উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩৫ ওভারে আট উইকেট হারিয়ে ১২০ রান করে ভারতীয় দল। এরপরেই গ্যালারিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। মাঠে বোতল ছুড়তে থাকেন দর্শকরা। খেলা ১৫ মিনিটের বন্ধ হয়ে যায়। এরপর খেলা ফের চালু হলেও গন্ডোগোলের জেরে আবারও বন্ধ হয় ম্যাচ। শ্রীলঙ্কাকে জয়ী ঘোষণা করে দেন আম্পায়ার।