লাউতারো মার্টিনেজের (Lautaro Martinez) গোলে কলম্বিয়াকে (Colombia) হারিয়ে কোপা আমেরিকা (Copa America 2024) চ্যাম্পিয়ন হল আর্জেন্টিনা (Argentina)। ৯০ মিনিটে ম্যাচের ফয়সালা না হওয়ায় তা গড়ায় এক্সট্রা টাইমে। ১১২ মিনিটে লাউতেরোর দারুণ অফ দ্য বল রান ও দারুণ শটই পার্থক্য গড়ে দেয়। এরপর ফিরে আসার সুযোগ পায়নি কলম্বিয়া। এক্সট্রা টাইমে পরিবর্ত হিসেবে নেমে বাজিমাত করেন মার্টিনেজ।
পরপর তিনবার কোনও বড় টুর্নামেন্ট জিতল আর্জেন্টিনা। যা নিঃসন্দেহে বড় নজির। লিওনেল মেসি চোট পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে উঠে গেলেও নতুন প্রজন্মের এই আর্জেন্টিনা যে মেসি নির্ভর নয়, তা আরও একবার বোঝালেন স্কালোনির ছেলেরা।
খেলা শুরুর আগেই অনেকটা সময় নষ্ট হয়। ম্যাচ দেখতে ভিড় করেন টিকিট না কাটা অনেক দর্শক। ব্যারিকেড ভেঙে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়েন ফ্যানরা। পরিস্থিতি সামলাতে নাজেহল হতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। স্টেডিয়ামের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরিতে শুরু হয় ফাইনাল ম্যাচ।
তবে খেলা শুরু হতেই আক্রমণে উঠতে থাকে আর্জেন্টিনা। অ্যাঞ্জেল দি মারিয়ার ক্রস ধরে বক্সের মধ্যে থেকে শট মারেন জুলিয়ান আলভারেস। কিন্তু গোলে রাখতে পারেননি তিনি। এর পরেই কলম্বিয়ার বক্সে ঢুকে পড়েন ট্যাগলিয়াফিকো। তিনিও গোলের মুখ খুলতে পারেননি। এরপর ম্যাচ ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হতে থাকে। ম্যাচে ফিরতে শক্তি প্রদর্শন করতে থাকেন কলম্বিয়ার ফুটবলাররা। ৬ মিনিটে সুযোগ চলে আসে কলম্বিয়ার কাছে। বক্সের বাইরে থেকে শট মারেন কর্ডোবা। তাঁর শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। প্রান্ত ধরে আক্রমণ করছিল কলম্বিয়া। পাশাপাশি মেসি ও দি মারিয়াকে জোনাল মার্কিং-এ রেখেছিল কলম্বিয়া। বল ধরলেই দুই তিন জন ফুটবলার ঘিরে ধরছিলেন।
২০ মিনিটের মাথায় প্রথম বার মেসির চেষ্টা অল্পের জন্য আটকে যায়। বক্সে ঢুকে শট মারেন তিনি। যদিও ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকের যৌথ প্রচেষ্টায় তা আটকে যায়। ৩০ মিনিটের পরে আরও কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে কলম্বিয়া। আর্জেন্টিনার গোলের নীচে থাকা এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে পরাস্ত করা সহজ ছিল না। ৩৬ মিনিটের মাথায় শট মারতে গিয়ে চোট পান মেসি। বেশ কিছু ক্ষণ পড়ে থাকেন তিনি। পরে আবার মাঠে নামলেও একটু খোঁড়াচ্ছিলেন মেসি। কিছুটা গা বাঁচিয়ে খেলার চেষ্টা করছিলেন। কলম্বিয়ার ফুটবলারেরা মাঝে মাঝে ফাউল করছিলেন। ফলে খেলার গতি থমকে যাচ্ছিল। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর কোনও গোল আসেনি। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দু’দল।
৫৮ মিনিটের মাথায় একক দক্ষতায় বক্সে ঢুকে শট মারেন দি মারিয়া। ভাল বাঁচান গোলরক্ষক। যখনই আর্জেন্টিনা আক্রমণে উঠছিল তখনই ফাউল করছিল কলম্বিয়া। মারকুটে ফুটবল খেলছিল তারা। মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেননি আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনি। সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে রেগে যান তিনি। তাঁকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সহকারীরা।
৬৪ মিনিটের মাথায় বড় ধাক্কা খায় আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধের চোট সামলে দ্বিতীয়ার্ধে নামলেও ভাল দেখাচ্ছিল না তাঁকে। একটি স্প্রিন্ট টানতে গিয়ে নিজেই পড়ে যান তিনি। বোঝা যাচ্ছিল, হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট লেগেছে। কোনও ভাবেই আর খেলা চালাতে পারেননি তিনি। মাঠ ছাড়েন মেসি। বেঞ্চে বসে নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি। প্রথমে এক পায়ের জুতো ছুড়ে ফেলেন। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন মেসি।
১১২ মিনিটের মাথায় লো সেলসোর পাস ধরে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে গোল করেন লাউতারো। তার পরে সোজা ছুটে যান মেসির দিকে। গিয়ে জড়িয়ে ধরেন। মেসিকে দেখে মনে হচ্ছিল, ধরে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন তিনি।