এ বারের বিশ্বকাপে সেরা ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন ন’জন। আইসিসি-র তরফে ঘোষণা করে হয়েছে সেই ন’জনের নাম। বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন জানানো হবে কে হবেন এ বারের বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার। কোন কোন ক্রিকেটারকে রাখা হয়েছে সেই তালিকায়?
রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, মহম্মদ শামি, এবং জাসপ্রিত বুমরাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) কর্তৃক চলমান বিশ্বকাপ 2023-এর জন্য প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নয়টি প্রতিযোগীর মধ্যে রয়েছেন৷ ২০২৩ বিশ্বকাপে সমস্ত দিক জুড়ে অসাধারণ প্রদর্শনের সাক্ষী ছিল৷ খেলা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল মুম্বাইতে প্রতিকূলতার মধ্যে তেজ প্রদর্শন করেছিলেন, বিরাট কোহলি মুম্বাইয়ে রেকর্ড-ব্রেকিং সেঞ্চুরি অর্জন করেছিলেন, এবং মহম্মদ শামি লখনউতে আলোর নিচে ৪/২২-এর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদান করেছিলেন। উপরন্তু, এমন অসাধারণ ব্যক্তিরা ছিলেন যারা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ধারাবাহিকভাবে পারদর্শী ছিলেন, রান-স্কোরিং চার্টের শীর্ষে ছিলেন, সেঞ্চুরিতে মুগ্ধ হয়েছেন বা শীর্ষ উইকেট শিকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
বিরাট কোহলি (ভারত)
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ৮৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জিতিয়েছিলেন বিরাট। একের পর এক ম্যাচে রান করেছেন, ম্যাচ জিতিয়েছেন, শতরান করেছেন। প্রায় প্রতি ম্যাচে রান পেয়েছেন বিরাট। সেমিফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন তিনি। ১০ ম্যাচে ৭১১ রান করে ফেলা বিরাট অন্যতম দাবিদার এ বারের বিশ্বকাপে সেরা ক্রিকেটার হওয়ার।
অ্যাডাম জাম্পা (২২ উইকেট)
অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, খুব বেশি ভিন্ন নয় এমন পরিস্থিতিতে, অ্যাডাম জাম্পা আবারও বড় মঞ্চে তার দেশের হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পথে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন জাম্পা। এ বারেও অন্যথা হয়নি। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ের মাঠে উইকেট না পেলেও প্রতিযোগিতা যত এগিয়েছে, তত ভয়ঙ্কর হয়েছেন জাম্পা। ২২টি উইকেট নিয়েছেন এখনও পর্যন্ত। তিনটি ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছেন জাম্পা।
কুইন্টন ডি কক (৫৯৪ রান)
কুইন্টন ডি কক টুর্নামেন্টের বেশির ভাগের জন্য শীর্ষস্থানীয় রান স্কোরারদের মধ্যে ছিলেন, বাঁ-হাতি এই ইভেন্টে ৫৯১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বিশ্বকাপের শুরুতে মনে করা হচ্ছিল ডি’কক হয়তো রানের রেকর্ড ভেঙে দেবেন। একের পর এক ম্যাচে শতরান করছিলেন তিনি। তিনটি শতরান রয়েছে তাঁর এ বারের বিশ্বকাপে। এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। এক দিনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। ৫৯১ রান করা ডি’কককেও সেরা ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে রেখেছে আইসিসি।
মহম্মদ শামি (২৩ উইকেট)
বিশ্বকাপের প্রথম চারটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি শামি। দলেই নেওয়া হয়নি তাঁকে। পরের ছ’ম্যাচে নিয়েছেন ২৩ উইকেট। তিনি ভারতীয় দলে আসার পর থেকে বিপক্ষের চাপ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনটি ম্যাচে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন শামি। কোনও ব্যাটারই তাঁর বিরুদ্ধে খুব স্বচ্ছন্দ হতে পারেননি। সেরা ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বাংলার পেসার।
রাচিন রবীন্দ্র (নিউজ়িল্যান্ড)
স্বপ্নের ফর্মে ছিলেন রাচিন। সেমিফাইনালে তাঁর দল ছিটকে যাওয়ায় ফাইনাল খেলা হবে না। কিন্তু জীবনের প্রথম বিশ্বকাপে ৫৭৮ রান করেছেন রাচিন। নিয়েছেন পাঁচটি উইকেট। কিউই দলে কেন উইলিয়ামসনের অভাব ঢেকে দিয়েছিলেন রাচিন। তাঁর ব্যাট ঝড় তুলেছিল এ বারের বিশ্বকাপে। সেরা ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন তিনি।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া)
পুরো বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ভাবে রান না পেলেও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একা ২০১ রান করে দলকে জেতানোর ইনিংস সেরা ক্রিকেটারের তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে তাঁকে। ২৯২ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল আফগানিস্তান। ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে দলকে একা জিতিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। তাঁর ইনিংস এক দিনের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা বলে মনে করা হচ্ছে। ১২৮ বলে করা ২০১ রানের ইনিংস খেলতে গিয়ে পায়ে টান লাগে ম্যাক্সওয়েলের। কিন্তু তিনি মাঠ ছাড়েননি। দলকে জিতিয়ে তবে ছেড়েছিলেন।
রোহিত শর্মা (ভারত)
ভারত অধিনায়ক হয়তো রানের বিচারে অনেকের থেকে পিছিয়ে রয়েছেন। কিন্তু প্রতি ম্যাচে তাঁর ঝোড়ো ইনিংস ভারতকে বড় রান তোলার ভিত গড়ে দিচ্ছে। সেটার উপর দাঁড়িয়ে রান করছেন বিরাট, শ্রেয়স, রাহুলেরা। অধিনায়ক রোহিত ৫৫০ রান করেছেন ১০টি ম্যাচে। রয়েছে শতরানও। দ্রুত রান তুলে বিপক্ষকে চাপে ফেলে দেওয়া রোহিতও রয়েছেন সেরা ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে।
যশপ্রীত বুমরা (ভারত)
শুধু শামি নন, ভারতের আরও এক পেসার রয়েছেন বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে। শুরুতেই উইকেট তুলে নিচ্ছেন তিনি। বিপক্ষকে অনেক ম্যাচেই ধাক্কা দিচ্ছেন শুরুতে। যা কাজটা সহজ করে দিচ্ছে বাকি বোলারদের জন্য। এখনও পর্যন্ত ১৮টি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
ড্যারিল মিচেল (নিউ জ়িল্যান্ড)
এ বারের বিশ্বকাপে ৫৫২ রান করেছেন কিউই ক্রিকেটার। রাচিন, উইলিয়ামসনদের মতো তাঁকে নিয়ে হয়তো বেশি মাতামাতি হয়নি, কিন্তু নিজের কাজটা করে গিয়েছেন মিচেল। বড় রান তোলা হোক বা রান তাড়া করা, তিনি ছিলেন নিউ জ়িল্যান্ড দলের বড় ভরসা। ভারতের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে হেরে গেলেও ১৩৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মিচেল। তাঁর জন্যই লড়াইয়ে ছিল কিউইরা।