ইডেনে আইপিএল (IPL 2023) ম্যাচে টিকিটের হাহাকার! কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders) বনাম চেন্নাই সুপার কিংস (Chennai Super Kings) ম্যাচ ঘিরে টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। কিন্তু ম্যাচের আগে অনেক ক্রিকেটপ্রেমীই টিকিট পাচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে এও দেখা যাচ্ছে যে, ন্যায্য দামের থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে টিকিট। যা দাম, তার চেয়ে দ্বিগুণ, তিন গুণ এমনকী চার গুণ দামেও টিকিট বিক্রি হচ্ছে আইপিএল-র ম্যাচের। কেন এইরকম পরিস্থিতি?
IPL ম্যাচে টিকিটের দাম আসলে কত?
করোনা (Covid-19) আবহ কাটিয়ে আইপিএল আবার ফিরেছে তার পুরনো ছন্দে। এই মেগা টি-২০ ক্রিকেট লিগ, (T-20 Cricket League) এবার গোটা দেশে হোম-অ্যাওয়ে ফরম্যাটেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্বভাবতই, ক্রিকেটপ্রেমী এবং সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনাও তুঙ্গে। মাঠে বসে নিজের প্রিয় দলের খেলা দেখা কিংবা পছন্দের আইকনকে সামনে থেকে চাক্ষুষ করার সুযোগ কেই বা হারাতে চায়। কিন্তু গোল বাঁধছে টিকিট কাটতে গিয়েই। এমনিতে টিকিটের দাম শুরু হচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে। এছাড়াও রয়েছে ১০০০, ১৫০০, ২৫০০, ৫০০০, ৭৫০০ এবং ৮০০০ টাকার টিকিট। এমনকী ১৯০০০ টাকার টিকিটও রয়েছে। শুধু তাই নয়, কর্পোরেট বক্সে বসে ম্যাচের আমেজ উপভোগ করতে চাইলে খরচ করতে হবে ২৬ হাজার টাকা। মূলত, এই টিকিটগুলি সব অনলাইনেই বুক করতে পারবেন গ্রাহকরা।
আরও পড়ুন: IPL 2023: IPL-এর টিকিট বিক্রি শুরু, কীভাবে কাটবেন-দাম কত?
এক হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, টিকিটের যা দাম তার থেকে অনেক বেশি দামে টিকিট বাইরে বিক্রি হচ্ছে। এক ব্ল্যাকার বলছেন, '১ হাজার টাকা দামের টিকিটের দাম ৪ হাজার টাকা।‘ কোথা থেকে তিনি টিকিট পেয়েছেন, জানতে চাওয়ায় উত্তর এল ‘সেটা পার্সোনাল থাক।‘ সেই ব্ল্যাকার আরও বললেন, ‘সেটা আপনার জানার দরকার নেই। আপনার ইচ্ছে হলে নেবেন, নাহলে নেবেন না। যাদের চাহিদা আছে তারা নেবে।' ক্রিকেটপ্রেমীরা টিকিট কেটে, মাঠে বসে খেলা দেখতে চাইছেন। কিন্তু এদিকে চলছে ব্যাপক কালোবাজারি।
CAB রেজিস্টার্ড ক্রিকেটাররাও টিকিট পাচ্ছেন না
অন্যদিকে বাংলা দলের হয়ে খেলা রঞ্জি (Ranji Trophy) ক্রিকেটার অর্ণব নন্দী bangla.aajtak.in-কে জানিয়েছেন, 'বিভিন্ন জেলায় সিএবি (Cricket Association Of Bengal) রেজিস্টার্ড ক্রিকেটারদের টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। জেলার তরফ থেকে যিনি দায়িত্বে আছেন, তাঁর কাছে টিকিট চাইলে এটাই শুনতে হয় যে টিকিট নেই। ক্রিকেটাররা ঘাম রক্ত ঝরিয়ে মাঠে খেলছে, তাই এই টিকিট আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু সেই প্রাপ্য টিকিটই আমরা পাচ্ছি না।'
আরও পড়ুন: IPL 2023: IPL-এ দর্শকদের জন্য কড়া নির্দেশিকা, কী কী নিষিদ্ধ স্টেডিয়ামে?
টিকিটের কালোবাজারি নিয়ে কী বলছে CAB?
সিএবি (CAB) সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের (Snehasish Ganguly) bangla.aajtak.in-কে বললেন, 'সিএবি কেকেআর-এর (KKR) থেকে সমস্ত ব্লক মিলিয়ে, স্টেডিয়ামের মোট আসন সংখ্যার ১৫ শতাংশ টিকিট পায়। সমস্ত কমপ্লিমেন্টারি টিকিট সিএবি অ্যাফিলিয়েটেড ইউনিট, আমাদের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার, বাংলার ক্রিকেটার এবং জেলার সমস্ত ক্রিকেটারদের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউট করা হয়। সিএবি-র প্রাক্তন অফিসকর্মী, বর্তমান অফিসকর্মী ছাড়াও রয়েছে ১২১টি অ্যাফিলিয়েটেড ইউনিট। এই ১২১টি অ্যাফিলিয়েটেড ইউনিটের মধ্যে রয়েছে জেলা এবং ইউনিভার্সিটিও। শুধু তাই নয়, সিএবি-এর স্টাফ এবং সাম্মানিক সদস্যদের সবাইকে কমপ্লিমেন্টারি টিকিট দেওয়া হয়। কেকেআর-এর থেকে পাওয়া এই সমস্ত কমপ্লিমেন্টারি টিকিট ডিস্ট্রিবিউট করে সিএবি। কিন্তু এত কম টিকিটে সবটা কভার করা যায় না। কারণ, সিএবি-র অন্তর্গত অনেক ক্লাবও রয়েছে। সেই কমপ্লিমেন্টারি টিকিটের বাইরেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ করা হয়। যাতে সিএবি সদস্যরা সেই টিকিট কিনতেও পারেন। সেক্ষেত্রেও, সঠিক নিয়ম মেনেই টিকিট কাটতে হয় মেম্বারদের। সিএবি-র সমস্ত অ্যাফিলিয়েটেড ইউনিট এবং জেলা, কলকাতা নাইট রাইডার্স কর্তৃপক্ষের থেকে সেই টিকিট সরাসরি কিনতে পারে। যেকোনও আইপিএল ম্যাচে, সিএবি-র ক্ষেত্রে টিকিট বরাদ্দের চেহারাটা এটাই।'
টিকিটের কালোবাজারি রোখা সিএবি-র দায়িত্ব নয়
CAB সভাপতির আরও বক্তব্য, 'গোটা ইডেনে একটিমাত্র কর্পোরেট বক্স সিএবি পায়, সেটি হল প্রেসিডেন্ট বক্স। এছাড়াও, দুটি ক্লাব হাউস কেবিন পায়। এবার গোটা স্টেডিয়ামের বাকি টিকিট কেকেআর, অনলাইন এবং কাউন্টার থেকে বিক্রি করে। সেই টিকিটগুলি বাইরে চড়া দামে বিক্রি হলে, সেই দায়িত্ব সিএবি-র নয়। আমি চাই এই বিষয়ট সবাই জানুক, যাতে কারও মনে কোনও সংশয় না থাকে। এখন অনলাইনের যুগ, বেশিরভাগ টিকিটই অনলাইনে বিক্রি হয়। আমরা ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা একদিনের ম্যাচ আয়োজনের ক্ষেত্রেও, বেশিরভাগ টিকিট অনলাইনেই বিক্রি করেছিলাম। ফলে যারা আইপিএলের টিকিট কাটতে চান, তাদের অনলাইনেই কাটতে হবে।'
অন্যদিকে সিএবি সেক্রেটারি নরেশ ওঝা (Naresh Ojha) bangla.aajtak.in-কে বললেন, 'স্টেডিয়ামের মোট আসন সংখ্যার ১৫ শতাংশ টিকিট পায় সিএবি। যাদের যাদের টিকিট অ্যাসাইন করা আছে, সেই টিকিট ডিস্ট্রিবিউশনের পুরো বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের সভাপতি ওয়াকিবহাল থাকেন। একটা ব্যাকআপ টিম রয়েছে, যারা হিসেব রাখে। কাদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে এবং কটি টিকিট দেওয়া হচ্ছে। গত ৭৫ বছর ধরে যে পদ্ধতি চলে আসছে, আমরা সেটাই ধরে রেখেছি। আমরা সমস্ত টিকিট নিয়ম মেনে, স্বচ্ছভাবে এবং অফিসিয়ালি ইস্যু করে থাকি।'
প্রতিবেদক: শুভঙ্কর দাস