মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে ফের ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরতেই জল্পনা শুরু হয়েছে, দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত প্রতিরক্ষা চুক্তি তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ণ হতে চলেছে। ট্রাম্পের অতীতের দিকে তাকালে আশাবাদী হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এর আগে ভারতের সঙ্গে একাধিক বড় চুক্তি করেছেন ট্রাম্প। তাঁর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সখ্যতাও রয়েছে।
ভারতের দরকার ১১৪ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। সে দিকে নজর আমেরিকার। এক্ষেত্রে দৌড়ে শামিল রাশিয়া এবং ফ্রান্সও। রাশিয়ার Su-35 এবং MiG-35 যুদ্ধবিমান, ফ্রান্সের রাফালে, আমেরিকার F-21 এবং F/A-18, সুইডেনের গ্রিপেন এবং ইউরোফাইটার টাইফুন রয়েছে। নিজেদের যুদ্ধবিমান বেচতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এই চুক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি। তবে সমস্ত আন্তর্জাতিকস্তরের যুদ্ধবিমান নির্মাতারাই এই চুক্তিটি করতে আগ্রহী। আমেরিকা চাইছে, F-21 ফাইটিং ফ্যালকন কিনুক ভারত। এটি অত্যাধুনিক F-16 যুদ্ধবিমানেরটি উন্নত সংস্করণ। ট্রাম্প সরকারে ফেরার এই চুক্তিটি হতে পারে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
তেজস ফাইটারের জন্য ইঞ্জিনের চুক্তি
ভারতের নিজস্ব যুদ্ধবিমান তেজস মার্ক 1A-এর জন্য আমেরিকার থেকে ৯৯টি F404 ইঞ্জিন কেনার চুক্তি হয়েছিল ২০২১ সালে। জেনারেল ইলেকট্রিকের সঙ্গে এই চুক্তি করা হয়েছিল। সেই ইঞ্জিন সরবরাহেও বিলম্ব হচ্ছে। যার জেরে তেজসের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এই বিষয়টি ত্বরান্বিত হলে ভারতীয় বায়ুসেনার তেজস যুদ্ধবিমানের বহর বাড়বে।
হান্টার-কিলার ড্রোন এবং পারমাণবিক চুক্তি
অত্যাধুনিক ড্রোনের দরকার ভারতের। আমেরিকান MQ-9B ড্রোনের জন্য ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে নয়াদিল্লির। আসছে ৩১টি ড্রোন। ওই ড্রোনগুলির যন্ত্রাংশ দেবে মার্কিন সংস্থা। সেগুলি জুড়ে ড্রোন তৈরি হবে ভারতে। ড্রোন নির্মাতা সংস্থা জেনারেল অ্যাটমিকস ভারতে একটি কারখানাও খুলবে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় এই চুক্তিও দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরমাণু শক্তি নিয়ে একটি চুক্তি করার কথাও বলেছিলেন। ভারতে ছোট মডিউলার নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর তৈরি করতে চায় আমেরিকা। এই চুক্তি হলে জ্বালানির যোগান বাড়বে।
GE F414 ইঞ্জিন তৈরির জন্য জিই অ্যারোস্পেস এবং হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তিও হতে পারে। এতে ভবিষ্যতে তেজস মার্ক ২ যুদ্ধবিমানের সংখ্যা আরও বাড়ানো যাবে। এই চুক্তি হলে নতুন ধরনের উদ্যোগ হবে। এর মধ্যে প্রযুক্তি স্থানান্তরও রয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আমেরিকান অস্ত্র ঢুকছে ২০০০ সাল থেকে। যেমন- ২৮টি অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টার, ১৩৫৪টি এজিএম-১১৪টি হেলফায়ার অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল, স্টিংগার পোর্টেবল সারফেস টু এয়ার মিসাইল, ১৫টি চিনুক হেভি লিফট হেলিকপ্টার, ১৩টি সি-১৩০ সুপার হারকিউলিস বিমান, ১১টি সি-১৭ গ্লোবমাস্টার ইত্যাদি। ভারতীয় নৌবাহিনীর ২৪টি রোমিও হেলিকপ্টার, ১২টি P-8I বিমান, অ্যান্টি-সাবমেরিন টর্পেডো, হারপুন অ্যান্টি-শিপ মিসাইল এবং নেভাল গ্যাস টারবাইনগুলিও আমেরিকা থেকে এসেছে।
ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক কেমন ছিল আগের ট্রাম্প সরকারের আমলে? পাকিস্তানকে সীমার মধ্যে রাখতে সাহায্য করেছিল আমেরিকা। পাকিস্তানের সঙ্গে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি বাতিল করেছিলেন ট্রাম্প। আবার রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত যখন S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিনছে, তখন প্রতিবাদ করেছিল ট্রাম্প সরকার।