হার্লে ডেভিডসন এবং রয়্যাল এনফিল্ড। ভারতে জোর টক্কর শুরু হয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ব্র্যান্ডের। দুটি ব্র্যান্ডের ইতিহাসই ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো। রয়্যাল এনফিল্ড রাজকীয় লুক এবং শক্তিশালী এক্সজস্ট নোটের (সাইলেন্সার সাউন্ড) বাইকপ্রেমীদের হৃদয়ে রাজত্ব করে। হার্লে ডেভিডসনের শক্তিশালী ইঞ্জিন এবং অসাধারণ চেহারার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ভারতীয় বাজারে এখনও পর্যন্ত রয়্যাল এনফিল্ডের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে একাধিক বাইক সংস্থা। তবে এই প্রথমবার কড়া প্রতিযোগিতায় ফেলল হার্লে।
Hero MotoCorp এবং Harley-Davidson-এর যৌথ উদ্যোগে ভারতীয় বাজারে এসেছে Harley Davidson X440। বাইকের দাম ২.২৯ লাখ টাকা। প্রাথমিক মূল্যে লঞ্চ করা হয়েছে। দামি মডেলের জন্য ২.৬৯ লাখ টাকা (এক্স-শোরুম) পর্যন্ত দিতে হবে। ফলে একদম নাগালের মধ্যে চলে এসেছে বিশ্বখ্যাত বাইক ব্র্যান্ড হার্লে। সে কারণে Royal Enfield Classic 350-এর সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে তারা।
বাইকপ্রেমীদের প্রশ্ন এই দুটি বাইকের মধ্যে কোনটি ভালো হবে? ইঞ্জিন, শক্তি ও অন্যান্য সুবিধা-অসুবিধায় হার্লে ও এনফিল্ডের মধ্যে কে এগিয়ে কে পিছিয়ে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
লুক এবং ডিজাইন- প্রথমে হার্লে ডেভিডসনের চেহারা এবং ডিজাইন সম্পর্কে কথা বলা যাক। বাইকটির স্টাইলিংয়ের কাজ করেছে হার্লে-ডেভিডসন। ইঞ্জিনিয়ারিং, টেস্টিং এবং ডেভলপ করেছে Hero MotoCorp। হার্লে-ডেভিডসন X440-কে বেশ শক্তপোক্ত লুক দেওয়া হয়েছে। ডিজাইনে রয়েছে নিও-রেট্রোর ছোঁয়া। এই ডিজাইনটি মূলত XR1200-র থেকে অনুপ্রাণিত। যেমন ফুয়েল ট্যাঙ্ক, স্লিক সাইড প্যানেল ইত্যাদি। এই বাইকটিতে সংস্থা মিড-সেট ফুটপেগ এবং একটি ফ্ল্যাট হ্যান্ডেলবার দিয়েছে। বাইকের লুক বেশ স্পোর্টি।
অন্যদিকে, রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০ রেট্রো ডিজাইনের। যা বাইকটিকে ভিড় থেকে আলাদা করে তুলেছে। বাইকটির এই লুকটি বহু বছরের পুরনো। তবে রয়্যাল এনফিল্ডের বেশিরভাগ বাইকই পুরনো লুকের। বৃত্তাকার হেডল্যাম্প, টিয়ারড্রপ-আকৃতির জ্বালানি ট্যাঙ্ক, ত্রিভুজাকার সাইড প্যানেল রয়েছে বাইকে। যা দুর্দান্ত লুক গিয়েছে ক্লাসিক ৩৫০-কে।
পাওয়ার এবং পারফরম্যান্স- Harley-Davidson X440-তে একটি নতুন ৪৪০ সিসি ক্ষমতার একক-সিলিন্ডার ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে। যা ২৭hp শক্তি এবং ৩৮Nm টর্ক জেনারেট করে। ৬-স্পিড ট্রান্সমিশনের সঙ্গে জোড়া হয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড স্লিপার ক্লাচও রয়েছে।
অন্যদিকে, Royal Enfield-এ ৩৪৯সিসির একটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার এয়ার-কুলড ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে। যা ২০hp শক্তি এবং ২৭Nm টর্ক জেনারেট করে। এই ইঞ্জিনটি একটি ৫ স্পিড গিয়ারবক্স দিয়ে সাজানো। শক্তির পরিপ্রেক্ষিতে হার্লে এগিয়ে রয়েছে। কারণ এর ইঞ্জিন বড়।
টায়ার এবং সাসপেনশন- X440-এ ৪৩mm ইনভার্টেড ফর্ক এবং প্রিলোড-অ্যাডজাস্টেবল গ্যাস-চার্জড টুইন সাসপেনশন রয়েছে। উপরন্তু, X440 উভয় প্রান্তে ByBre ডিস্ক রয়েছে। যার সঙ্গে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ডুয়েল চ্যানেল অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS)। বাইকে এমআরএফ জ্যাপার হাইক টায়ার রয়েছে। যা ১৮-/১৭-ইঞ্চির।
Royal Enfield Classic 350-এ রয়েছে একটি টেলিস্কোপিক ফর্ক। ৬ স্টেপ প্রিলোড-অ্যাডজাস্টেবল ডুয়াল শক অ্যাবজার্ভার সাসপেনশন দেওয়া হয়েছে। ব্রেকের জন্য বাইকের সামনের দিকে ৩০০ মিমি ডিস্ক এবং পিছনে ২৭০ মিমি ডিস্ক (বা ভেরিয়েন্টের উপর নির্ভর করে ১৫০ মিমি ড্রাম) রয়েছে। এতে এটি ১৯-/১৮-ইঞ্চির স্পোক বা অ্যালয় হুইলের দুটি বিকল্প মেলে।
ফিচার-হার্লের ডিএনএ রয়েছে X440-এ। এরগনোমিক্স সম্পর্কে কথা বলতে গেলে, ফরোয়ার্ড-সেট ফুটপেগ বা সুইপ্ট ব্যাক হ্যান্ডেলবার ছাড়াই মেলে এই বাইক। যা ক্রুজারে দেখতে পান। পরিবর্তে সংস্থা এই বাইকে মিড-সেট ফুটপেগ এবং একটি ফ্ল্যাট হ্যান্ডেলবার দিয়েছে। এই বাইকটির লুক বেশ স্পোর্টি। এই বাইকে ডে-টাইম-রানিং (ডিআরএল) লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। যার গায়ে 'হার্লে-ডেভিডসন' লেখা রয়েছে। এছাড়াও, Harley-Davidson X440-এ রয়েছে TFT কনসোল। যা স্মার্টফোনের সঙ্গে সংযোগ করে। এর পাশাপাশি একটি বেসিক রিডআউট দেওয়া হয়েছে। যা অপারেটিং টার্ন-বাই-টার্ন নেভিগেশন, মিউজিক কন্ট্রোল এবং কল/মেসেজ অ্যালার্ট দেয়।
ক্লাসিক ৩৫০-তে একটি স্পিডোমিটার-সহ অ্যানালগ কনসোল রয়েছে। সেই সঙ্গে ট্রিপমিটার, ফুয়েল গেজ এবং সার্ভিস রিমাইন্ডার নিয়ে একটি ডিজিটাল ইনসেট দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে স্মার্টফোন সংযোগ এবং টার্ন-বাই-টার্ন নেভিগেশন-সহ একটি অতিরিক্ত ট্রিপার নেভিগেশন। এজন্য গ্রাহকদের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে।
Harley-Davidson X440 মোট তিনটি ভেরিয়েন্ট রয়েছে। এর দাম ২,২৯,০০০ টাকা থেকে শুরু। যা Royal Enfield Classic 350-এর বেস ভেরিয়েন্টের তুলনায় প্রায় ৩৭,০০০ টাকা বেশি। Classic 350-এর বেস মডেলের দাম ১,৯৩,০৮০ টাকা থেকে শুরু। যদিও হার্লে ডেভিডসনের দাম ক্লাসিকের থেকে বেশি। কিন্তু এই বাইকে সুযোগ-সুবিধা বেশি। তাছাড়া সামান্য বেশি টাকা দিয়ে হার্লে চড়ার শখও তরুণদের আকৃষ্ট করবে।
হার্লের তিন ভেরিয়েন্টের দাম
X440 Denim- ২.২৯ লাখ
X440 Vivid- ২.৪৯ লাখ
X440 S- ২.৬৯ লাখ