মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী স্যাটেলাইট লঞ্চ করতে চলেছে ইসরো। স্যাটেলাইটের নাম NISAR। আগামী বছরের শুরুতেই এর উৎক্ষেপণ করা হবে। তবে ইসরো একা নয়, মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সঙ্গে যৌথভাবে এই স্যাটেলাইট তৈরি করা হয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী বলা হচ্ছে কেন? কারণ শুধুমাত্র এই একটি স্যাটেলাইট দিয়েই সারা বিশ্বে ঘটতে থাকা যেকোনও ধরনের দুর্যোগের তথ্য মিলবে।
মহাকাশ থেকে এই স্যাটেলাইট ভূমিকম্প, ভূমিধস, বনের দাবানল, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, হারিকেন, বজ্রপাত, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, টেকটোনিক প্লেটের মুভমেন্ট... সবকিছুর ওপর নজর রাখবে। কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটার আগেই এটি আপনাকে সতর্ক করে দেবে।
NISAR একটি অ্যাক্রোনিম। সম্পূর্ণটা হল, NASA-ISRO সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (NISAR)। এটি যে কোনও আসন্ন ভূমিকম্প সম্পর্কে সমগ্র বিশ্বকে সবার প্রথমে তথ্য দেবে বলে দাবি করা হচ্ছে। NISAR সেন্টিমিটার লেভেলে টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধি রেকর্ড করতে পারবে। অর্থাৎ টেকটনিক প্লেট সামান্য় একটু নড়লেও স্যাটেলাইট আগে থেকেই তা ধরে ফেলবে। এর থেকে বিজ্ঞানী আগেভাগেই ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বা পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
নিসার স্যাটেলাইটে একটি বড়সড় মেইন মডিউল থাকবে। এতে অনেক যন্ত্র থাকবে। ট্রান্সপন্ডার, টেলিস্কোপ ও রাডার সিস্টেম থাকবে। এর থেকে একটি আর্মও বেরিয়ে থাকবে। তার উপর একটি সিলিন্ডার ফিট করা। লঞ্চের কয়েক ঘণ্টা পর এই সিলিন্ডার খুলে যাবে। তখন সেটা ডিশ অ্যান্টেনার মতো খুবে যাবে। এই ছাতার মতো অংশটাই একটি সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার।
প্রতি ১২ দিনে পৃথিবীর নতুন রিপোর্ট
NISAR অ্যাপ্লিকেশনের প্রধান ক্যাথলিন জোনস জানান, NISAR ১২ দিনের অন্তর কক্ষপথ পাল্টাবে। এই ১২ দিনের ব্যবধানে পৃথিবীপৃষ্ঠে কী কী পরিবর্তন ঘটছে তা জানা যাবে। কোন দেশে কোন ধরনের আবহাওয়া রয়েছে বা কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে তার পুরোটাই জানা যাবে।
কোথা থেকে লঞ্চ হবে?
GSLV-MK2 রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট লঞ্চ করা হবে। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের দ্বিতীয় লঞ্চ প্যাড থেকে লঞ্চ হওয়ার কথা। রকেট এবং পেলোড ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করা হয়েছে।
NISAR কী করবে?
- এই স্যাটেলাইট পৃথিবীকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচাবে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে খরচবহুল আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট। এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
- টর্নেডো, ঝড়, আগ্নেয়গিরি, ভূমিকম্প, হিমবাহ গলে যাওয়া, সামুদ্রিক ঝড়, দাবানল, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ অনেক দুর্যোগের আগাম সতর্কতা দেবে।
- মহাকাশে পৃথিবীর চারপাশে জমে থাকা আবর্জনা এবং মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা যে কোনও রকমের বিপদের সম্ভাবনাও NISAR আগেভাগে জানিয়ে দেবে।
কীভাবে কাজ করবে?
NISAR-এর L এবং S এই দুই ধরনের ব্যান্ড থাকবে। এস ব্যান্ড ট্রান্সমিটার ভারত তৈরি করেছে। এল ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার তৈরি করেছে নাসা।
১২ দিনে পৃথিবীকে একবার আবর্তন
নিসারের রাডার একবারে ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার পরিষ্কার ছবি তুলতে পারবে। ১২ দিন পর আবার পৃথিবীর একটি অন্য স্থানের ছবি তুলবে। পৃথিবীর চারপাশে একবার ঘুরতে ১২ দিন সময় লাগবে। এই স্যাটেলাইটের মিশনের আয়ু ৫ বছর ধরা হচ্ছে। তবে পরে অবশ্য এটি আরও এক্সটেন্ড করা যেতে পারে।