আজ ১ ডিসেম্বর, বিশ্ব এইডস দিবস। ভয়াবহ এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বজুড়ে নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে প্রতি বছরই পালিত হয় এই দিনটি।
বিজ্ঞানীরা ১৯৮০ সালে প্রথম এইডসের (AIDS) সম্পর্কে জানতে পারেন। ভারতে ১৯৮৬ সালে প্রথম এইডসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতে এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৩ লক্ষ ৪৯ হাজার।
ভয়ঙ্কর এই রোগ সম্পর্কে জানার পর পেরিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ ৪০ বছর। কিন্তু এখনও বিশ্বের কোনও দেশই এর প্রতিষেধক তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু কেন ৪০ বছর পরেও এইডসের প্রতিষেধক তৈরি করতে পারলেন না বিজ্ঞানীরা? চলুন তেমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দেওয়া যাক...
এই প্রতিষেধক নিয়ে দীর্ঘ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মানব শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে, এমন কোনও প্রতিষেধকই এইডসের (AIDS) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিষেধকই এই রোগের বিরুদ্ধে আগাম সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিবডি তৈরি করে প্রতিষেধক কেবল এই ভাইরাসের সংক্রমণের গতি কমিয়ে দেয়, কিন্তু এটিকে থামাতে পারে না। HIV সংক্রমণের পরে রোগীর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার প্রায় অসম্ভব।
HIV-তে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে কোনও রকম প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে না বলে বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধকের সাহায্যে শরীরে অ্যান্টিবডির সংখ্যা বা শক্তি বৃদ্ধি করতে পারেন না।
HIV এমন ধরনের ভাইরাস যা দীর্ঘদিন কোনও রকম উপসর্গ ছাড়াই আক্রান্তের শরীরে লুকিয়ে থাকতে পারে, বাড়তে থাকে। ফলে ডিএনএ-তে লুকানো ভাইরাস খুঁজে পাওয়া এবং সেটিকে ধ্বংস করা শরীরের অ্যান্টিবডির পক্ষেও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও এই ভাইরাসকে দমন করার ক্ষেত্রে একই রকম সমস্যা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে শরীরে বাসা বাঁধা দুর্বল ভাইরাসকে কাজে লাগিয়ে, তার ডিএনএ-র গঠন বিশ্লেষণ করে প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু HIV-এর ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া কার্যকর হয়নি। তাছাড়া, অধিকাংশ প্রতিষেধক মানুষের শ্বাসযন্ত্র এবং অন্ত্রের মাধ্যমে ক্রিয়াশীল হয়। কিন্তু HIV মানুষের যৌনাঙ্গ ও রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে দ্রুত সংক্রমিত হয়। ফলে একে রোখা বেশ মুশকিল।
যে কোনও প্রতিষেধক তৈরির পর সেটি মানব শরীরে প্রয়োগের আগে কোনও সমতুল্য ডিনএ-গঠনযুক্ত প্রাণীর শরীরে প্রয়োগ করে দেখা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এইডসের (AIDS) প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে এমন কোনও প্রাণীর মডেল নেই, যার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন মানুষের জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে।