
চালক এবং যাত্রী উভয়ই লাভবান হবেনWhat is Bharat Taxi Cab Service: বছরের পর বছর ধরে, ভারতীয় ট্যাক্সি বাজার কয়েকটি বেসরকারি অ্যাপ-ভিত্তিক কোম্পানির দখলে রয়েছে। যাত্রীদের কাছে বিকল্প সীমিত ছিল, এবং চালকদের লাভের মার্জিন আরও কম ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এখন পরিবর্তন হতে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের প্রথম সমবায় ট্যাক্সি পরিষেবা, ভারত ট্যাক্সি (Bharat Taxi) চালু করেছে, যা ওলা এবং উবারের মতো বেসরকারি কোম্পানিগুলিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত।
এই উদ্যোগটি কেন্দ্রীয় সহযোগিতা মন্ত্রক এবং জাতীয় ই-গভর্ন্যান্স বিভাগের (NeGD) যৌথ প্রচেষ্টা। ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের মতে, জাতীয় ই-গভর্ন্যান্স বিভাগ (NeGD) এবং সহকার ট্যাক্সি কোঅপারেটিভ লিমিটেড - ভারত ট্যাক্সি - একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছে।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল চালকদের তাদের আয়ের সম্পূর্ণ মালিকানা প্রদান করা, পাশাপাশি যাত্রীদের নির্ভরযোগ্য এবং সরকার-তদারকি পরিষেবা প্রদান করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে, সরকার যাত্রীদের একটি নির্ভরযোগ্য, স্বচ্ছ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প প্রদান করতে চলেছে। তাহলে, আসুন ভারত ট্যাক্সি পরিষেবাটি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

বেসরকারি ট্যাক্সি পরিষেবাগুলির স্বেচ্ছাচারিতার প্রতি জবাব
গত কয়েক বছর ধরে, অ্যাপ-ভিত্তিক ট্যাক্সি পরিষেবাগুলিতে অভিযোগের বন্যা দেখা গিয়েছে। কখনও গাড়ির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন, কখনও অপ্রত্যাশিত ভাড়া বৃদ্ধি বা বুকিং বাতিলের ঝামেলা। চালকদের দুর্দশারও কোনও উন্নতি হয়নি। চালকদের কোম্পানিগুলিকে তাদের আয়ের প্রায় ২৫% কমিশন হিসাবে দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভারত ট্যাক্সি এই অন্যায্য ব্যবস্থার অবসানের দিকে প্রথম দৃঢ় পদক্ষেপ।
চালকরা তাদের সমস্ত আয় নিজেদের কাছে রাখবেন
ভারত ট্যাক্সির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল কোনও কমিশন নেওয়া হবে না। চালকদের কেবল একটি সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হবে, যা দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক হতে পারে। এইভাবে, প্রতিটি ট্রিপ থেকে সম্পূর্ণ আয় সরাসরি চালকের পকেটে যাবে। সরকার মনে করে যে এটি চালকদের আর্থিক শক্তি প্রদান করবে এবং লক্ষ লক্ষ চালকের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এই পরিষেবায় যোগদানকারী চালকদের 'সারথি' বলা হবে, 'ড্রাইভার' নয়।
এই যাত্রা দিল্লি থেকে শুরু হবে এবং শীঘ্রই সারা দেশে মিলবে
ভারত ট্যাক্সির পাইলট প্রকল্পটি নভেম্বর মাসে দিল্লিতে শুরু হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে, ৬৫০টি গাড়ি এবং তাদের মালিক-চালক এই পরিষেবার অংশ হবেন। সফল হলে, ডিসেম্বর থেকে এটি দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলিতে সম্প্রসারিত হবে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৫,০০০ চালক (মহিলা সহ) যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
২০৩০ সালের মধ্যে এক লক্ষ চালকের নেটওয়ার্ক
সরকার ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সমস্ত প্রধান মেট্রো শহরে ভারত ট্যাক্সি সেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে, প্ল্যাটফর্মটি জেলা সদর দফতর এবং গ্রামীণ এলাকায় তার পরিধি প্রসারিত করবে, এক লক্ষেরও বেশি চালককে সংযুক্ত করবে। এটি কেবল একটি পরিষেবা নয়, বরং সমবায় ক্ষেত্রে একটি নতুন বিপ্লব হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

'সহকার ট্যাক্সি কোঅপারেটিভ লিমিটেড'-এর দায়িত্ব
ভারত ট্যাক্সি কোনও বেসরকারি কোম্পানি নয়, একটি সমবায় উদ্যোগ হিসেবে কাজ করবে। এটি পরিচালনা করবে সহকার ট্যাক্সি কোঅপারেটিভ লিমিটেড, যা ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং যার প্রাথমিক মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী গভর্নিং কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করছেন আমুলের এমডি জয়েন মেহতা, এবং এনসিডিসির ডেপুটি এমডি রোহিত গুপ্তা ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সরকার দাবি করছে যে এই মডেলটি চালকদের মালিকানা, স্বচ্ছতা এবং সম্মান প্রদানের দিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে।
স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসের একটি নতুন ট্রান্সপোর্ট মডেল
ভারত ট্যাক্সি কেবল একটি ট্যাক্সি অ্যাপ নয়, বরং চালক এবং যাত্রীদের মধ্যে আস্থার সেতু। সরকারের লক্ষ্য হল এমন একটি পরিবহন বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা যেখানে প্রযুক্তি, সহযোগিতা এবং স্বচ্ছতা একত্রিত হয়ে দেশের রাস্তায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। যদি এই পরীক্ষা সফল হয়, তাহলে ভারত ট্যাক্সি আগামী বছরগুলিতে কেবল ভারতের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য 'সহযোগী গতিশীলতার' একটি রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে।
অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন
স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ এই বছরের মার্চ মাসে লোকসভায় একটি সমবায় ক্যাব পরিষেবা চালু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'ওলা এবং উবারের মতো একটি সমবায় ট্যাক্সি প্ল্যাটফর্ম শীঘ্রই চালু করা হবে।' তিনি আরও বলেন যে এই সমবায় ট্যাক্সি প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রাপ্ত লাভ কোনও ধনী ব্যক্তির কাছে যাবে না, বরং ট্যাক্সি চালকদের কাছে যাবে।