সোনার গয়না কি আদৌ ভাল বিনিয়োগ?Buying Gold Jewellery: সোনা। বিয়ে, অন্নপ্রাশন, পুজো কিংবা বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানে গয়নার উপস্থিতি অবধারিত। অনেকেই সোনা ভাল বিনিয়োগ বলে 'জাস্টিফাই' করেন। কিন্তু সোনার গয়না কি আদৌ ভাল বিনিয়োগ? নাকি তা শুধুই শখ আর সামাজিক রীতির অংশ? অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্তা অসিত মজুমদারের মতে, সোনা কেনা আর সোনার গয়না কেনা; এই দু’য়ের মধ্যে মৌলিক তফাত রয়েছে। অনেকেই সেই তফাত বুঝে উঠতে পারেন না। তাঁর বক্তব্য, গয়না কেনার সময় শুধু সোনার বাজারদর দেখলেই হয় না। সেখানে যুক্ত হয় মেকিং চার্জ, জিএসটি, ক্যারাট অনুযায়ী বিশুদ্ধতার হিসেব। উদাহরণ টেনে অসিতবাবু বলেন, এক লক্ষ টাকার একটি সোনার চেন কিনতে গেলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা শুধু মেকিং চার্জ হিসেবেই দিতে হতে পারে। অর্থাৎ, যে মুহূর্তে গয়না কেনা হচ্ছে, সেই মুহূর্তেই প্রকৃত সোনার দামের থেকে বেশি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগের অঙ্কটা শুরু থেকেই ঘাটতিতে।
সমস্যা এখানেই শেষ নয়। দরকারের সময় সেই গয়না বিক্রি করতে গেলে যে পুরো দাম পাওয়া যাবে, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। অনেক ক্ষেত্রেই গয়নার নকশা বা বয়সের কারণে ক্রেতা কমে যায়।
শহরতলির স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রদীপ দত্তের অভিজ্ঞতাও সেই কথাই বলছে। তাঁর দাবি, সোনায় বিনিয়োগ করতে হলে কয়েন বা বিস্কুটই তুলনায় ভাল। কারণ গয়নার ক্ষেত্রে মজুরি বা মেকিং চার্জ অনেক বেশি। সোনার কাজ অত্যন্ত দক্ষতার বিষয়। ফলে কারিগরদের মজুরি দিতেই হয়। তাই বিক্রির সময় বাড়তি দাম নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
প্রদীপবাবু আরও জানালেন, বহু মানুষ পূর্বপুরুষের আমলের গয়না নিয়ে দোকানে আসেন বড় প্রত্যাশা নিয়ে। ধরুন, ১০ ভরির একটি পুরনো হার। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেল, তার মধ্যে ২০ শতাংশই খাদ। তখন স্বাভাবিকভাবেই যে দাম আশা করেছিলেন, তার অনেকটাই কম হাতে আসে। সেখানেই তৈরি হয় হতাশা।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু আর্থিক অঙ্কের হিসেবেই বিষয়টিকে দেখা ঠিক নয়। গয়নার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আবেগ, স্মৃতি, অনুভূতি। ২০ বছর ধরে পরা একটি হার হঠাৎ বিক্রি করে দেওয়া মানসিকভাবে সহজ নয়। তার উপর বাড়িতে বা গায়ে এত দামী জিনিস রাখা বা পরে বেরোনোও নিরাপদ নয়। তাহলে বিকল্প কী?
এই জায়গাতেই অসিতবাবু গোল্ড বন্ডের কথা তুলে ধরছেন। তাঁর মতে, একান্ত সোনাতেই বিনিয়োগ করতে চাইলে গোল্ড বন্ড ভাল অপশন। সেখানে মেকিং চার্জ নেই, রাখার ঝামেলা নেই। তাই ভবিষ্যতের বিনিয়োগ ভেবে সোনার হার বা আংটি কেনা আদৌ বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
তবে তিনি এটাও মানছেন, ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে তুলনা করলে সোনার গুরুত্ব আলাদা। শখের গাড়ি বা টপ মডেলের স্মার্টফোন কিনলে তার দাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। কিন্তু সোনার ক্ষেত্রে ডেপ্রিশিয়েশন নেই। সেই অর্থে শখের বশে গয়না বা কয়েন কেনা একেবারে খারাপ অভ্যাস বলা যায় না।
সব মিলিয়ে, সোনার গয়না বিনিয়োগের নিরিখে খুব লাভজনক না হলেও, তা যে একেবারেই খারাপ; এমনটা বলছেন না বিশেষজ্ঞরা। সিদ্ধান্তটা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করছে, আপনি সোনাকে কী হিসেবে দেখছেন, বিনিয়োগ? নাকি আবেগ? সেটাই এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।