scorecardresearch
 

স্বাধীনতার আগেই ট্রামের রুট চেনাতে কলকাতায় চালু ছিল ‘কালার কোড’!

ট্রামের বিভিন্ন রুট চিহ্নিত করতে কলকাতায় বিশেষ ‘কালার কোড’ ব্যবস্থা চালু হলে যাত্রীরা সহজেই রঙের সাহায্যে ট্রামের আলাদা আলাদা রুট চিনে নিতে পারবেন ঠিক যেমনটি পেরেছিলেন প্রায় একশো বছর আগেও।

Advertisement
Kolkata Tram Kolkata Tram
হাইলাইটস
  • ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮৭৩ সালে প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হয় কলকাতায়।
  • প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম ছুটেছিল শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত।
  • ১৯০২ সাল থেকে কলকাতায় বিদ্যুৎ চালিত ট্রাম চালু করা হয়।

কলকাতার মানচিত্রের মোটামুটি ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ জুড়ে ট্রামের লাইন পাতা রয়েছে। ট্রামের বিভিন্ন রুট চিহ্নিত করতে কলকাতায় এ বার বিশেষ ‘কালার কোড’ চালু হচ্ছে। ইউরোপের একাধিক দেশের ট্রাম রুটের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে এই ব্যবস্থা কলকাতায় চালু ছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই।

২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮৭৩ সালে প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হয় কলকাতায়। প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম ছুটেছিল শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। শোনা যায়, কলকাতার ট্রাম হল তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জনের মস্তিষ্কপ্রসুত যান ব্যবস্থা। লর্ড কার্জন সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে, স্বল্প ব্যয়ের গণপরিবহণ হিসাবে ট্রাম চালু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতায় ট্রাম চালু হওয়ার ৯ মাসের মধ্যেই ২০ নভেম্বর, ১৮৭৩ সালে ফের বন্ধ করে দেওয়া হয় এই পরিষেবা। এরপর ১ নভেম্বর, ১৮৮০ সালে কলকাতা ট্রামের যাত্রাপথের উদ্বোধন করেন তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের ভাইসরয় লর্ড রিপন, যাঁর নামে শহরের একটা রাস্তার নাম রিপন স্ট্রিট।

Kolkata Tram

১৯০২ সাল থেকে কলকাতায় বিদ্যুৎ চালিত ট্রাম চালু করা হয়। সেই থেকে বিভিন্ন সময় এই শহরে যে সমস্ত ট্রাম চলেছে, ইংরেজি বর্ণমালার ‘A’ থেকে ‘L’ পর্যন্ত তার বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। এখনও এই শহরের ডিপোগুলিতে ব্রিটিশ আমলের ‘K’ এবং স্বাধীনতার পর পর তৈরি হওয়া ‘L’ শ্রেণির ট্রাম রয়েছে, যেগুলির অধিকাংশই অব্যবহৃত।

শহরের পরিবহণ ইতিহাসের অন্যতম সংগ্রাহক শৌভিক মুখোপাধ্যায় জানান, ১৯৫০ সাল পর্যন্ত লন্ডন থেকে ট্রামের কোচ তৈরি করে আনা হতো কলকাতার জন্য। তারপর ক্যালকাটা ট্রাম কর্পোরেশন এর দায়িত্ব নেয়। কিন্তু মজার বিষয় হল, লন্ডন থেকে তৈরি হয়ে আসা ট্রামের কাঠের কোচগুলিতেই ট্রামের বিভিন্ন রুট চিহ্নিত করতে ‘কালার কোড’ বা ‘কালার সিগন্যাল’-এর ব্যবস্থা করা ছিল। 

Advertisement
Kolkata Tram

এখনও পুরনো ট্রাম ডিপোতে ঘুরে দেখলে কাঠের বডির ট্রামের দেখা মিলবে। একটু খেয়াল করলেই ট্রামের একেবারে সামনে, চালকের মাথার উপরে দু’পাশে দু’টো গোল গোল কাচ লাগানো ফোকড় চোখে পড়বে। ওই গোল গোল কাচ লাগানো অংশের ভিতরে রঙিন বাতি লাগিয়ে ‘কালার সিগন্যাল’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলেই।

Kolkata Tram

ভুলে গেলে চলবে না, এখনকার মতো ৮০-৮৫ বছরের পুরনো কলকাতায় পথবাতির (স্ট্রিট লাইট) ব্যবস্থা বা তেজ— কোনওটাই ছিল না। তাই গোটা ট্রাম রং করলেও রাতের অন্ধকারে ওই রং বোঝা মুশকিল। তাই ট্রামের মাথার উপর ইলেক্ট্রিক বাতির রঙের সাহায্যে সে যুগে ‘কালার কোড সিগন্যাল’ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। 

Kolkata Tram

রাজ্য পরিবহণ নিগমের আধিকারিকদের দাবি, ট্রামের বিভিন্ন রুট চিহ্নিত করতে কলকাতায় বিশেষ ‘কালার কোড’ ব্যবস্থা চালু হলে যাত্রীরা সহজেই রঙের সাহায্যে ট্রামের আলাদা আলাদা রুট চিনে নিতে পারবেন ঠিক যেমনটি পেরেছিলেন প্রায় একশো বছর আগেও।


 

Advertisement