বৈদ্যুতিক যানবাহন (EVs) ধীরে ধীরে দেশের রাস্তায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক এই যানবাহনগুলো সাধারণত প্রায় শব্দহীন হওয়ায় অনেক সময় তা পথচারী বা অন্য যান ব্যবহারকারীদের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই সমস্যার সমাধানেই আসছে অ্যাকোস্টিক ভেহিকেল অ্যালার্ট সিস্টেম (AVAS), যা ২০২৬ সাল থেকে ভারতে সব নতুন ইলেকট্রিক যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়িতে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
কী বলছে প্রস্তাব?
সড়ক পরিবহন মন্ত্রক (MoRTH) এক খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে –
১ অক্টোবর, ২০২৬ থেকে নতুন মডেলের সব ইলেকট্রিক যাত্রী ও মালবাহী গাড়িতে AVAS থাকতে হবে।
১ অক্টোবর, ২০২৭ থেকে চলমান মডেলের ক্ষেত্রেও এটি বাধ্যতামূলক হবে।
M ক্যাটাগরির (যাত্রীবাহী গাড়ি) ও N ক্যাটাগরির (মালবাহী গাড়ি, বাস, ট্রাক, ভ্যান) সব EV তে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে। তবে ইলেকট্রিক দুই চাকার, তিন চাকার ও ই-রিকশাকে আপাতত এই নিয়মের বাইরে রাখা হয়েছে।
কেন দরকার এই সিস্টেম?
প্রচলিত পেট্রোল-ডিজেল গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রায় নীরব। বিশেষ করে কম গতিতে চলার সময় এরা কার্যত কোনও শব্দই করে না। ফলে পথচারী, সাইকেল আরোহী বা বাইক চালকরা প্রায়ই হুঁশিয়ার হন না যে, গাড়ি কাছে চলে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ধীর গতিতে চলা ইলেকট্রিক গাড়ি ৫০% বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে।
মার্কিন পরিবহন দপ্তরের রিপোর্ট বলছে, পেট্রোল-ডিজেল গাড়ির তুলনায় EV পথচারীদের জন্য ২০% বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপানে AVAS ইতিমধ্যেই বাধ্যতামূলক। এবার সেই পথেই হাঁটছে ভারত।
AVAS কীভাবে কাজ করে?
AVAS মূলত একটি কৃত্রিম শব্দ উৎপাদনকারী সিস্টেম।
গাড়ি যখন ২০ কিমি/ঘণ্টা গতির নিচে চলে বা বাঁক নেয়, তখন এটি সক্রিয় হয়।
সিস্টেমটি বিশেষ শব্দ তৈরি করে যাতে আশেপাশের মানুষ বুঝতে পারেন, গাড়ি আসছে।
গাড়ি বেশি গতিতে উঠলেই প্রাকৃতিক টায়ারের শব্দ ও বাতাসের কারণে AVAS বন্ধ হয়ে যায়।
ভারতের কিছু গাড়িতে ইতিমধ্যেই ব্যবহার হচ্ছে
দেশের বাজারে আসা কিছু EV মডেলে এই প্রযুক্তি আগে থেকেই রয়েছে। যেমন—
MG Comet
Tata Curve EV
Hyundai Creta Electric
Mahindra XEV 9e ও BE 6
আর কী বদল আসছে?
AVAS-এর পাশাপাশি সরকার আরও একটি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে— টিউবলেস টায়ার যুক্ত গাড়িতে আর আলাদা অতিরিক্ত টায়ার রাখার বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
সব মিলিয়ে, ২০২৬ থেকে ভারতে EV ব্যবহারে আসছে বড় পরিবর্তন। শুধু পরিবেশবান্ধব পরিবহণ নয়, এবার থেকে ইলেকট্রিক গাড়ি হবে আরও নিরাপদও।