গঙ্গার জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ফারাক্কা ব্যারেজের স্লুইস গেটটি প্রতিদিন চার ঘন্টার জন্য বর্তমান স্তরের চেয়ে বেশি উচ্চতায় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার জন্য ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফারাক্কা ব্যারেজে নেভিগেশন লকটি নতুন করে ডিজাইনের জন্য একটি প্রকল্পের উন্মোচন করে যার কাজ বর্তমানে প্রায় শেষের পথে।
ফারাক্কাতে নতুন নেভিগেশন লক লাগানোর কাজ সম্পূর্ণ হলে গঙ্গায় ইলিশের আনাগোনা বেড়ে যাবে অনেকটাই! ফারাক্কার নতুন এই নেভিগেশন লক সক্রিয় হলে আরও মসৃণ ও দ্রুততর করে তুলবে জাহাজের যাতায়াত। এই প্রকল্পের ফলে মাছ বাংলাদেশ থেকে ইলিশ সাঁতরে গঙ্গায় চলে আসবে। ফলে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ পর্যন্ত তাজা সুস্বাদু ইলিশ ধরা পড়বে মৎস্যজীবীদের জালে।
১৯৭৬ সালে ফারাক্কা নেভিগেশন লক তৈরির পরে প্রয়াগরাজ পর্যন্ত ইলিশের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যায়। গঙ্গায় চালু হওয়া ফারাক্কা ব্যারাজ ইলিশের পশ্চিমমুখী চলাচলকে ব্যাহত করেছিল। ফারাক্কাতে নতুন নেভিগেশন লক লাগানোর কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২১ সালের জুন থেকে এটি খোলা হবে। এর ফলে প্রায় চার দশক পরে গঙ্গায় ইলিশ মাছের বংশবৃদ্ধি ঘটবে।
এলএন্ডটি জিওস্ট্রাকচারের হেড এন্ড চিফ এগজিকিউটিভ এস কানাপ্পান বলেন, “আমরা আনন্দিত যে জল মার্গ বিকাশ প্রকল্পের অংশ হিসাবে ফারাক্কায় একটি নতুন নেভিগেশন লক তৈরির ও পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব ভারতের ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (আইডাব্লুএআই) এলএন্ডটি জিও স্ট্রাকচারকে অর্পণ করেছে। প্রকল্প সংস্থাটি গঙ্গায় বাসকারী জীব বৈচিত্রের জগতে অনুকূল পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট।”
সাইটটি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কায়, ফারাক্কা ব্যারেজের ফিডার ক্যানালে অবস্থিত। ফারাক্কার বর্তমান লক গেটটি ১৯৭৮ সাল থেকে সক্রিয়। তবে বর্তমান লক গেটটির অদক্ষতার কারণে আইডাব্লুএআই আধুনিক প্রযুক্তির নতুন লক প্রস্তাব করেছে যাতে থাকবে মিটার গেটস, সিজন গেটস, বাল্ক হেড গেটস এবং রেডিয়াল গেট যা কালভার্টগুলিতে জল ভরে এবং যা একটি কন্ট্রোল রুম থেকে সমস্ত গেটগুলিকে দূরনিয়ন্ত্রিত করা যায়।
কলকাতা থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে ফারাক্কা ব্যারেজে নতুন নেভিগেশনাল লক তৈরির কাজ কলকাতা বন্দরের জন্য আশার নতুন দীগন্ত খুলে দিতে চলেছে। নতুন নেভিগেশনাল লকটি চালু হওয়ার পর জাহাজগুলি দ্রুত নির্ঝঞ্ঝাট যাত্রা করতে পারবে। বর্তমান লকটি জাহাজ চলাচলের সংখ্যা দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে অক্ষম হওয়ায়, লকটি পাস করার জন্য জাহাজগুলির যথেষ্ট সময় লাগে। ১৫০০ থেকে ২০০০ টন ক্ষমতার জাহাজ চালনার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় জল মার্গ বিকাশ প্রকল্প এখানে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রথম ধাপে হলদিয়া থেকে বারাণসী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, এই প্রসারিত অংশে ফেয়ারওয়ে, মাল্টি-মডেল টার্মিনালগুলির উন্নয়ন, রিভার নেভিগেশন সিস্টেমকে শক্তিশালীকরণ, সংরক্ষণ এর কাজ, আধুনিক নদী তথ্য ব্যবস্থা (আরআইএস) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নতুন নেভিগেশনাল লকগুলির কিছু বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে দৈর্ঘ্য ২৫০মিটার, উচ্চতা ২৫.১৫ মিটার, প্রস্থ ১৪.১৪ মিটার এবং গাইড ওয়ালগুলি দৈর্ঘে ৩০১ মিটার এবং প্রস্থে ১৫.১৪ মিটারের।