প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে কলকাতা মেট্রোর তিনটি নতুন করিডোরের উদ্বোধন শহরের গণপরিবহনে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সূচনা করল। হাওড়া, শিয়ালদা, সল্টলেক এবং বিমানবন্দর, এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য এখন আরও দ্রুত ও আধুনিকভাবে যুক্ত হচ্ছে মেট্রোর সঙ্গে। শহরের ব্যস্ত রাস্তায় যানজট এড়িয়ে মেট্রোয় চেপে কয়েক মিনিটেই এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হল।
নতুন তিনটি রুট কীভাবে কাজ করবে?
নতুন পরিষেবা চালুর ফলে এক টিকিটেই যাত্রী পৌঁছে যেতে পারবেন হাওড়া ময়দান থেকে সরাসরি দমদম বিমানবন্দর পর্যন্ত। তবে যাত্রাপথে দু’বার মেট্রো পরিবর্তন করতে হবে।
প্রথম ধাপ: হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড।
দ্বিতীয় ধাপ: এসপ্ল্যানেড থেকে নোয়াপাড়া।
তৃতীয় ধাপ: নোয়াপাড়া থেকে সরাসরি জয় হিন্দ বিমানবন্দর।
প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই বিমানবন্দর মেট্রো রুটটি যাত্রীদের যাত্রাসুবিধাকে অনেকটাই সহজ করে তুলবে। যদিও ট্রেন বদল করতে হবে, তবুও বারবার টিকিট কাটতে হবে না। একই স্মার্টকার্ডে সব রুটে চড়া যাবে।
পরিষেবার বর্তমান সময়সূচি
ব্যস্ত সময়ে ১২ মিনিট অন্তর (সেক্টর ফাইভ–শিয়ালদা ও হাওড়া ময়দান–এসপ্ল্যানেড)। অন্য সময়ে ১৫ মিনিট অন্তর ট্রেন চলবে। ইস্ট–ওয়েস্ট মেট্রো পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে ব্যস্ত সময়ে পরিষেবা নেমে আসবে ৮ মিনিট অন্তর এবং অন্য সময়ে ১০-১৫ মিনিট অন্তর।
নতুন সংযোজনের প্রভাব
এই সম্প্রসারণের ফলে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৯.১৫ লক্ষ যাত্রী বহন ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। যুক্ত হয়েছে প্রায় ৩৬৬টি নতুন পরিষেবা। মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, শহরের ভিড় ও যানজট কমাতে এটি বড় ভূমিকা নেবে।
করিডোরভিত্তিক পরিষেবার খুঁটিনাটি
গ্রিন লাইন: এসপ্ল্যানেড–শিয়ালদা ২.৪৫ কিমি নতুন সংযোগ। আগে রাস্তা দিয়ে যেতে ৪০-৪৫ মিনিট লাগত, এখন সময় লাগবে মাত্র ১১ মিনিট। প্রতিদিন চলবে অন্তত ১৮৬টি ট্রেন।
ইয়েলো লাইন: নোয়াপাড়া–জয় হিন্দ বিমানবন্দর। আগে এসপ্ল্যানেড থেকে বিমানবন্দর পৌঁছতে সময় লাগত দেড় ঘণ্টার বেশি, এখন কমে এসেছে ৩০ মিনিটে।
নতুন স্টেশন: দমদম ক্যান্টনমেন্ট, যশোর রোড, জয় হিন্দ বিমানবন্দর। প্রতিদিন প্রায় ১২০টি ট্রেন চলবে।
অরেঞ্জ লাইন: হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (রুবি)–বেলেঘাটা, দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতাকে সংযুক্ত করছে। সায়েন্স সিটি, হাসপাতাল, স্কুল ও ব্যবসায়িক কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ। প্রতিদিন প্রায় ৬০টি ট্রেন চলবে।
আধুনিক পরিকাঠামো ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য
প্রতিটি নতুন করিডোরে থাকবে এসকেলেটর ও লিফট। আধুনিক ও প্রশস্ত বসার জায়গা। উন্নত শৌচাগার ও দিব্যাঙ্গ-বান্ধব ব্যবস্থা। অত্যাধুনিক যাত্রী তথ্য ব্যবস্থা। বিশেষ করে যশোর রোড ও জয় হিন্দ বিমানবন্দর স্টেশন সম্পূর্ণ ভূগর্ভস্থ।