
কালিম্পং, সিকিম, মিরিক থেকে ডুয়ার্স, সব জায়গার পর্যটনই সাম্প্রতিক ধস ও বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছিল। টানা বৃষ্টির ফলে মিরিক ও আশপাশের এলাকায় একাধিক জায়গায় ধস নেমে পড়ে, দুধিয়ায় ভেঙে যায় সেতু। পাহাড়ের বুক চিরে যাওয়া রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় কয়েকদিনের জন্য। ফলে মিরিকমুখী পর্যটকদের বুকিং বাতিল হয়েছে বিপুল পরিমাণে। স্থানীয় হোটেল মালিকরা জানাচ্ছেন, এখনও বহু বুকিং ক্যান্সেল হচ্ছে, পর্যটকরা আপাতত ওই অঞ্চল এড়িয়ে চলছেন।
কোথায় কোথায় স্বস্তি?
তবে আশার কথা, বুধবার থেকে ধীরে ধীরে খুলে গিয়েছে পাহাড়ের সঙ্গে সমতলের সংযোগকারী প্রধান রাস্তা। সিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং, কালিম্পং, গ্যাংটক, সব রুটেই গাড়ি চলছে। রাস্তায় কিছু জায়গায় হালকা কাদা ও পাথর থাকলেও, যাতায়াত মোটের ওপর স্বাভাবিক। দার্জিলিং শহর, লামাহাটা, তিক্ষা, তাকদা, লেপচাজগৎ, সব জায়গাতেই পর্যটকরা নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কালিম্পং শহরও আপাতত স্বাভাবিক, ডেলো ও লাভা-লোলোগাঁও পর্যন্ত গাড়ি যাচ্ছে।
সিকিমে নামচি, পেলিং ও গ্যাংটক, এই তিনটি রুটেই শুরু হয়েছে নিয়মিত যান চলাচল। উত্তর সিকিমের দিকে যাওয়া এখনও ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রশাসনের পরামর্শ, কিন্তু দক্ষিণ ও পূর্ব সিকিম এখন পুরোপুরি খুলে গেছে। পর্যটকরা তিস্তা নদীর ধারে থেমে ছবি তুলছেন, তবে জলস্রোতের পাশে না যাওয়ার সতর্কতাও দেওয়া হচ্ছে।
ডুয়ার্সের অবস্থা তুলনামূলক ভালো হলেও, কিছু জায়গায় জলমগ্ন রাস্তা এখনও পুরোপুরি শুকোয়নি। লাটাগুড়ি, গরুমারা, মুর্তি ও মালবাজারে এখনও বন্যার ছাপ রয়েছে, কিন্তু সড়ক চলাচল বন্ধ নেই। জঙ্গল সাফারি শুরু হয়েছে সীমিত আকারে। পর্যটন দফতর জানিয়েছে, আবহাওয়া ভালো থাকলে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে পরিস্থিতি।
তবে মিরিক, সুকিয়াপোখরি, দুধিয়া এবং সোনাদা এলাকার কিছু রাস্তায় ধসের ছাপ এখনও গভীর। সেখানে ভারী বৃষ্টিতে ফের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলগুলি আপাতত ভ্রমণ তালিকা থেকে বাদ রাখাই শ্রেয়।
পর্যটন দফতরের পরামর্শ
যাত্রার আগে স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য বা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাস্তার অবস্থা জেনে নেওয়া জরুরি। যেসব জায়গায় এখন যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ, তা হল দার্জিলিং, কালিম্পং, লাভা, লোলেগাঁও, গ্যাংটক, নামচি, পেলিং, লাটাগুড়ি ও গরুমারা।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্য়ান্ড ট্যুরিজমের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানিয়েছেন, কিছু জায়গায় একটু আতঙ্ক থাকলেও বেশিরভাগ জায়গায় ঘোরা সম্ভব। রাস্তা পরিষ্কার, নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন। তবে সাবধানে ঘোরাফেরা করলে বিপদের সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে অ্যাসোসিয়েশন অফ কনজার্ভেশন অব ট্যুরিজমের কর্ণধার রাজ বসু বলেন, মিরিক ও আশপাশের এলাকায় হোমস্টেগুলিতে বুকিং নেই। তবে বাকিগুলি নিরাপদও যেমন রয়েছে, তেমনও লোকজন যাচ্ছেও। বেশিরভাগ জায়গাই খোলা। তবে প্রশাসনিক গাইডলাইন মেনে চললে ঝুঁকি কম।