ক্রিসমাসের আগে বড় উপহার পেতে চলেছেন বাংলার ৫০ লক্ষ মানুষ। ‘বাংলার বাড়ি’ (Banglar Bari) তথা পশ্চিমবঙ্গ আবাস যোজনার (Banlar Awas Yojana) টাকা আজ থেকেই ঢুকতে শুরু করবে উপভোক্তদের অ্যাকাউন্টে। মঙ্গলবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ আবাস যোজনার টাকা দেওয়ার সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বড়দিনের আগেই রাজ্যের ১২ লক্ষ পরিবারের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে বাংলার বাড়ির টাকা। নবান্ন সভাঘর থেকে এদিন যার সূচনা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার শ্চিমবঙ্গ আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার বিকেল থেকেই অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো শুরু হয়ে যাবে। মঙ্গল-বুধবারের মধ্যে বহু উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতে শুরু করে দেবে। নবান্ন সূত্রে খবর, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১২ লক্ষ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে। যাঁদের নাম ফাইনাল লিস্টে রয়েছে, তাঁরা সবাই টাকা পাবেন।
রাজ্যের ১২ লক্ষ পরিবার তথা প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ এর থেকে উপকৃত হবেন। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা খাতে কেন্দ্র ৬০ শতাংশ অর্থ দেয়। রাজ্য দেয় ৪০ শতাংশ। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সরকার যেহেতু আবাস যোজনা খাতে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ২০২২ সাল থেকে বন্ধ করে রেখেছে, তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্থির করেন, এই খাতে ১০০ শতাংশ টাকাই রাজ্য দেবে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পের প্রথম দফায় প্রায় ৬,৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার থেকে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমা পড়বে। প্রাথমিকভাবে নবান্ন থেকে কয়েকজনের হাতে শংসাপত্র তুলে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেজন্য প্রতিটি জেলা থেকে দু'জন উপভোক্তাকে বাছাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপর বাকি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা পড়বে।
নবান্ন সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে ১২ লাখ উপভোক্তাকে টাকা দেওয়া হবে। প্রথম কিস্তিতে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬০,০০০ টাকা জমা পড়বে। আর তারপর বাড়ির কাজ শুরু হলে মিলবে বাকি ৬০,০০০ টাকা। অর্থাৎ দুটি কিস্তি মিলিয়ে প্রত্যেক উপভোক্তা মোট ১.২ লাখ টাকা পাবেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর। এই প্রসঙ্গে, পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জিনেয়েছ, “ মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই আমরা টাকা দেব। আবাসের তালিকায় যোগ্য উপভোক্তাদের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী ও যারা অভিযোগ জানিয়েছিলেন তারাও পাবেন। তারাও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মোট সংখ্যা ১২ লক্ষ হয়েছে।”
কীভাবে এই টাকা মিলবে?
রাজ্যের অর্থ দফতর জানিয়েছে, এই টাকা সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। প্রথম কিস্তিতে দেওয়া হবে ৬০ হাজার টাকা। পরের কিস্তিতে দেওয়া হবে ৪০ হাজার টাকা। আর শেষ কিস্তিতে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ প্রতি পরিবার পিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আবাস যোজনা খাতে রাজ্যকে ৪০ শতাংশ খরচ বহন করতে হলেও, সেই টাকায় তৈরি বাড়ির উপর প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ফলক লাগাতে হয়। এবার যেহেতু রাজ্যই পুরো টাকা দিচ্ছে তাই, প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘বাংলার বাড়ি’। মনে করা হচ্ছে, গড়ে ওঠা বাড়ির উপর ‘বাংলার বাড়ি’ ফলক লাগানো বাধ্যতামূলক করতে পারে নবান্ন।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, আপনারা নিজেদের অধিকারকে সামনে রেখে ভোট দিন। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা দেবে রাজ্য সরকার। এবার সেই টাকা দিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আবাসের টাকা বন্ধ করে রেখেছে বাংলায়। ১০০ দিনের কাজের টাকাও দেয়নি। সেটা দিয়েছে রাজ্য সরকার। এই তালিকার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কিছুদিন আগে ১১ দফা নির্দেশ জারি করেছিল পঞ্চায়েত দফতর। এবার আরও একধাপ এগিয়ে রাজ্য সরকার উপভোক্তাদের সেই টাকা তুলে দিতে চলেছে। বড়দিনের আগেই অ্যাকাউন্টে এই টাকা পেতে পারেন উপভোক্তারা।